সম্পাদকীয় ১...
শাসনের দায়
শিল্পবাণিজ্য জগতের বিশিষ্ট ব্যক্তিরা সচরাচর প্রশাসনিক বিষয়ে মন্তব্য এড়াইয়া যান, প্রকাশ্যে সমালোচনা করিবার দৃষ্টান্ত অতি বিরল। কিন্তু সম্প্রতি মুকেশ অম্বানী-সহ বেশ কিছু প্রধান শিল্পপতি এ বিষয়ে মুখ খুলিয়াছেন। তাঁহাদের আক্ষেপ, নূতন নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রে সরকার যেন ‘পক্ষাঘাতগ্রস্ত’, আর্থিক সংস্কারগুলি কার্যকর করার উদ্যোগ নাই। এই বক্তব্য অসঙ্গত নহে। মনমোহন সিংহের নেতৃত্বে দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার সুপ্রশাসন এবং উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি লইয়া আসিয়াছিল। কিন্তু দুর্নীতির অভিযোগ এবং রাজনৈতিক মতবিরোধে গুরুত্বপূর্ণ আইন প্রণয়নের কাজ কেবলই পিছাইয়া যাইতেছে। এই বিলম্ব দেশের অর্থনীতির পক্ষে ক্ষতিকর, এবং সাধারণ মানুষের স্বার্থবিরোধী। কেবল গণতান্ত্রিক কার্যপদ্ধতির দোহাই দিয়া বিলম্ব করা চলিবে না, মুকেশ অম্বানীর এই বক্তব্যও যথার্থ। জোট সরকার চালাইবার অভিজ্ঞতা মনমোহন সিংহ এবং তাঁহার দল কংগ্রেসের এই প্রথম নহে। নানা মতাবলম্বী শরিক দল ও বিরোধীদের সহিত কখনও প্রতিদ্বন্দ্বিতা, কখনও সহযোগিতা করিয়াই প্রশাসনের কাজ করা হইয়াছে। কী করিয়া প্রয়োজনীয় সহমত তৈরি করিতে হয়, সে বিষয়ে মন্ত্রীরা অনভিজ্ঞ নহেন।
অথচ দ্বিতীয় ইউ পি এ সরকার যেন এক জাড্যের গ্রাসে পড়িয়াছে। উচ্চতম স্তরে কাজের গতি মন্থর, লক্ষ্যও স্পষ্ট নহে। সমস্যা কেবল বিরোধী দলগুলির মানসিকতায় নহে, শরিকদের সহিতও সরকারের বোঝাপড়ায় যথেষ্ট ফাঁক থাকিয়া যাইতেছে। বাংলাদেশের সহিত জলবণ্টন কিংবা পেট্রোপণ্যের দাম বাড়াইবার মতো নীতির ক্ষেত্রে তাহা ধরা পড়িয়াছে। এমনকী উচ্চতম স্তরে মন্ত্রীদের মধ্যেও মতের অনৈক্য, কাজের সমন্বয়হীনতা এবং ব্যক্তিগত রেষারেষি প্রতিনিয়ত সংবাদে আসিতেছে। সেই সঙ্গে নাগরিক সমাজের নানা গোষ্ঠীর সহিতও সরকার সাক্ষাৎ সংঘর্ষের পথে গিয়াছে। ফলে সাধারণের মধ্যে এই ধারণাই জন্মাইতেছে যে দৈনন্দিন সংকট কাটাইবার কাজে মনমোহন সিংহ সরকারের শক্তির সিংহভাগ খরচ হইয়া যাইতেছে। দরিদ্রের উন্নয়ন কিংবা শিল্পের উন্নতির দ্বারা অর্থনৈতিক বৃদ্ধি বা সামাজিক ন্যায়ের লক্ষ্যে পৌঁছানো যেন গৌণ হইয়া গিয়াছে। শিল্পপতিদের উদ্বেগ প্রশমন করিতে হইলে, আর্থিক বৃদ্ধির হার বজায় রাখিতে হইলে কয়েকটি সিদ্ধান্ত এখনই লইতে হইবে, কিছু ব্যবস্থা অবিলম্বে কার্যকর করিতে হইবে। নতুবা আর্থিক বৃদ্ধির পথ আটকাইয়া যাইবে। যথা খুচরা ব্যবসায়ে বিদেশি বিনিয়োগ ও শিল্পের প্রয়োজনে কৃষিজমি অধিগ্রহণ। পাশাপাশি, পরিকাঠামোয় যে বিপুল বেসরকারি বিনিয়োগের প্রত্যাশা সরকার করিতেছে, তাহার পথ পরিষ্কার করিতে হইলে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত দ্রুত লওয়া প্রয়োজন। সর্বোপরি সারা দেশে অভিন্ন পণ্য ও পরিষেবা কর প্রয়োগ করিবার জন্য সংবিধান সংশোধন করিবার প্রস্তাব আনা হইয়াছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অতি প্রয়োজনীয় আর্থিক সংস্কারগুলির অন্যতম বলিয়াই শিল্পমহল মনে করিতেছে। এখনই আশঙ্কা করা হইতেছে যে, দুর্নীতির অভিযোগ এবং অন্যান্য রাজনৈতিক বিরোধিতার ফলে শীতকালীন সংসদ অধিবেশনে এই বিষয়গুলি পাশ করাইতে সরকার ব্যর্থ হইবে। বি জে পি বিরোধিতার সংকীর্ণ সংজ্ঞা আঁকড়াইয়া থাকিবে, সরকারও শরিক বা বিরোধীদের সহিত আলোচনা-বিতর্ক এবং অন্যান্য কৌশলে কাজ উদ্ধার করিতে ব্যর্থ হইবে, এমন সম্ভাবনা যথেষ্ট। এই আশঙ্কা সত্য হইলে মনমোহন সিংহের নেতৃত্বের ক্ষমতা লইয়া পুনরায় প্রশ্ন উঠিবে। শিল্পপতিদের বক্তব্য নির্দেশ করিতেছে যে, দেশবাসী ক্রমশ ধৈর্য হারাইতেছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.