হাবরা-নৈহাটি সড়ক অবরোধ জনতার
তিন ছাত্রীকে কটূক্তি মদ্যপদের, মদের দোকানে ভাঙচুর, আগুন
ছাত্রীদের কটূক্তি করেছিল দুই মদ্যপ যুবক। দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রীকে তারা ধাক্কা মেরে ফেলে দেয় পুকুরে। এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে মঙ্গলবার সকাল থেকে উত্তেজনা ছড়াল অশোকনগরের ভুরকুণ্ডা পঞ্চায়েতের হিজলিয়া গ্রামে। স্থানীয় একটি মদের দোকানে ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয় জনতা। মারধর করা হয় দোকান মালিককে। দমকল-পুলিশ গিয়েও সুবিধা করতে পারেনি। দীর্ঘ ক্ষণ অবরোধ করা হয় হাবরা-নৈহাটি সড়ক।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিন সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ সাইকেলে চড়ে তিন ছাত্রী যাচ্ছিল হিজলিয়া সাহা জালালি বরকতিয়া হাইমাদ্রাসায়। হিজলিয়া গ্রামের রাস্তা দিয়ে টলতে টলতে যাচ্ছিল দুই মদ্যপ যুবক। ছাত্রীদের সঙ্গে অভব্য আচরণ করে বলে অভিযোগ। প্রতিবাদ করেছিল দ্বাদশ শ্রেণির এক ছাত্রী। তাকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেওয়া হয়। চোট পায় মেয়েটি। মাদ্রাসা থেকে কয়েক জন পড়ুয়া, শিক্ষক এসে উদ্ধার করে মেয়ে তিনটিকে। তত ক্ষণে অবশ্য গা ঢাকা দিয়েছে অভিযুক্ত দুই যুবক।
কিছু ক্ষণের মধ্যেই হিজলিয়া, কামারপুকুর, আনাড়বেড়িয়া থেকে হাজার হাজার লোক জড়ো হয় হিজলিয়া মোড়ে।
এই দোকানেই ভাঙচুরের পরে আগুন ধরিয়ে দেয় বাসিন্দারা। ছবি: পার্থসারথি নন্দী।
সেখানে আছে একটি মদের দোকান। এই দোকানের রমরমা কারবারের জেরেই এলাকায় অশান্তি ছড়াচ্ছে বলে দীর্ঘ দিনের অভিযোগ। উত্তেজিত জনতা দোকান ভাঙচুর করে আগুন লাগিয়ে দেয়। দোকান মালিক দেবু দত্তকে মারধর করা হয়। দাউ দাউ করে জ্বলতে থাকে বিশাল দোকান এবং সংলগ্ন মদের গোডাউন। ভস্মীভূত হয় একটি বাইক। অশোকনগর থানার পুলিশ হাজির হলেও সংখ্যায় যথেষ্ট ছিল না। দমকলের গাড়ি এলেও ধারে কাছে ঘেঁষতে দেয়নি বিক্ষোভকারীরা।
ততক্ষণে হিজলিয়া মোড় অবরুদ্ধ হয়ে পড়েছে। বারাসতের এসডিপিও তরুণ হালদারের নেতৃত্বে হাবরা এবং আমডাঙা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছেও প্রাথমিক ভাবে অবরোধ তুলতে পারেনি। বিক্ষোভকারীদের দাবি, দেবু দত্তের মদের দোকানটিই যত নষ্টের গোড়া। এটি বন্ধ করে দিতে হবে। দোকানের লাইসেন্স বাতিল করতে হবে। যে দুই মদ্যপ অভব্য আচরণ করেছে, তাদের গ্রেফতার করতে হবে। আগামী বৃহস্পতিবার দাবিগুলি নিয়ে সব পক্ষ আলোচনায় বসবে বলে পুলিশ জানায়। জেলাশাসকের কাছে দোকানের লাইসেন্স বাতিলের আবেদন করা হবে বলে বিক্ষোভকারীদের আশ্বস্ত করে পুলিশ। বেলা ৩টে নাগাদ অবরোধ ওঠে ঠিকই, কিন্তু নদিয়া ও উত্তর ২৪ পরগনার মধ্যে যোগাযোগ রক্ষাকারী হাবরা-নৈহাটি রোডে তখন বিশাল যানজট। গাড়ি চলাচল স্বাভাবিক হতে সন্ধে হয়ে যায়। রাত পর্যন্ত বহু মানুষ দোকানটি ঘিরে ছিলেন। উত্তর ২৪ পরগনার পুলিশ সুপার চম্পক ভট্টাচার্য বলেন, “গোটা ঘটনাটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত শিক্ষক সফিকুল ইসলামের অভিযোগ, মদ খেয়ে গ্রামের রাস্তায় অনেকে প্রকাশ্যে মাতলামি করে। পড়ুয়ারা মাদ্রাসায় আসতে ভয় পায়। শিক্ষকদেরও অসুবিধা হয়। স্থানীয় পঞ্চায়েতের উপপ্রধান বৃন্দাবন ঘোষ বলেন, “মদের দোকানের কারবারের জেরেই এলাকার সামাজিক পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে।”
মদের দোকানটি অশোকনগর-কল্যাণগড় পুর এলাকায়। বেআইনি বাড়িতে সেটি চলছে বলে দাবি করেছেন অশোকনগরের প্রাক্তন বিধায়ক সিপিএমের সত্যসেবী কর। তৃণমূল পরিচালিত পুরসভার চেয়ারম্যান সমীর দত্ত বলেন, “দোকান তৈরির অনুমতি আমাদের বোর্ড দেয়নি। বিষয়টি খতিয়ে দেখা দেখা হচ্ছে।” দোকানটি তৈরির ব্যাপারে তাঁরা আগেই আপত্তি জানিয়েছিলেন বলে দাবি করেছেন স্থানীয় বিধায়ক তৃণমূলের ধীমান রায়। ২০০৮ সালে গ্রামের লোক দোকান তৈরির কাজ বন্ধ করে দিয়েছিলেন। তবু কী ভাবে দোকান খুলল, তা খতিয়ে দেখা হোক বলে মানুষের দাবি।
দেবু বলেন, “ছাত্রীদের সঙ্গে ওই ঘটনা ঘটেছে সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ। আমার দোকান খুলেছিল সকাল ১১টায়। এখান থেকে মদ কিনে খেয়ে কেউ ওই আচরণ করবে কী করে! কেন আমার দোকানের উপরে হামলা হল বুঝতে পারছি না!”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.