|
|
|
|
যুবভারতীর ভারতে হাউটন নেই, আছেনও |
রূপায়ণ ভট্টাচার্য • কলকাতা |
ট্যাক্সিতে বেলভেডেয়ার রোডের হোটেল থেকে লিটল রাসেল স্ট্রিটের হোটেল পৌঁছতে বড় জোর মিনিট সাত।
প্রথমটায় ভারতীয় ক্রিকেট দলের আস্তানা। দ্বিতীয়টায় ভারতীয় ফুটবল দল।
এত কাছাকাছি, তবু কত দূরে!
একই সঙ্গে ইডেনে ভারত, যুবভারতীতে ভারত শেষ কবে দেখেছে কলকাতা?
রম্যরচনার পক্ষে ভাল বিষয়। দুই ভারতে কত মিল, কত অমিল?
মিলইডেনের মতো যুবভারতীও দর্শকদের ডাকছে ‘এসো গো, এসো গো’ বলে। এই স্টেডিয়ামও এত ফাঁকা, বালিশ-বিছানা নিয়ে ভাল ঘুম দিয়ে দেওয়া যায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো মালয়েশিয়ার ফুটবলারদের নাম কেউ জানে না। তাঁদের দেখতে যেতে বয়ে গিয়েছে!
কিন্তু অমিলের জায়গায় পাথর জমতে জমতে পাহাড়।
বেলভেডেয়ার রোডের হোটেলে এক সোনালি প্রজন্ম অস্ত যাওয়ার মুখেও প্রচুর রং। বহু চরিত্র বর্ণময়, ঝকঝকে তরবারি। শহরের জনপ্রিয়তম ক্রিকেটারের অবসরের পরেও।
লিটল রাসেল স্ট্রিটে হোটেলের জাতীয় দলেও শহরের জনপ্রিয়তম ফুটবলার নেই। তাঁর অনুপস্থিতিতে একটা চরিত্র পাবেন না, যাঁকে কাশ্মীর থেকে কুমারিকা চেনে।
টেস্ট দেখতে লোক না আসুক, সি এ বি-র আয়োজন প্রায় নিখুঁত।
ভাইচুং-উত্তর ফুটবলে কলকাতায় জাতীয় দলের প্রথম ম্যাচ নিয়ে, এআইএফএফ এবং আইএফএ লোক হাসাল। গুয়াহাটির মতো ছোট জায়গাও যেখানে ফিফা নিয়ম মেনে সাংবাদিক সম্মেলন করে, কলকাতা সেটাও পারল না। তাদের ব্যর্থতায় মালয়েশিয়ানদের সোমবার বিকেলে ইডেনের সামনের রাস্তায় ৪৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল। আইএফএ প্রশাসন এত অযোগ্য, ম্যাচের টিকিট বিক্রি করতে পারেনি। ভাল বিজ্ঞাপনের ক্যাচলাইন ছিলপাঁচ বছর পরে শহরে জাতীয় দল।
বেলভেডেয়ার রোডের হোটেলে মহেন্দ্র সিংহ ধোনির মতো অধিনায়ক রয়েছেন, বারবার যাঁর জন্য জয়ধ্বনি ওঠে। |
|
ভারতের প্র্যাক্টিসে নবি ও সুনীল। যুবভারতীতে। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস। |
ভারতীয় ফুটবলে সেই নেতাও তো হাতড়াতে হচ্ছে। কাকে অধিনায়ক করবেন বুধবারে মালয়েশিয়ার বিরুদ্ধে? প্রশ্ন করলে স্যাভিও মিডেইরা বললেন, “কাল সকালে ঠিক করব।” সুনীল ছেত্রীই এগিয়ে। কিন্তু বাংলার ছেলে রহিম নবি কি এ বারও উপেক্ষিত থাকবেন? মিলোভানের স্টাইলে ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে নেতৃত্ব ভাগ করে দিয়েছেন আগের কোচ আর্মান্দো কোলাসো। স্যাভিও সেই পথের পথিক। কিন্তু নবির ভাগ্য এত খারাপ, তার চেয়ে জুনিয়ররা নেতৃত্ব পেয়ে যাচ্ছেন, তিনি বাদ। সুনীল, সুব্রত, ক্লিফোর্ডরা সবাই নবির চেয়ে জুনিয়র। মহেশ গাউলি, ক্লাইম্যাক্স শুধু সিনিয়র। তবু নবির কপালে নেতৃত্ব জোটে না।
