রাজ্যকে ৪ টুকরো, মায়ার
প্রস্তাবে বিপাকে বিরোধীরা
কটা রাজ্যকে চার টুকরো করার প্রস্তাব! উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী মায়াবতীর এই একটি ঘোষণাতেই রাতারাতি চাপে পড়ে গেল সবক’টি বিরোধী দল। মাত্র ২৪ ঘণ্টা আগে রাহুল গাঁধীকে দিয়ে আনুষ্ঠানিক ভাবে ভোটের প্রচার শুরু করিয়ে যে কংগ্রেস মায়াবতীর সরকারকে ধাক্কা দিতে সক্রিয় হয়ে উঠেছিল, মুখ্যমন্ত্রীর এ দিনের ঘোষণায় তারাই বেশ অস্বস্তিতে। বিপাকে পড়েছে বিজেপি, সমাজবাদী পার্টির মতো দলগুলিও।
রাজ্য ভাগের প্রস্তাব পেশ করে এ দিন মায়াবতী জানিয়ে দেন, উন্নয়নের স্বার্থেই তিনি রাজ্যের পুনর্গঠনের পক্ষে। এ ব্যাপারে আজই মন্ত্রিসভার বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, পূর্বাঞ্চল, বুন্দেলখণ্ড, অবধ প্রদেশ এবং পশ্চিম প্রদেশ এই চার ভাগে ভাগ করা হবে গোটা রাজ্যকে। যার অর্থ, এই প্রস্তাব বাস্তবায়িত হলে ভারতের মানচিত্র থেকে উত্তরপ্রদেশ রাজ্যটিরই বিলোপ ঘটবে! মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন, ২১ নভেম্বর থেকে বিধানসভার অধিবেশন শুরু হলে এই সংক্রান্ত প্রস্তাব পেশ করা হবে। একই সঙ্গে তাঁর কৌশলী মন্তব্য, “রাজ্য ভাগের বিষয়টি কেন্দ্রের এক্তিয়ারে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত কেন্দ্রকেই নিতে হবে।”
রাজনৈতিক দলগুলির বক্তব্য, ভোটের আগে এটা বসপা নেত্রীর ‘মায়াখেলা’! যে আঞ্চলিক দলনেত্রী ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণে বিশ্বাসই করেন না, তিনি উত্তরপ্রদেশকে চার ভাগ করতে চাইবেন কেন? কোন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী হবেন মায়াবতী? তবে এটা ঠিক, এই ঘোষণা করে আঞ্চলিক আবেগকে নিজের পক্ষে পেতে চেয়েছেন। ফলে তার বিরোধিতা করা জাতীয় দলগুলির পক্ষে কঠিন।
মায়াবতীর আজকের ঘোষণায় সবচেয়ে বেশি চাপে পড়েছে কংগ্রেস। দলের শীর্ষ সূত্রের বক্তব্য, বুন্দেলখণ্ড, পূর্বাঞ্চল-সহ উত্তরপ্রদেশের পিছিয়ে পড়া অংশের উন্নয়নের জন্য রাজ্য ভাগে তাদের আপত্তি নেই। বস্তুত রাহুল গাঁধী নিজেই বারবার বুন্দেলখণ্ড রাজ্য গঠনের পক্ষে সওয়াল করেছেন। কিন্তু এখন উত্তরপ্রদেশ ভাগে সায় দেওয়ার অর্থই হল, পৃথক তেলেঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে সায় দেওয়া। অথচ এখনই পৃথক তেলেঙ্গানা গঠন সম্ভব নয়। দলের মুখপাত্র তথা ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য জনার্দন দ্বিবেদী বলেন, “রাজ্য পুনর্গঠনের মতো বড় সিদ্ধান্ত তড়িঘড়ি নেওয়া যায় না। মায়াবতী রাজ্য বিধানসভায় প্রস্তাব পাশ করে কেন্দ্রকে পাঠালে, কেন্দ্র তা বিবেচনা করে দেখবে।” দলের এক শীর্ষ নেতা জানান, তেমন বুঝলে কেন্দ্র দ্বিতীয় রাজ্য পুনর্গঠন কমিটি গঠন করতে পারে। ওই কমিটি তেলেঙ্গানা থেকে উত্তরপ্রদেশ সবই বিবেচনা করে দেখবে।
মায়াবতীর ঘোষণায় বিপাকে বিজেপি-ও। তারা বরাবরই ছোট রাজ্য গঠনের পক্ষে। কিন্তু মায়াবতী যে ভাবে উত্তরপ্রদেশকে চার টুকরো করার প্রস্তাব দিয়েছেন, তা তাদের পক্ষে মানা কঠিন। আবার বিরোধিতা করলে আঞ্চলিক আবেগ বিপক্ষে যেতে পারে। এমন পরিস্থিতিতে দলের মুখপাত্র প্রকাশ জাভরেকর বলেন, “এটা মায়াবতীর নির্বাচনী চমক। মায়াবতী সাড়ে চার বছর ধরে কিছুই করেননি। এখন ভোটের আগে কোনও সমীক্ষা, বিশ্লেষণ না করে একতরফা ঘোষণা করে দিচ্ছেন!”
উত্তরপ্রদেশে মায়াবতীর প্রধান বিরোধী মুলায়ম সিংহ যাদব অবশ্য সরাসরি রাজ্যভাগের বিরোধিতা করেছেন। সপা নেতৃত্বের বক্তব্য, তাঁরা কোনও ভাবেই রাজ্য ভাগ হতে দেবেন না। রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য, যাদব ও মুসলিমরাই মুলায়মের ভোট ব্যাঙ্ক। তা রাজ্যের কিছু জায়গায় সীমাবদ্ধ। ফলে রাজ্য ভাগ হলে মুলায়মেরই বেশি ক্ষতি হবে।
তবে এটুকু বলা যায়, একটি মাত্র ঘোষণায় মায়াবতী সবাইকেই চিন্তায় ফেলে দিয়েছেন। তাঁর দলের একটি সূত্র বলছে, আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে তাঁর দলের ৭০ জন বিধায়ক টিকিট না পেয়ে ক্ষেপে রয়েছেন। তাঁরা মায়াবতীর বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনতে সচেষ্ট। বিরোধী দলগুলির সঙ্গে কথাও বলছেন। মায়ার এই পদক্ষেপ শে ব্যাপারেও কার্যকরী হতে পারে। বিধানসভায় রাজ্যভাগ নিয়ে প্রস্তাব এনে মায়া বিধায়কদের উদ্দেশে হুইপ জারি করতে পারেন। আর মুলায়মরা প্রথম দিন থেকে বিরোধিতা করে বিধানসভার স্বাভাবিক কাজ ভেস্তে দিলে তো কথাই নেই।
কিন্তু প্রশ্ন হল, রাজ্যকে চার ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দিয়ে মায়াবতীর উদ্দেশ্য কতটা সিদ্ধ হতে পারে? এমনিতে তিনি যে বেশ স্বস্তিতে নেই, তা তাঁর নিত্যদিনের ঘোষণাতেই স্পষ্ট। সবচেয়ে বড় কথা হল, রাজ্য ভাগ নিয়ে উত্তরপ্রদেশে এই মুহূর্তে কোনও আন্দোলন চলছে না। ফলে রাজ্য ভাগের সিদ্ধান্ত কতটা সুফল দেবে, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই গেল।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.