তিন মন্ত্রীর উপস্থিতিতে মঙ্গলবার দুপুরে ‘গান স্যালুট’ দিয়ে শেষ শ্রদ্ধা জানানো হল নওনেহাল মির্জাকে। সোমবার দুপুরে সূচপুরে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে বিষ্ফোরণে মারা গিয়েছিলেন বীরভুম জেলা গোয়ান্দা বিভাগের ওই অফিসার। রাতেই তাঁর দেহ লালবাগের বাড়িতে নিয়ে আসা হয়েছিলয়। শেষশ্রদ্ধা জানানোর জন্য মঙ্গলবার দুপুরে মুর্শিদাবাদ পুরসভা প্রাঙ্গণে মুক্তমঞ্চে তাঁর মরদেহ রাখা হয়। সেখানেই ওই পুলিশ অফিসারের প্রতি শেষ শ্রদ্ধা জানান পঞ্চায়েতমন্ত্রী চন্দ্রনাথ সিংহ, সমবায় মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফি এবং পূর্ত দফতরের প্রতিমন্ত্রী সুব্রত সাহা। উপস্থিত ছিলেন জেলা পুলিশ সুপার ভরতলাল মিনা-সহ অন্যান্য পুলিশ কর্তারাও। ছিলেন লালবাগ পুরপ্রধান সাধন দাস-ও।
চন্দ্রনাথবাবু বলেন, “নওনেহাল মির্জা অকৃতদার ছিলেন। তাঁর প্রাপ্য ক্ষতিপূরণ বাবদ ১০ লক্ষ টাকা নিকট আত্মীয়দের হাতে তুলে দেওয়া হবে।”
নওনেহাল মির্জারা ১০ ভাই ১ বোন। অকৃতদার নওনেহাল তৃতীয়। তাঁর ছোট ভাই ফুল মির্জার বিয়ে ছিল গত ১৭ অক্টোবর। কিন্তু কাজের চাপে সে দিন বাড়ি আসতে পারেননি তিনি। কর্মস্থল বীরভূম থেকে গত রবিবার কালেই তিনি মুর্শিদাবাদের লালবাগের বাড়িতে পৌঁছন। বাড়িতে পা দেওয়ার আধ ঘন্টার মধ্যেই ফোন আসে। ফলে বিকেলেই ফিরে যেতে হয়। |
ফুল মির্জা বলেন, “দাদা নওনেহাল ছিলেন অভিভাবক। তাই তিনি নিজে বিয়ে না করে অন্য ভাইদের বিয়ে দিয়েছেন। আমার বিয়ের সব ব্যবস্থাই দাদার করা। অথচ ছুটি না পাওয়া বিয়ে ও বৌভাতের অনুষ্ঠানে তিনি থাকতে পারেননি। রবিবার লালবাগের বাড়িতে এসেছিলেন।” তাঁর অভিযোগ, “বোমা নিষ্ক্রিয় করার ব্যাপারে সেজদার কোনও প্রশিক্ষণই ছিল না। তবুও গুরুতর হৃদরোগে আক্রান্ত এক জন পুলিশ অফিসার যিনি মাত্র বছর দেড়েক পর চাকরি থেকে অবসর নেবেন তাঁকে কেন বোমা নিষ্ক্রিয় করায় নিয়োগ করা হয়েছিল?”
সুচপুরে সকালে গিয়ে দেখা যায়, বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য ছোট একটি গাছের নীচে গর্ত কতগুলি বোমা রাখা হয়েছে। আর গাছে বাঁধা রয়েছে ‘কপিকল’। কপিকলের একপ্রান্তে লোহার বল ঝোলানো। ওই গর্ত থেকে প্রায় ৫০ ফুট দূরত্বে দড়ি দিয়ে ওই বল বোমার উপরে ফেলা হচ্ছে। তবে কর্মীদের হাতে ও শরীরে কোনও বিস্ফোরক প্রতিরোধকারী পোশাক নেই। এ ব্যাপারে অবশ্য কর্মীরা কোনও মন্তব্য করতে চাননি। প্রসঙ্গত, রবিবার সুচপুর গ্রামের একটি পুকুরপাড়ে মাটি খুঁড়ে পুলিশ ৮টি ড্রাম ভর্তি প্রায় ৭০০ বোমা এবং আরও একটি ড্রামে বোমার মশলা উদ্ধার করে। ওই সব বোমা নিষ্ক্রিয় করতে সোমবার দুপুর ২টো নাগাদ গ্রামে গিয়েছিলেন সাব ইনস্পেক্টর নওনেহাল মির্জা (৫৯) ও তাঁর দুই সঙ্গী। নিজের হাতে বোমার সুতো খুলে তা নিষ্ক্রিয় করছিলেন নওনেহাল। মুহূর্তের অসতর্কতায় বিস্ফোরণ ঘটে। বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে নওনেহালকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
তবে মঙ্গলবার যে পদ্ধতিতে বোমা নিষ্ক্রিয় করা হল তাতে ঝুঁকি রয়েছে বলে স্বীকার করে নিয়েছেন পুলিশের একাংশ। বোলপুর থানার এক পুলিশ অফিসারের কথায়, “এক বার ওই ভাবে বোমা নিষ্ক্রিয় করতে গিয়ে লোহার বলটি ছিটকে এসেছিল। পাশাপাশি বোমা গর্তে ফেলার সময়েও বিপদের আশঙ্কা থাকে।” বীরভূম জেলা পুলিশ সুপার নিশাত পারভেজ বলেন, “বোমা নিষ্ক্রিয় করতে যে দল এসেছিলেন তাঁরা যে পদ্ধতি সুবিধাজনক বলে মনে করেছেন সেটাই করেছেন। এ ক্ষেত্রে আমার কিছুই বলার নেই।”
|
|