|
|
|
|
লক্ষ্মণরেখায় আটক ইডেনে শততমের স্বপ্ন |
সুমিত ঘোষ • কলকাতা |
ভারত: ৬৩১-৭ ডিঃ
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৩৪-২ |
সাঁইবাবার ভক্ত তিনি। এতটাই ভক্ত যে, হায়দরাবাদে বিশাল বাড়ি করেও সেই বাড়িতে ঢোকেননি বঙ্গিপুরাপু বেঙ্কট সাই লক্ষ্মণ। সাঁইবাবা বারণ করেছিলেন বলে। প্রচুর টাকা খরচ করে বানানো সেই বাড়ি এখন গেস্ট হাউস হিসেবে ভাড়া দিয়ে রেখেছেন। যখন যে হোটেলেই থাকুন না কেন, সেই ঘরে খাট দেখতে পাবেন না। কিন্তু বেডসাইড টেবিলটার ওপর সাঁইবাবার ছবি ঠিক থাকবে।
এ হেন ভিভিএস লক্ষ্মণ কলকাতায় তাঁর ভক্তের সংখ্যা আরও বাড়িয়ে রাখলেন। ইডেনে তাঁর যা রেকর্ড, মহম্মদ আজহারউদ্দিনেরও নেই। আজকের ২৮০ বলে ১৭৬ নট আউট নিয়ে ১০ টেস্টে মোট রান ১২১৭। গড় ১১০.৬৩। পাঁচটা সেঞ্চুরি। তার মধ্যে রয়েছে দশ বছর আগে স্টিভ ওয়ের টিমের বিরুদ্ধে সেই মহাকাব্যিক ২৮১। আজহারের ইডেনে গড় এর থেকে সামান্য কম। ১০৭.৫। সেঞ্চুরির সংখ্যা একই। |
জুটি
|
গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে ইডেনে জোড়া শতরান করেছিলেন লক্ষ্মণ-ধোনি। সেই ঘটনারই
পুনরাবৃত্তি হল মঙ্গলবার। ইডেনে এই নিয়ে পাঁচটা সেঞ্চুরি হয়ে গেল লক্ষ্মণের। ছবি: উৎপল সরকার। |
লক্ষ্মণকে ভবিষ্যতে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলতে পারার লোকও মঙ্গলবারের ইডেনে নাম লেখালেন। তিনিমহেন্দ্র সিংহ ধোনি। আজকের ১৭৫ বলে করা ১৪৪-এর পর ইডেনে তাঁর আপাতত গড় যাচ্ছে ১৮১.৫। তিন ম্যাচে করেছেন ৩৬৩ রান। এটা দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি। দক্ষিণ আফ্রিকার বিরুদ্ধে শেষ টেস্টের অ্যাকশন রিপ্লেই যেন চলল এ দিন। সেই টেস্টেও লক্ষ্মণ আর ধোনি সেঞ্চুরি করেছিলেন। বড় পার্টনারশিপ গড়ে প্রতিপক্ষকে চাপে ফেলে দিয়েছিলেন। তার পর হরভজনের স্পিনের কড়াইতে অতিথিদের ভাজা-ভাজা করো।
এ বারে একেবারে দ্বিতীয় দিনেই সেই স্ক্রিপ্ট বেরিয়ে পড়েছে। ভারত ডিক্লেয়ার করার পর যেমন অদ্ভুত দৃশ্য দেখা গেল। ধোনি ড্রেসিংরুম থেকে টিম নিয়ে বেরোলেন। মাথায় হেলমেট। উইকেটকিপারের হেলমেট পরে কিপিং করা আর কোনও নতুন দৃশ্য নয়। বহুকাল হল উইকেটের সামনে দাঁড়িয়ে কিপ করার সময় এই ফর্মুলা চালু হয়ে গিয়েছে। তা বলে কোনও টিম ফিল্ডিং করতে নামার সময়েই একেবারে উইকেটকিপার হেলমেট চাপিয়ে নিয়েছেন এমন দৃশ্য বিরল। তা-ও আবার কি না প্রথম ইনিংসেই! একেবারে টেস্টের দ্বিতীয় দিনে!
