নদী দূষণ রুখছেন স্থানীয় বাসিন্দারাই
হাতে চকচকে ধারালো দা, পড়নে ভিজে সপসপে বারমুডা-গেঞ্জি কিংবা গামছা গায়ে গঙ্গা পাড়ে ভিড়ের দিকে তীক্ষ্ন চোখে তাকিয়ে একটু দূরে অপেক্ষা করছেন এক দল মানুষ।
একটি একটি করে রাসের প্রতিমা জলে পড়তেই বিদ্যু গতিতে ঝাঁপিয়ে পড়ছেন তাঁরা। কিছুক্ষণের মধ্যেই হাতের ধারালো দায়ের কোপে প্রতিমার মূল পাটাতন থেকে বাঁশের বিরাট বিরাট কাঠামো কেটে আলাদা করে ফেলছেন। তারপর দড়ি দিয়ে বেঁধে জল থেকে টেনে তুলে ফেলছেন নদী পাড়ে। প্রতিমা বিসর্জনের প্রায় সঙ্গে সঙ্গে বাঁশ, দরমা, বিচুলি সমেত কাঠামো জল থেকে উঠে আসছে। বিসর্জনের ঘন দূষণ থেকে দ্রুত রেহাই পাচ্ছেন গঙ্গা। দ্রুত সেই সব কাঠামো ২০০-২৫০ টাকায় চলে পৌঁছে যাচ্ছে কুমোরবাড়ি।
ছবি: দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়।
অথচ বছর কয়েক আগেও ছবিটা এমন ছিল না। রাসের প্রতিমা নিরঞ্জনের পর নদীর পাড় জুড়ে পড়ে থাকত প্রতিমার কাঠামো, খর। তা পচে গিয়ে দূষণ ছড়াত আর নিজেদের সুবিধামত মৃশিল্পীরা সেই সব কাঠামো নদী থেকে তুলে আনতেন। কয়েক বছর আগে নবদ্বীপের গঙ্গার যে ঘাটে বেশিরভাগ প্রতিমা নিরঞ্জন হয় সেই ফাঁসিতলা ঘাট এলাকার বাসিন্দারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে জল থেকে কাঠামো তুলে ফেলছেন। পরে স্থানীয় মৃৎশিল্পীরা টাকা দিয়ে তা কিনে নিচ্ছেন। সন্তোষ বিশ্বাস, সমীর সাহারা বলেন,‘‘ আগে বিসর্জনের পর ঘাটের যে অবস্থা থাকত তাতে এক দিকে যেমন দূষণ ছড়াত তেমনি আমরা যারা নদীর পাড়ে বসবাস করি তাদের নানান অসুবিধা হত। বিরাট বিরাট প্রতিমার কাঠামোর বাঁশ, পেরেক, দরমা ছড়িয়ে ছিটিয়ে বিপজ্জনক হয়ে থাকত নদী। পারাপারই করা যেত না। এ বার তাই নিজেরাই নদী সাফ করে দিচ্ছি। কিছু বেকার ছেলেদের উপায়ও হচ্ছে।’’
তবে নদীপাড়ের বাসিন্দাদের কাছ থেকে পয়সা দিয়ে কঠামো কেনার ব্যাপারে মৃশিল্পীরা দুটি ভিন্ন মত প্রকাশ করেছেন। এক দল একে সমর্থন করলেও অন্য দল এই প্রথার বিরোধী। নবদ্বীপের এক মৃশিল্পী গোপাল পাল বলেন,‘‘ আমরা জলে নেমে কাঠামো তুলে আনি না। চিরকালই লোক লাগিয়ে কাঠামো তোলা হয়। তবে সে খরচ বেশি। এ বার আমাদের সুবিধাই হয়েছে।’’ অন্য দিকে আর এক প্রবীণ মৃশিল্পী নারায়ণ পাল বলেন,‘‘ আমরা বংশানুক্রমে এই কাজ নিজেরাই করে আসছি চিরকাল জানতাম প্রতিমার কাঠামো বিসর্জনের পর পালেদের সম্পত্তি কিন্তু হঠা কয়েক বছর ধরে দেখছি ওই কাঠামো আমাদেরই পয়সা দিয়ে কিনতে হচ্ছে। যেমন আমি এ বার রাসে তিনটে বড় প্রতিমা গড়েছিলাম তার কাঠামোর জন্য আমাকে প্রায় এক হাজার টাকা খরচ করতে হল। কাউকে কিছু বলার নেই।’’
নানা ভাবে পরিবেশ দূষণ ঘটানো যখন মানুষের অধিকারের পর্যায়ে পৌঁছে গিয়েছে, তখন কিছুটা পেটের টানে হলেও গঙ্গা দূষন রোধে নিজেদের অজান্তেই একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছেন ফাঁসিতলা ঘাটসংলগ্ন এলাকার ওই মানুষগুলো।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.