লণ্ডভণ্ড ঘর থেকে এক গৃহবধূর ক্ষতবিক্ষত মৃতদেহ ও গুরুতর জখম এক শিশুর দেহ উদ্ধারকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার চাঞ্চল্য দেখা দেয় উত্তর ২৪ পরগনার জগজ্জলে। এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ পবন গুপ্ত বাড়ি ফিরে দেখেন লণ্ডভণ্ড হয়ে রয়েছে ঘর। ভিতরে পড়ে রয়েছে স্ত্রী অর্চনা (৩২) ও ছেলে হর্ষর ক্ষতবিক্ষত দেহ। দু’জনেরই হাত-পা বাঁধা ছিল। কাছে গিয়ে কিনি দেখেন অর্চনা মারা গিয়েছেন। অজ্ঞান অবস্থায় হর্ষকে ভাটপানা স্টেট জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে গিয়ে ভর্তি করানো হয়। সেখানে বিকেল ৫টা নাগাদ হর্ষ মারা যায়। ঘটনার তদন্তে নেমে পুলিশ স্বামী পবন-সহ তিন আত্মীয়কে আটক করেছে। খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে তদন্তে যান জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার জয় বিশ্বাস, ব্যারাকপুরের এসডিপিও অমিত কুমার সিংহ-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারা। দুষ্কৃতীরা এসে লুঠপাট চালাতে গিয়ে বাধা পেয়ে তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করেছে বলে পবন পুলিশকে জানান। তবে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে এই খুনের ঘটনায় পিছনে ওই মহিলার স্বামীর হাত রয়েছে। ডাকাতির ঘটনাটিও সাজানো বলে মনে হচ্ছে।”
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, জগদ্দলের কাঁকিনাড়ায় মোতিভবন রোড়ের ওই ঘিঞ্জি এলাকায় একটি ঘরে স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন পবন। কাছেই তাঁর একটি রেশন দোকান রয়েছে। অন্যদিনের মতোই এ দিন দুপুর ২টো নাগাদ তিনি বাড়ি ফেরেন। পুলিশকে পবন জানান, বাড়ি ফিরে তিনি দেখেন ঘরের মধ্যে সব জিনিসপত্র ছড়িয়ে ছিটিয়ে পনে রয়েছে। আলমারি খোলা। স্ত্রী ও ছেলে ঘরের মধ্যে পড়ে রয়েছে। স্ত্রী গলায় ধারালো অস্ত্রের দাগ। মাথা থ্যাতলানো। ছেলের মাথাও থ্যাতলানো। কাছে গিয়ে দেখেন স্ত্রী মারা গিয়েছে। অজ্ঞান অবস্থায় ছেলেকে ভাটপাড়া স্টেট জেনরেল হাসপাতালে ভর্তি করেন এবং থানায় খবর দেন। পরে অবশ্য হাসপাতালে মারা যায় ছেলে।
প্রতিবেশীরা জানান, স্ত্রী ও ছেলেকে নিয়ে থাকতেন পবন। কখনও তাঁরা ওই পরিবারে ঝগড়া, বিবাদ শোনেননি। লুঠপাট চালে এসে দুষ্কৃতীরাই তাঁর স্ত্রী ও ছেলেকে খুন করেছে বলে পবন পুলিশকে জানালেও ঘটনার তদন্তে নামার পরে পবনের প্রতি সন্দেহ বেড়েছে পুলিশের। পুলিশের সন্দেহ, পবনরে কথা অনুযায়ী দুষ্কৃতীরাই যদি লুঠপাট চালাতে সে খুন করে তাহলে ভরদুপুরে ওই ঘিঞ্জি এলাকার আশপাশের বাসিন্দারা তা গুণাক্ষরেও টের পেলেন না? তা ছাড়া ঘরের সমস্ত জিনিসপত্র লণ্ডভণ্ড ও আলমারি খোলা থাকার কথা পবন বললেও কোনও জিনিসপত্র খোয়া যাওয়ার অভিযোগ করেননি তিনি।
এ দিন ঘটনাস্থলে যান স্থানীয় বিধায়ক ও ভাটপাড়া পুরসভার চেয়ারম্যান তৃণমূল নেতা অর্জুন সিংহ। তিনি বলেন, “ঘরে ঢুকে দেখেছি যে ভাবে মহিলার মৃতদেহ পনেছিল তাতে শুধুমাত্র যে তাঁকে খুন করাই উদ্দেশ্য ছিল তা পরিষ্কার। কারণ মহিলার হাতের বাঁধন ছিল বেশ আলগা। পুলিশকে বলেছি ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত করে দোষীকে খুঁজে বের করতে।” |