উদ্বোধনের পরে বছর পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত চালু হয়নি বহরমপুরে গঙ্গা পাড়ে কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত পার্ক ও রেঁস্তরা। পর্যটকদের জন্য ওই পার্ক ও রেঁস্তরো তৈরি করেছিল পর্যটন উন্নয়ন নিগম। ২০১০ সালের ১০ ডিসেম্বর তৎকালীন পর্যটনমন্ত্রী মানব মুখোপাধ্যায় উদ্বোধন করেছিলেন।ব্যাস, দাঁড়ি পড়ে গিয়েছিল ওখানেই। উদ্বোধনের পরে এখন পর্যন্ত সেই পার্ক বা রেঁস্তরো সরকারি ভাবে কোনওটাই চালু হয়নি। দিনের পর দিন অরক্ষিত সেই পার্ক থেকে ক্রমাগত খোয়া যাচ্ছে, বেঞ্চ, রেলিং, রেস্টরুমের দরজা-জানলা, আলো। আটকাবে কে? পার্কের প্রহরীরা নিধিরাম সর্দার হয়ে কাতায় কলমে ঘন্টা কয়েক ডিউটি করছেন বটে, কিন্তু সন্ধ্যে নামলেই ওই পার্ক কার্যত স্থানীয় সমাজবিরোধীদের মুক্তাঞ্চল।
পর্যটন উন্নয়ন নিগমের ম্যানেজিং ডিরেক্টর পৃথা সরকার ওই ভবনের কথাই জানেন না। তিনি নির্বিকার গলায় বলছেন, “ওখানে পার্ক আছে বলে শুনেছি। কিন্তু তার জানি না। দেখি, খোঁজ নেব।” তিনি জানান, পার্ক চালানো নিগমের পক্ষে সম্ভব নয়। বেসরকারি কোনও সংস্থা উদ্যোগী হলে তবেই পার্কের আয়ু বাড়বে। নচেৎ নয়। তিনি বলেন, “এই ধরনের পার্ক চালু রাখতে আমরা বেসরকারি হস্তান্তরে আগ্রহী।” তবে নিগম সূত্রে জানা গিয়েছে এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে দিন কয়েক আগে জেলাশাসককে একটা চিঠি পাঠানো হয়েছে। |
পুরসভার ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের ভাগীরথীর পাড়ে ওই পার্কের মধ্যেই রয়েছে জেটি। বাহারি ফুল ও গাছের অভাব নেই। পানীয় জলের ব্যবস্থা, শৌচালয়, ফুড পার্ক, মোটরবাইক ও গাড়ি পার্কিং-এর ব্যবস্থাও রয়েছে। রয়েছে প্রয়োজনীয় আলোর ব্যবস্থাও।
কিন্তু শুরু থেকেই পার্ক-সহ রেঁস্তোরা দেখভালের জন্য বেসরকারি সংস্থার ৪ জন নিরাপত্তারক্ষী রয়েছে। রাতে দুজন আর দিনে ৮ ঘন্টার ব্যবধানে দুজন নিরাপত্তারক্ষী। তাঁদের পক্ষে সুবিশাল পার্ক-সহ রেঁস্তোরা ভবনের সর্বত্র নজরজারি চালানো সম্ভব নয়। তাঁরা জানান, স্থানীয় বাসিন্দারাই দিনেই মদ্যপ অবস্থায় এসে ভাঙচুর চালাচ্ছে। কিছু বলতে গেলেই চড়াও হচ্ছেন। তাঁদের কাপড় শুকানো, গবাদি পশুর চারণ ভুমিও ওই পার্ক!
বহরমপুর থানার আইসি প্রমোদরঞ্জন বর্মণ অবশ্য বলেন, “এখন পর্যন্ত থানায় কেউ কোনও লিখিত অভিযোগ দায়ের করেনি। সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
আনোয়ার শেখ, সঞ্জয় হাজরার মত স্থানীয়দের কথায়, এলাকার এক শ্রেণির লোকের জন্যই পার্কের ওই হাল। বহরমপুরের বিধায়ক কংগ্রেসের মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “অভিভাবকহীন অবস্থায় পড়ে থাকার ফলে যা হওয়ার তাই হচ্ছে। বহরমপুর পুরসভা তো চেয়েছিল ওই পার্ক-সহ রেঁস্তোরা চালু করতে। কিন্তু কেন তা দেওয়া হয়নি, আমার জানা নেই।” |