শাবল হাতে মাকে মারতে তেড়ে আসছিলেন বাবা। তা দেখে স্থির থাকতে পারেননি বছর বাইশের ছেলে। মাকে বাঁচাতে এগিয়ে যান তিনি। ধস্তাধস্তির সময়ে শাবলের ঘা লাগে বাবা মুকুল বিশ্বাসের (৫২) মাথায়। মৃত্যু হয়েছে তাঁর। পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেছেন ছেলে গোপাল। সোমবার সন্ধ্যায় ঘটনাটি ঘটেছে উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের প্রভাসপল্লিতে। জেলা পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘ঘটনাটি দুর্ভাগ্যজনক। মৃতের ছেলের বিরুদ্ধে অনিচ্ছাকৃত খুনের মামলা দায়ের করা হয়েছে।’’
তদন্তে নেমে পুলিশ জানতে পেরেছে, ঘটনার পরে সন্ধে ৬টা নাগাদ প্রতিবেশীদের ডেকে আনেন গোপালই। তখনও মারা যাননি মুকুলবাবু। তাঁকে নিয়ে যাওয়া হয় ইছাপুর অর্ডিন্যান্স ফ্যাক্টরি হাসপাতালে। সেই খবর পেয়ে কিছু ক্ষণ পরে পুলিশ আসে মুকুলবাবুদের বাড়িতে। তখনই গোপাল পুলিশের কাছে অপরাধ কবুল করেন। রাতে ব্যারাকপুর বিএন বসু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পথে মারা যান মুকুলবাবু। রাতে গ্রেফতার করা হয় গোপালকে। রক্তমাখা শাবলটি উদ্ধার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার ব্যারাকপুর মহকুমা আদালতের বিচারক গোপালকে জেল হাজতে রাখার নির্দেশ দেন।
গোটা ঘটনায় হতচকিত ওই যুবক। নোয়াপাড়া থানায় বসে মঙ্গলবার গোপাল বলেন, ‘‘বাবাকে না থামালে মা মরে যেত। সংসারে টাকা দিত না বাবা। উল্টে মাকে মারধর করত। সোমবার সন্ধে থেকে অশান্তি চলছিল। আমি চুপ করে ছিলাম। কিন্তু বাবা যখন উঠোন থেকে শাবল তুলে মাকে মারতে গেল, আমি আটকাতে যাই। ধস্তাধস্তিতে শাবলের ধারালো দিকটা বাবার মাথায় লেগে গেল। কিন্তু বাবাকে মেরে ফেলতে চাইনি।’’
প্রতিবেশী বিজয় মুখোপাধ্যায়ের কথায়, ‘‘মুকুল ভ্যানরিকশা চালায়। বদরাগী লোক। ওদের বাড়িতে মাঝে মাঝেই অশান্তি হত। দুই ছেলের মধ্যে বড় গোপালই সামান্য রোজগার করে। তাতেই কোনও মতে সংসার চলে। ছোট ছেলে স্কুলে পড়ে। ওদের নিজেদের মধ্যে এই অশান্তি, মারামারি আমাদের গা-সওয়া হয়ে গিয়েছিল। সোমবার যখন গোলমাল চলছে, তখনও কেউ মাথা ঘামায়নি। কিন্তু পরে গোপালই সকলকে ডাকে। পাড়ার ছেলেরাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। ময়না-তদন্ত ও সৎকারের খরচ আমরাই জোগাড় করছি।’’
গোপালের মা শিখাদেবী বলেন, ‘‘ছেলের হাতে আমার স্বামী খুন হয়েছেন ঠিকই। কিন্তু ছেলে আমাকে বাঁচাতেই গিয়েছিল। গোপালই সংসারটা চালায়। ও যদি খুনের দায়ে জেলে যায় তা হলে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে।’’ |