একশো দিনের কাজে হুগলি জেলার পরিস্থিতি/ ১
কাজ চেয়ে না পেলে বেকার ভাতা মেলে, জানেন না অনেকে
কাজ চাইলে কাজ দিতে হবে পনেরো দিনের মধ্যে। না হলে দিতে হবে বেকার ভাতা একশো দিনের কাজের এই মূল শর্তটিই গ্রামের মানুষের কাছে পৌঁছয়নি বলে অভিযোগ হুগলিতে। বিভিন্ন পঞ্চায়েত থেকেও সে জানানো হয়েছে সে কথা। প্রকল্প রূপায়ণে আরও কিছু সমস্যার কথা উঠে এসেছে পঞ্চায়েত প্রধানদের কথায়। ব্লক স্তরের সরকারি আধিকারিকদের বক্তব্য, প্রকল্পটির স্বার্থক রূপায়ণের জন্য জেলা ও রাজ্য স্তর থেকে এ ব্যাপারে আরও প্রচার চালানো দরকার। রাজনৈতিক অস্থিরতার জেরেও কাজ ব্যাহত হয়েছে অনেক জায়গায়। সব মিলিয়ে একশো দিনের কাজের প্রকল্পে গড় খুবই খারাপ এই জেলায়। ২০১০-১১ আর্থিক বছরে গড়ে কাজ দেওয়া গিয়েছে ২৮ দিন। তার আগের আর্থিক বছরে এই হিসেব ছিল ১৮ দিন। এ বছর নভেম্বর মাসের মাঝামাঝি পর্যন্ত গড় মাত্র ১১.৫২ দিন। কাজ না পেলে বেকার ভাতার আবেদন করার কথা প্রাপকদের। কিন্তু সেই দাবি এখনও পর্যন্ত খুব কম ক্ষেত্রেই উঠেছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর।
সালেপুর ১ পঞ্চায়েতের মুক্তারাম চৌধুরী, সুশীলকুমার জানা, সুজাতা জানা, গোঘাটের শ্রীমন্ত রায়, তারকেশ্বর ব্লকের আশিস প্রামাণিক, মন্টু বেরাদের বক্তব্য, “একশো দিনের প্রকল্পে কাজ হয় জানি। কিন্তু আমরা নিজে থেকেও যে তা চাইতে পারব, তা জানতাম না। পঞ্চায়েতই কাজ হবে কিনা ঠিক করে দেয়। একাও কাজের জন্য আবেদন করা যায়, বলে জানতাম না। কাজ চেয়ে না পেলে ভাতা পাব, এই প্রথম শুনলাম।”
কেন্দ্র সরকারের ‘মহাত্মা গাঁধী জাতীয় গ্রামীণ কর্মসংস্থান গ্যারান্টি আইন’ হুগলি জেলায় আনুষ্ঠানিক ভাবে উদ্বোধন হয়েছিল ২০০৫ সালের ৫ সেপ্টেম্বর। বছর খানেক পরে জেলায় প্রকল্পটির কাজ পুরোদমে চালু হয়ে যায়। প্রকল্পের মূল লক্ষ্য, চাহিদার ভিত্তিতে প্রতিটি গ্রামীণ পরিবারকে একশো দিনের অদক্ষ শ্রমিকের কাজ দেওয়া নিশ্চিত করা। সরকারি নিয়ম হল, কাজের জন্য কেউ আবেদন করলে তাঁকে পনেরো দিনের মধ্যে কাজ দিতে হবে। আবেদনকারীর এলাকা কাজ না থাকলে সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েতের অন্য সংসদ এমনকী, অন্য পঞ্চায়েতেও কাজ দেওয়া যাবে। শ্রমিকটি কাজের জন্য নিজের এলাকা থেকে পাঁচ কিলোমিটার দূরত্বে গেলে ১০ শতাংশ অতিরিক্ত মজুরি পাবেন।
প্রশাসনের কর্তাদের একাংশ এবং নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েক জন প্রধান জানালেন, প্রকল্পটি হওয়ার কথা ছিল চাহিদা-ভিত্তিক। কিন্তু বাস্তবে হয়ে গিয়েছে বরাদ্দ-ভিত্তিক। টাকা পেলে তবে কাজ হয়। প্রধানদের আরও বক্তব্য, কোথায় কী কাজ করালে দরিদ্র মানুষের উপযোগী স্থায়ী সম্পদ সৃষ্টি করা যাবে, যাতে ওই এলাকায় শ্রমের চাহিদা তৈরি হবে তা নিয়ে সংসদ ধরে ধরে বার্ষিক পরিকল্পনা করা দরকার। কিন্তু অধিকাংশ পঞ্চায়েতে পরিকল্পনা তৈরির দক্ষ কর্মীই নেই। বিশেষজ্ঞের অভাবে জল-জমি ও বনভূমির মানোন্নয়নের নামে কেবল টাকা অপচয় হয়। এই প্রধানদের বক্তব্য, প্রচারের অভাবে মানুষের ধারণা হয়েছে, কোদাল হাতে দাঁড়ালেই ১৩০ টাকা করে পাওয়া যাবে। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকেরা মাথা-পিছু ৩০ টাকারও কাজ করেন না। কিন্তু দাবি করেন ১৩০ টাকা।
পঞ্চায়েতে কারিগরী কর্মীর অভাবের কথা স্বীকার করে বিডিওদের বক্তব্য, “এই অভাব বাইরে থেকে এনেও মেটানো সম্ভব। কিন্তু রাজনৈতিক অস্থিরতার পরিবেশে তা সম্ভব হচ্ছে না। পঞ্চায়েতের আরও কিছু প্রকল্পও এই পরিস্থিতিতে সফল হচ্ছে না। তা ছাড়া, শ্রমিকদের পনেরো দিনের মধ্যে কাজের টাকা মিটিয়ে দেওয়ার কথা। ব্যাঙ্কের অসহযোগিতায় অনেক ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হচ্ছে না।”
জেলা প্রশাসন সূত্রের খবর, হুগলিতে ১৮টি ব্লকে মোট জবকার্ড দেওয়া হয়েছে ৬ লক্ষ ৬ হাজার ২৩টি। জবকার্ড হোল্ডার পরিবারগুলির মধ্যে কাজ চেয়ে পেয়েছেন ১ লক্ষ ৯২ হাজার ৮৫৮ জন। মোট শ্রমদিবস সৃষ্টি হয়েছে ২২ লক্ষ ২১ হাজার ৮৪৬ দিন। এই হিসেব চলতি বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত। অর্থাৎ, শ্রমিকেরা গড়ে কাজ পেয়েছেন ১১.৫২ দিন।
কিন্তু কেন এই পরিস্থিতি? রাজনৈতিক ডামাডোল একটি কারণ, সে কথা মানছে প্রশাসনও। কিন্তু আরও কিছু সমস্যা উঠে এসেছে আধিকারিকদের কথায়।
(চলবে)



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.