|
|
|
|
সাম্মানিক পাচ্ছেন না, ক্ষুব্ধ লোধা আশ্রমের শিক্ষকেরা |
নিজস্ব সংবাদদাতা • মেদিনীপুর |
লোধা আশ্রমের ছাত্রছাত্রীদের পড়াশোনার মান-উন্নয়নে প্রাইভেট টিউটর নিয়োগ করেছিল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা প্রশাসন। সেই সমস্ত শিক্ষকেরা দীর্ঘ দিন ধরে সাম্মানিক পাচ্ছেন না। অভিযোগ, বার বার প্রশাসনিক মহলে সাম্মানিকের জন্য আবেদন করা হয়েছিল। প্রশাসনের কাছে আশ্বাস ছাড়া আর কিছুই মেলেনি। এই পরিস্থিতিতে হতাশ ওই সব যুবকেরা। এ বার সাম্মানিকের দাবিতে আন্দোলনের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাঁরা।
নয়াগ্রামের তপোবন লোধা-আশ্রমের শিক্ষক সদানন্দ ভুঁইয়া বলেন, “২০১০ সালের নভেম্বর মাস পর্যন্ত সাম্মানিক পেয়েছিলাম। আবার নভেম্বর মাস চলে এল। এখনও এক মাসেরও সাম্মানিক পাইনি।” সাঁকরাইলের কুলটিকরি লোধা-আশ্রমের শিক্ষক পূর্ণেন্দু সাউ বলেন, “অন্যের বাড়িতে কাজ করে সংসার চলে। আমরা ভীষণ গরিব। এই পরিস্থিতিতে সাম্মানিক না পাওয়ায় কী ভাবে দিন কাটছে ভাবুন। তবু পড়িয়ে যাচ্ছি। প্রশাসন যেন আমাদের কথা একটু ভাবেন।” কেন সাম্মানিক দেওয়া হয়নি? জেলা অনগ্রসর শ্রেণিকল্যাণ দফতরের দায়িত্বপ্রাপ্ত আধিকারিক প্রণব ঘোষ এ বিষয়ে কোনও মন্তব্য করতে রাজি হননি। শুধু বলেন, “বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।”
মাওবাদী প্রভাব-বৃদ্ধির জেরে জঙ্গলমহল ঘুম কেড়ে নিয়েছে সরকারের। অনুন্নয়নের ক্ষত সারিয়ে উন্নয়নের বার্তা পৌঁছে দিতে রাজ্য সরকার জঙ্গলমহলের জন্য বিভিন্ন সময়ে নানা পরিকল্পনা ঘোষণা করেছে। তারই মধ্যে পূর্বতন সরকারের একটি পরিকল্পনা ছিল, লোধা-আশ্রমের পড়ুয়াদের মান-উন্নয়ন। সাধারণ ভাবে যেমন পড়াশোনা চলছে তেমনই চলবে, তারই পাশাপাশি স্থানীয় শিক্ষিত বেকারদের দিয়ে প্রাইভেট টিউশনেরও ব্যবস্থা করা হয়। এর জন্য সরকার নির্দিষ্ট ভাবে অবশ্য কোনও অর্থ বরাদ্দ করেনি। প্রশাসন সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, সর্ব-শিক্ষা অভিযানের অর্থ থেকেই প্রাইভেট টিউটরদের সাম্মানিক দেওয়া হবে। দু’ধরনের সাম্মানিকের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়ানোর জন্য মাসে দেড় হাজার টাকা ও তার থেকে উঁচু ক্লাসের ছাত্রছাত্রীদের পড়ানোর জন্য মাসে ২ হাজার টাকা। সেই সাম্মানিকই প্রায় বছরখানেক ধরে বন্ধ।
প্রশাসনের একটি সূত্রের অবশ্য দাবি, এক বছরের জন্যই টিউটরদের নিয়োগ করা হয়েছিল। তাই পরের দিকে আর টাকা দেওয়াও যাচ্ছে না। কিন্তু ওই টিউটরদের প্রশ্ন, “কেউ পড়াতে তো বারণ করেননি। নিয়োগের সময়েই বলা হয়েছিল, যখন প্রয়োজন হবে না তখন জানিয়ে দেওয়া হবে। লিখিত ভাবে পড়ানো বন্ধের নির্দেশ দূরের কথা, মৌখিক নির্দেশও দেওয়া হয়নি।” পশ্চিম মেদিনীপুর লোধা-শবর কল্যাণ সমিতির সম্পাদক বলাই নায়েক বলেন, “টানা ১১ মাস কোনও শিক্ষকই সাম্মানিক পাননি। ফলে বেকার যুবকেরা সমস্যায় পড়ছেন। সাম্মানিক পাওয়ার আশাতেই তাঁরা অন্য কাজে গুরুত্ব না দিয়ে নিয়মিত পড়ানোর কাজ করেছেন। এতে লোধা সম্প্রদায়ের ছাত্রছাত্রীরাও লাভবান হচ্ছে। এখন প্রশাসন শুধুই দেখছি, দেখব করে এড়িয়ে চলছে। তা হতে পারে না।”
এক সরকারি আধিকারিকের স্বীকারোক্তি, “ওই শিক্ষকদের আর যদি পড়ানোর প্রয়োজন না থাকে, সেটা অবশ্যই প্রশাসনের তরফে তাঁদের জানিয়ে দেওয়া উচিত ছিল। না জানানোয় জটিলতা তৈরি হয়েছে।” কী ভাবে জটিলতা কাটবে, তা নিয়ে অবশ্য প্রশাসনিক কর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। |
|
|
|
|
|