কৃষি সমবায়ের বিরুদ্ধে সার নিয়ে কালোবাজারির অভিযোগ
রাজ্য সরকারের হুঁশিয়ারি সত্ত্বেও সারের কালোবাজারি নিয়ে শোরগোল অব্যাহত হুগলি জেলায়। প্রায়ই এ নিয়ে বিক্ষোভ, আন্দোলন চলছে বিভিন্ন জায়গায়। মঙ্গলবার তারকেশ্বরের কুলতেঘরী-কেটেরা সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতির সামনে সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত বিক্ষোভ দেখান চাষিরা। কৃষি দফতর এবং প্রশাসনের বিভিন্ন দফতরে ওই সমবায়ের বিরুদ্ধে ‘নিয়ম বহির্ভূত’ ভাবে সারের বস্তা-পিছু অতিরিক্ত দাম নেওয়ার লিখিত অভিযোগ জানান চাষিরা। তারকেশ্বর পুরসভার চেয়ারম্যানও লিখিত ভাবে একই অভিযোগ জানান রাজ্যের সমবায় মন্ত্রী এবং কৃষি দফতরের প্রধান সচিবকে।
এ ব্যাপারে চন্দননগরের মহকুমাশাসক অভিজিৎ মিত্র বলেন, “অভিযোগ পেয়েছি। সমবায় দফতর ঘটনার বিভাগীয় তদন্ত করবে। পুলিশের সঙ্গেও কথা বলেছি। চাষিদের অভিযোগের প্রতিলিপি পুলিশের কাছে পাঠিয়েছি। পুলিশকে বলেছি, অভিযোগের সারবত্তা থাকলে দোষীদের গ্রেফতার করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে।”
চাষিদের অভিযোগ, তারকেশ্বরের ওই সমবায়ে সারের নির্ধারিত মূল্যের (এমআরপি) থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছিল।
এ ব্যাপারে দু’এক জন প্রতিবাদের চেষ্টা করলেও কোনও লাভ হয়নি। তা ছাড়া, অতিরিক্ত দাম নিলেও তা সরাসরি সমবায়ের ক্যাশমেমোতে লেখা হচ্ছিল না। তাতে শুধুমাত্র এমআরপি মূল্যই লেখা হচ্ছিল। অতিরিক্ত টাকার হিসেব লিখে দেওয়া হচ্ছিল অন্য একটি কাগজে। সেই কাগজে অবশ্য সমবায়ের নাম ছাপানো থাকছিল না। সমবায়ের কোনও স্ট্যাম্পও মারা হচ্ছিল না। ‘বিবিধ আয়-ব্যয়’ লেখা ওই ছাপানো ওই কাগজে পরিবহণ ও পরিষেবা খরচ দেখিয়ে অতিরিক্ত টাকার রসিদ দেওয়া হচ্ছিল। এ ভাবে কোনও সারের ক্ষেত্রে বস্তা-পিছু ১৮৩ টাকা, কোনওটির ক্ষেত্রে ৮৮ টাকা, আবার কোনওটির ক্ষেত্রে ৫৫ টাকা বেশি নেওয়া হচ্ছিল। চাষিদের অভিযোগ, বেআইনি ভাবে ওই কাজ করছিল সমবায়টি।
গত ১১ নভেম্বর বিষয়টি নিয়ে হইচই হয় চাষিদের মধ্যে। ১৪ তারিখ তারকেশ্বরের ব্লক কৃষি আধিকারিক, চন্দননগরের মহকুমাশাসক এবং জেলাশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগ পাঠানো হয় চাষিদের তরফে। এর আগেই অবশ্য বিষয়টির গুরুত্ব বুঝে সমবায় মন্ত্রী হায়দার আজিজ সফিকে এ ব্যাপারে অবহিত করেন তারকেশ্বরের পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত। অভিযোগ, সোমবার বিকেল পর্যন্ত অতিরিক্ত দাম নেয় সমবায়টি। তার পর শোরগোল পড়ায় সন্ধ্যা থেকে অতিরিক্ত দাম নেওয়া বন্ধ করা হয়।
অভিযোগ কার্যত স্বীকার করে সমবায়ের ম্যানেজার বাসুদেব হাজরা বলেন, “সমবায়ের পরিচালন সমিতি ওই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমাদের নজরে তা আসতেই বাধা দিয়ে এমআরপি-তে সার বিক্রির কথা বলি। রবিবারে ফের পরিচালন সমিতির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, সরকারি নির্দেশনামা মেনেই এমআরপি-তে সার বিক্রি করা হবে। এ ব্যাপারে বিজ্ঞপ্তিও টাঙানো হয়েছে।”
মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে ওই সমবায়ের সামনে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন চাষিরা। তাঁরা দাবি তোলেন, অতিরিক্ত টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করতে হবে। বিকেল পর্যন্ত বিক্ষোভ চলে।
কুলতেঘরি গ্রামের কৃষক বটকৃষ্ণ খাঁ বলেন, “প্রশাসন তদন্ত করলেই টাকা নয়ছয়ের বিষয়টি প্রমাণিত হয়ে যাবে। না হলে আমাদের মতো গরিব চাষিদের মারা পড়তে হবে।” ইতিমধ্যে মহাকরণে কৃষি দফতরের প্রধান সচিবের কাছেও সবিস্তারে বিষয়টি জানান পুরপ্রধান স্বপন সামন্ত। তিনি বলেন, “যে ভাবে সারের অতিরিক্ত দাম নেওয়া হচ্ছে, তা চাষিদের সঙ্গে প্রতারণার সামিল। সরকার যখন আন্তরিক ভাবে কালোবাজারি ঠেকানোর চেষ্টা করছে, সেখানে কিছু অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সেই চেষ্টা ফলপ্রসূ হচ্ছে না।” সমবায়ের ম্যানেজার অবশ্য বলেন, “একটা ভুল হয়েছিল। তবে মাত্র ৩ থেকে ৪ শতাংশ চাষির ক্ষেত্রে এটা হয়েছে। তাঁদের থেকে নেওয়া অতিরিক্ত টাকা ফেরতের ব্যবস্থা করছি। যাঁরা ঋণ নিয়ে সার কিনেছেন, তাদের ক্ষেত্রে মূল হিসেবের সঙ্গে অতিরিক্ত দামের টাকা ধরে নেওয়া হবে।”
কয়েক দিন আগে পাণ্ডুয়ার সরাই-তিন্না পঞ্চায়েতের সরাই সমবায় কৃষি উন্নয়ন সমিতি লিমিটেডের চার কর্মকর্তার বিরুদ্ধে কালোবাজারির অভিযোগে থানায় এফআইআর করা হয় প্রশাসন এবং চাষিদের তরফে। অভিযুক্তরা এখনও পলাতক বলে পুলিশের দাবি। সারের কালোবাজারি বন্ধের দাবিতে রবিবার হরিপালের বাসুদেবপুর মোড়ে ১২ এবং ১৮ নম্বর রুটে অবরোধ করে বিজেপি। চাষিরাও সামিল হয় ওই আন্দোলনে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.