ভারত অধিনায়ক আর দেরি-টেরি করলেন না। প্রথম ওভারটাই চকচকে নতুন বল তুলে দিলেন প্রজ্ঞান ওঝার হাতে। ক্লাব হাউসের লোয়ার টিয়ারে তখন সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বসা। বললেন, “দেখুন, কী হয়।” ওঝার প্রথম ওভারেই এক বার সৌরভ জায়ান্ট স্ক্রিনের দিকে তাকাতে বললেন। “দেখুন কী রকম টার্ন করছে!” এ দিন বারো ওভার ব্যাট করল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তার মধ্যে এগারো ওভারই করলেন দুই ভারতীয় স্পিনার ওঝা এবং রবিচন্দ্রন অশ্বিন। পেসার উমেশ যাদব তাঁর প্রথম ওভার করতে এসেই উইকেট তুললেন। আর বোলিং পেলেন না। একটা কারণ স্পিন-বধের নকশা শুরু থেকেই এসে পড়া। আর একটা কারণ সকাল থেকে শহরে জাঁকিয়ে বসা কুয়াশা। মাঝেমধ্যেই অন্ধকার করে এসে খেলা থামিয়ে দিতে থাকল। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ব্যাটিংয়ের সময় এত অন্ধকার করে এল যে, ধোনি তখন পেসার ডাকবেন কী, ডাকলেই তো মন্দ আলোর জন্য খেলা থামিয়ে দেবেন আম্পায়াররা। প্লেয়িং কন্ডিশনে ফ্লাডলাইটে খেলা করার শর্তও নেই। সব মিলিয়ে এক ঘণ্টা নষ্ট হল এ দিন। তৃতীয় এবং চতুর্থ দিন সাড়ে আটটা থেকে খেলা শুরু করে সেটা পোষানোর চেষ্টা হবে। |
নববধূ |
মঙ্গলবার ক্লাবহাউসে অশ্বিনের স্ত্রী প্রীতি। ছবি: শঙ্কর নাগ দাস |
কিন্তু কলকাতার দুঃখ কে ঘোচাবে? ভারতের প্রথম ইনিংসে ৬৩১ রান উঠল। তিন তিনটে সেঞ্চুরি হল। আর যে সেঞ্চুরিটার জন্য এত প্রার্থনা, এত মণ্ডপসজ্জা সেটাই কি না অধরা থেকে গেল। দ্বিতীয় দিনের শেষে যা পরিস্থিতি তাতে দ্বিতীয় বার সচিনকে ব্যাটে হাতে দেখার কথা কেউ বললে তাকে নির্ঘাৎ উন্মাদ ধরে নেওয়া হবে। বরং জনপ্রিয় আলোচনা হচ্ছে, কুয়াশা না কাটলে টেস্ট না পাঁচ দিন পর্যন্ত টানে। না হলে চার দিনেই তো শেষ হয়ে যায়। মানে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাইশ বছর পূর্ণ হওয়ার দিনেই মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে গেল, শততম সেঞ্চুরির তাঁবু এ বার চলল তাঁর নিজের শহর মুম্বইতে।
রাতের দিকে অশ্বিনকে দেখলাম নতুন বউয়ের সঙ্গে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। ফুরফুরে মেজাজ। দ্বিতীয় দিন থেকেই ইডেনের পিচে বল ঘুরছে...মনে হচ্ছে, হনিমুনের জায়গাটা তাঁর মোটেও খারাপ যাবে না!
|
ভারত
প্রথম ইনিংস
(আগের দিন ৩৪৬-৫)
|
লক্ষ্মণ নঃআঃ ১৭৬,
যুবরাজ এলবিডব্লিউ স্যামি ২৫,
ধোনি ক বাও বো রোচ ১৪৪,
অশ্বিন নঃআঃ ৪,
অতিরিক্ত ২২,
মোট ৬৩১-৭।
পতন: ৬৬, ১৪৯, ২০৫, ৩৪৫, ৩৪৬, ৩৯৬, ৬২০।
বোলিং: ফিডেল এডওয়ার্ডস ২২.২-১-৮১-১, স্যামি ২৫-০-১৩২-২, রোচ ২৬-১-১০৬-২, স্যামুয়েলস ২৭-০-১০৪-০, বিশু ৪৫-২-১৫৪-১, ব্রাথওয়েট ৬-০-৪৩-১। |
ওয়েস্ট ইন্ডিজ
প্রথম ইনিংস |
বারাথ ক সহবাগ বো উমেশ ১,
ব্রাথওয়েট ক গম্ভীর বো অশ্বিন ১৭,
কার্ক এডওয়ার্ডস ব্যাটিং ১২,
ব্র্যাভো ব্যাটিং ৪,
মোট ৩৪-২।
পতন: ৩, ৩০।
বোলিং: প্রজ্ঞান ৬-২-১০-০, উমেশ ১-০-৩-১, অশ্বিন ৫-২-২১-১। |
|
|
|
|
|
|
|