|
|
|
|
তিস্তার জল নিয়ে আজ মমতার কাছে দীপু মণি |
নিজস্ব সংবাদদাতা • দিল্লি ও কলকাতা |
তিস্তার জল গড়াচ্ছে। আজ, বুধবার কলকাতায় বৈঠকে বসতে চলেছেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী দীপু মণি।
মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, বেঙ্গালুরুতে একটি সম্মেলনে অংশ নিতে ভারতে এসেছেন দীপু মণি। সেখান থেকেই সকাল সাড়ে ১১টায় কলকাতায় পৌঁছবেন তিনি। থাকবেন ধর্মতলার একটি পাঁচতারা হোটেলে। এর পর বিকেল ৫টায় মহাকরণে যাবেন মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে। সরকারি ভাবে বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর সঙ্গে পশ্চিমঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর এই সাক্ষাৎকারকে ‘সৌজন্যমূলক’ বলে জানানো হয়েছে। কিন্তু প্রশাসনিক সূত্রের খবর, তিস্তার জলবণ্টন সমস্যা নিয়েই প্রধানত আলোচনা করবেন দু’জনে। বৃহস্পতিবার সকালেই কলকাতা ছাড়ার কথা বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রীর।
গত সেপ্টেম্বরে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের ঢাকা সফরেই তিস্তা চুক্তিটি স্বাক্ষরের কথা ছিল। কথা ছিল, সেই অনুষ্ঠানে মুখ্যমন্ত্রীও উপস্থিত থাকবেন। কিন্তু শেষ মুহূর্তে মমতার আপত্তিতে সেই চুক্তি স্থগিত রাখতে হয়। ঢাকাও যাননি তিনি। এখন কলকাতায় এসে বাংলাদেশের প্রথম মহিলা বিদেশমন্ত্রী এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে ওই চুক্তির বিষয়ে বুঝিয়ে-সুঝিয়ে নরম করার চেষ্টা করবেন বলেই মনে করা হচ্ছে।
মলদ্বীপে সদ্য সমাপ্ত সার্ক সম্মেলনের পার্শ্ববৈঠকে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ এবং দীপু মণির আলোচনায় স্বাভাবিক ভাবেই সর্বাধিক গুরুত্ব পেয়েছে তিস্তা জলচুক্তি। কূটনৈতিক সূত্রের খবর, তিস্তা চুক্তি নিয়ে ঐকমত্য গড়ে তুলতে ঘরোয়া স্তরে দিল্লি কী ভাবে এগোচ্ছে, তা শেখ হাসিনাকে সবিস্তার জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এই চুক্তি রূপায়ণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভূমিকাকে যে অগ্রাধিকার দিয়ে দেখা হচ্ছে, সে বিষয়টিও স্পষ্ট করেছেন প্রধানমন্ত্রী। এ ব্যাপারে তাঁকে কার্যত দূত হিসাবেই কাজে লাগাতে চাইছে কেন্দ্র। নয়াদিল্লি ঢাকাকে পরামর্শ দেয়, বাংলাদেশও কিছুটা উদ্যোগী হয়ে যোগাযোগ করুক তাঁর সঙ্গে। তার ফলে এই চুক্তির ভবিষ্যৎই উজ্জ্বল হবে। গতি পাবে গোটা প্রক্রিয়া।
হাসিনার সঙ্গে মমতার ব্যক্তিগত সম্পর্ক যথেষ্ট ভাল। স্বাভাবিক ভাবেই মনমোহন সরকারের এই পরামর্শ মেনে নিতে তিনি দ্বিধা করেননি। মলদ্বীপেই বিষয়টি নিয়ে দীপু মণির সঙ্গে আলোচনা হয়ে যায় তাঁর। এ দিন ‘ইন্ডিয়ান ওসান রিম অ্যাসোসিয়েশন ফর রিজিওনাল কো-অপারেশন’ (আইওআর-এআরসি)-এ যোগ দিতে বেঙ্গালুরুতে এসেছিলেন বাংলাদেশের বিদেশমন্ত্রী। স্থির হয়, তার পরের দিন অর্থাৎ আগামী কাল তিনি কলকাতা গিয়ে মমতার সঙ্গে বৈঠকে বসবেন।
তিস্তার জল প্রবাহের গোটা বিষয়টি নদী বিশেষজ্ঞ কল্যাণ রুদ্রকে খতিয়ে দেখতে বলেছেন মুখ্যমন্ত্রী। মুখ্যমন্ত্রীর দফতর সূত্রে খবর, আগামী কালের বৈঠকে মমতা দীপু মণিকে জানাবেন যে কল্যাণ রুদ্রের রিপোর্টের ভিত্তিতেই তিনি পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেবেন। তাঁর বক্তব্য, বাংলাদেশ জল পাক সেটা তিনিও চান। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গকে বঞ্চিত করে নয়। তাই সব দিক বিবেচনা করেই তিনি এগোচ্ছেন। প্রধানমন্ত্রীর সাম্প্রতিক বাংলাদেশ সফরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে জলঘোলা হওয়ার পর কেন্দ্র ঘরোয়া ভাবে স্বীকার করেছে যে তিস্তা চুক্তি মমতা মেনে নেবেনই, এমন একটা ‘আত্মসন্তুষ্টি’ এসে গিয়েছিল তাদের মধ্যে।
চুক্তিতে যে রাজ্যের আপত্তি থাকতে পারে, তা বোঝার ক্ষেত্রে খামতি ছিল। এখানেই শেষ নয়। এর পর তিনবিঘা সফরে যখন শেখ হাসিনা আসেন, তখন সেই অনুষ্ঠানে মমতাকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি। তবে রাজ্য সরকার বা ঢাকা কেউই বিষয়টি নিয়ে বিতর্ক বাড়াতে চায়নি। মলদ্বীপ থেকে ফেরার সময়েও বিমানে প্রধানমন্ত্রী জানান, তিস্তা জলচুক্তি নিয়ে ঘরোয়া স্তরে আলাপ-আলোচনা চলছে। এর জন্য প্রয়োজনীয় সময়টুকু দরকার।
এই চুক্তি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রাজনৈতিক ভবিষ্যতের জন্যও খুবই জরুরি। হাসিনা সরকারও বুঝেছে যে মমতার সঙ্গে আলোচনা করে এগোনোটাই কাজের হবে।
অন্য দিকে দিল্লিও বুঝছে, মমতাকে এড়িয়ে তিস্তার জলবণ্টন নিয়ে কোনও সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করাসম্ভব নয়। তাই নিবিড় বোঝাপড়ার মাধ্যমেই এগোতে চাইছে দিল্লি ও ঢাকা। এই গোটা প্রক্রিয়ায় প্রধান ভূমিকা নিয়েছেন ভারতের পক্ষে বিদেশসচিব রঞ্জন মাথাই এবং নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশের হাই কমিশনার তারিক করিম। |
|
|
|
|
|