রোম অলিম্পিকে অধিনায়ক হওয়ার কথা ছিল লতিফের। প্রি-অলিম্পিকে লতিফই ছিলেন অধিনায়ক। কিন্তু কোচ রহিম, ম্যানেজার জিয়াউদ্দিন সেই একই সম্প্রদায়ের বলে শেষ মুহূর্তে লতিফকে বদলে অধিনায়ক করে দেওয়া হয় পি কে বন্দ্যোপাধ্যায়কে। ক্ষুব্ধ লতিফ যে পরে ভারত ছেড়ে পাকিস্তানে চলে যান, তার পিছনে ওই ক্ষোভের আগুন কাজ করেছিল।
নবি আপাতত কোনও ক্ষোভে নেই। স্যাভিও-র দলটাই আসলে শান্ত খুব। চশমা পরে শান্ত লাগছে ফুটবল দলের নতুন কোচকেও। বেশ অধ্যাপকসুলভ। বললেন, “নবিও ভবিষ্যতে পাবে নেতৃত্ব।”
হাউটন-বিদায়ে আর্মান্দো আসার পরেও ফুটবলারদের জন্য ‘পাঁচ তারা’ হোটেল ছিল। কর্তারা বলেছিলেন, হাউটন গেলেও সুযোগসুবিধে এক থাকবে। কলকাতায় তা নেই। হাউটনের ছায়া শুধু আছে প্র্যাক্টিসে। দলের ‘শেপ’ রাখার চেষ্টায়। হাউটনের যা প্রথম কাজ ছিল।
হাউটনের ভাবনা থেকে বেরিয়ে স্যাভিও আসছেন একটা জায়গায়। আজ গুয়াহাটির অনেককেই খেলাচ্ছেন না। প্র্যাক্টিসে সুনীল, নবি, গৌরমাঙ্গি, জুয়েল ছাড়া সবাইকে বদলে দিলেন। প্রথম এগারোয় বঙ্গসন্তান দাঁড়াল চারশুভাশিস রায়চৌধুরী, দেবব্রত রায়, জুয়েল রাজা, রহিম নবি। পরে জুয়েলকে বসিয়ে ফ্রান্সিসকে নামানো হল। মাঝমাঠে বলদীপ, লালরেমডিকা, রোকাস, ফ্রান্সিস। যুবভারতী আক্ষেপ করতে পারে, অতীতে কোন মিডফিল্ডার দেখেছি, আজ কাদের দেখতে হচ্ছে!
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে নয় ধাপ এগিয়ে থাকা মালয়েশিয়ার তারকা কে? ভারতে যেমন ছিলেন ভাইচুং, এখন মালয়েশিয়ায় সফি মহম্মদ সালি। জাতীয় দলের একমাত্র তারকা, যিনি বিদেশে খেলেন। ইন্দোনেশিয়ার পেলিতা জয়া ক্লাবে। সফি সালি ট্রায়াল দিতে গিয়েছিলেন কার্ডিফ সিটিতে। পাস করেও খেলতে পারেননি ওয়ার্কিং পারমিট না থাকায়। পঞ্চাশ-ষাটের দশকের আব্দুল গণি মিনহাত, সত্তর-আশির মোক্তার দাহরি, আশি-নব্বইয়ের জয়নাল আবেদিনের সঙ্গে তুলনা চলছে ছেলেটির। দলটার তামিল বংশোদ্ভূত কোচ কৃষ্ণস্বামী রাজাগোপালের চিন্তায় যুবভারতীর অ্যাস্ট্রোটার্ফ। তিনিও ভরসা করছেন সফি সালির উপর। ভারতের কোচ স্যাভিওর মুখে অবশ্য বেশি শোনা গেল, মালয়েশিয়ান মিডফিল্ডার সফিক রহিমের নাম।
ইডেনের ম্যাচে প্রতিপক্ষ কোচ ওটিস গিবসনের নামও নেই, সাফল্য নেই। যুবভারতীতে ভারতের প্রতিপক্ষ কোচ কিন্তু মালয়েশিয়ায় সাড়া ফেলাসম্প্রতি সি গেমস ও আশিয়ান ফুটবল জিতে। কুড়ি বছর পরে সি গেমস জেতানোর কারিগর রাজাগোপালকে মালয়েশিয়ানরা নতুন নাম দিয়েছেন। ‘কিং রাজা’।
হাউটনের শিষ্য স্যাভিও ওই রাজার চাল সামলাতে কী ভাবে মন্ত্রী, ঘোড়া, গজ, নৌকো, বোড়ের পাল্টা চাল দেন, সেটাই দেখা যাক আজ যুবভারতীতে। ইডেনে জুড়ে কিন্তু এক ভারতের ইনিংস জয়ের গন্ধ। |
|
|
|
|
|