সম্পাদকীয় ২...
শেষ পর্যন্ত
শেষ পর্যন্ত ইতালির প্রধানমন্ত্রী সিলভিয়ো বের্লুস্কোনিকে বিদায় লইতেই হইল। দুর্নীতি, জালিয়াতি, মিথ্যাচার ও যৌন কেলেঙ্কারির দায়ে উপর্যুপরি অভিযুক্ত হইয়াও আপন পদমর্যাদা ও ক্ষমতার অপব্যবহার করিয়া দীর্ঘ দিন তিনি ইতালিকে শাসন করিয়া আসিতেছিলেন। বলা হয়, বেনিতো মুসোলিনির পর তাঁহার মতো জনপ্রিয়তা আর কোনও ইতালীয় রাজনীতিক অর্জন করিতে পারেন নাই। দেশবাসীও তাঁহার দোষত্রুটি, বিচ্যুতি, অনাচার কেবল সহ্য করে নাই, রীতিমত তাঁহার তারিফ করিয়াছে। কিন্তু বের্লুস্কোনি তত দিনই ক্ষমতা ও জনপ্রিয়তার শীর্ষে অপ্রতিদ্বন্দ্বী থাকিয়াছেন, যত দিন ইতালির অর্থনীতি দেউলিয়া হওয়ার সত্যটি জনসাধারণের গোচরে আসে নাই। অর্থনৈতিক সঙ্কট চরমে উঠিলে তখন আর বের্লুস্কেনির পক্ষে ক্ষমতা ধরিয়া রাখা সম্ভব হয় নাই।
রাজনৈতিক স্বেচ্ছাচার ও সামাজিক অনাচার সত্ত্বেও এক জন শাসক বা একটি শাসক গোষ্ঠী অনেক দিন ধরিয়া গদিয়ান, এমন দৃষ্টান্ত কেবল গদ্দাফির লিবিয়া বা অনুরূপ দেশে নয়, ‘গণতান্ত্রিক’ দুনিয়াতেও দেখা গিয়াছে। বের্লুস্কোনি তাহার একটি প্রকট দৃষ্টান্ত। কিন্তু এই ধরনের অনাচারের সহিত যদি অর্থনৈতিক সঙ্কট যুক্ত হয়, তাহা হইলে অতি বড় দাপুটে শাসকের পক্ষেও গদি রাখা কঠিন হইয়া পড়ে। আর্থিক অগ্রগতি একটি দেশের জনসমাজকে নানা ভাবে উপকৃত করে, তাহার কারণে হয়তো জনমনে শাসকের প্রতি এক ধরনের কৃতজ্ঞতা ও ক্ষমাশীল সহিষ্ণুতাও জন্মায়। প্রভূত অনাচার ও কেলেঙ্কারি সত্ত্বেও বের্লুস্কোনির বিরুদ্ধে দেশব্যাপী বিক্ষোভ পুঞ্জীভূত না-হওয়ার পিছনে সেই ক্ষমাশীলতার একটা ভূমিকা ছিলই। যখন তিনি আর দেশবাসীর জীবনযাত্রার মান উন্নয়নের নিশ্চয়তা দিতে ব্যর্থ, তখনই জনচক্ষে তিনি খলনায়ক। অর্থনৈতিক প্রগতির মানদণ্ড বর্তমান যুগে শাসকের যোগ্যতা নির্ধারণের একটি বড় নির্ণায়ক। মনে পড়িতে পারে, নব্বইয়ের দশকের সূচনাপর্বে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের উদ্যোগপর্বে জর্জ বুশের প্রতিদ্বন্দ্বী বিল ক্লিন্টন একটি স্লোগান বিশেষ ভাবে প্রচার করিয়াছিলেন: ইট’স দি ইকনমি স্টুপিড! তখন মার্কিন অর্থনীতি সঙ্কটে। সেই নির্বাচনে ক্লিন্টন জয়ী হন, ইরাক যুদ্ধের সাফল্য প্রেসিডেন্ট বুশকে বাঁচাইতে পারে নাই। অর্থনীতির দায় বড় দায়। ভারতেও শাসকের ভাগ্য নির্ধারণে অর্থনীতির ভূমিকা বার বার গুরুত্বপূর্ণ হইয়াছে। ২০০৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে মনমোহন সিংহের সরকার পুনর্নির্বাচিত হইয়া আসে, তাহার একটি বড় কারণ, তাহার আগে অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল ছিল। আজ পরিস্থিতি ভিন্ন, অর্থনীতি বেসামাল। মনমোহন সিংহের সরকার উত্তরোত্তর দুর্বল বলিয়া প্রতিপন্ন হইতেছে। তাহার একাধিক কারণ আছে। বিশেষত দুর্নীতির অভিযোগ এবং দুর্বল শাসন বা অ-শাসন। কিন্তু সেই ত্রুটিগুলি সামাল দেওয়া তুলনায় সহজ হইত, যদি ভারতীয় অর্থনীতির স্বাস্থ্য ভাল থাকিত, বিশেষত মূল্যবৃদ্ধির আগুন প্রশমিত হইত। অর্থনীতিকে ঠিক ভাবে সঞ্চালন করিতে না-পারার পরিণাম সর্বদাই দেশের আমজনতার দুঃসময় ঘনাইয়া আনে। দৈনন্দিন জীবিকা নির্বাহের কষ্ট ও যন্ত্রণার অভিজ্ঞতা তাঁহাদের শাসকদের প্রতি বিমুখ করিয়া তোলে। শাসক তখন গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনপ্রতিনিধিত্বের নৈতিক বৈধতা হারাইয়া ফেলে। বের্লুস্কোনি এক অনন্য নজির, তাঁহার সহিত ভারতীয় শাসকদের তুলনা চলে না নিশ্চয়ই, কিন্তু যে পরিস্থিতিতে সংসদীয় সমর্থন হারাইয়া তাঁহাকে বিদায় লইতে হইল, তাহা হইতে যে কোনও গণতন্ত্রেরই শিক্ষা লওয়ার আছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.