|
|
|
|
ছত্তীসগঢ়ে অবশ্য ‘চরম’
হুমকি মমতাকে
নিজস্ব সংবাদদাতা • নয়াদিল্লি |
 |
|
জঙ্গলমহলে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পর পর ‘রাজনৈতিক কর্মসূচি’-তে ভয় পেয়েই মাওবাদীরা তৃণমূল কর্মীদের নিশানা করছে বলে মনে করছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। সেই কারণেই সুদূর ছত্তীসগঢ়ের মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকায় পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে ‘চরম হুমকি’ দিয়ে পোস্টার পড়েছে। মাওবাদী এলাকা সফরের সময় মমতার নিরাপত্তা নিশ্ছিদ্র করার ব্যাপারে তাই ফের রাজ্য সরকারকে সতর্ক করেছে কেন্দ্র।
এক এক করে সমস্ত মাওবাদী অধ্যুষিত রাজ্যের পরিস্থিতি পর্যালোচনা করার কাজ শুরু করেছেন কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী পি চিদম্বরম। গত সপ্তাহে তিনি ওড়িশা ও ঝাড়খণ্ড ঘুরে এসেছেন। আজ তিনি ছত্তীসগঢ়ে। সেখান থেকে যাবেন মহারাষ্ট্রে। অন্য দিকে, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রসচিব রাজকুমার সিংহ বিহারে গিয়ে পরিস্থিতির পর্যালোচনা করেছেন। ২১ নভেম্বর চার দিনের সফরে দিল্লি আসবেন মমতা। তখন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বৈঠকে মাওবাদী সমস্যা নিয়েও আলোচনা হবে। ডিসেম্বর-জানুয়ারি মাসে চিদম্বরম বা স্বরাষ্ট্রসচিবের পশ্চিমবঙ্গে যাওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে।
এরই মধ্যে ছত্তীসগঢ় থেকে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দারা রিপোর্ট দিয়েছেন, পশ্চিমবঙ্গে যৌথ বাহিনীর অভিযান নতুন করে শুরু হওয়ায় ক্ষুব্ধ মাওবাদীরা পোস্টার দিয়ে হুঁশিয়ারি দিয়েছে, এর চরম ফল ভোগ করতে হবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে। এই ধরনের পোস্টার এর আগেও জঙ্গলমহলে পড়েছে। কিন্তু ছত্তীসগঢ়ের পোস্টারকে দু’টি কারণে গুরুত্ব দিচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। প্রথমত, এই হুমকি রাজ্য সরকারের বিরুদ্ধে দেওয়া হয়নি, ব্যক্তিগত ভাবে মমতার নাম করে দেওয়া হয়েছে। দ্বিতীয়ত, ছত্তীসগঢ় এখনও মাওবাদী সংগঠনের স্নায়ুকেন্দ্র। সেখানে আবুঝমাঢ় জঙ্গলেই মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব ঘাঁটি গেড়ে আছেন বলে মনে করা হয়। তাই এই হুমকিকে মাওবাদীদের কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের হুমকি হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক মনে করছে, বিহারে নীতীশ কুমারের ‘সেবা যাত্রা’ ও মমতার জঙ্গলমহল সফরের ফলে মাওবাদীদের প্রভাব কমতে শুরু করেছে। গত কয়েক মাসে মমতা একাধিকবার রাজ্যে মাওবাদী অধ্যুষিত এলাকাগুলিতে গিয়ে সভা করেছেন। মাওবাদীদের সরাসরি হুঁশিয়ারি দেওয়ার পাশাপাশি উন্নয়নের অস্ত্রে তাদের সাধারণ মানুষের থেকে বিচ্ছিন্ন করার কৌশল নিয়েছেন। শুভেন্দু অধিকারীর মতো তৃণমূল নেতারাও বারবার ওই এলাকায় গিয়ে রাজনৈতিক প্রচার করছেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের নকশাল দমন বিভাগের কর্তাদের বিশ্লেষণ, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা ভোটের পর থেকে জঙ্গলমহলে একটা ‘রাজনৈতিক শূন্যস্থান’ তৈরি হয়েছিল। যার সুযোগ নিয়েছিল মাওবাদীরা। কিন্তু নতুন রাজ্য সরকার তথা তৃণমূলের তরফে পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া ও বাঁকুড়ায় ফের ‘রাজনৈতিক তৎপরতা’ শুরু হয়ে যাওয়ায় মাওবাদীরা ভয় পেয়েছে। উন্নয়ন বা যৌথ অভিযানের থেকেও রাজনৈতিক কর্মসূচিকে বেশি ভয় পায় তারা। সেই কারণেই মমতার সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে গত কাল বলরামপুরে মাওবাদীরা হামলা চালায় বলে মনে করা হচ্ছে।
জঙ্গলমহলে যৌথ অভিযানে নয়া যে রণকৌশল নেওয়া হয়েছে, তাতেও সন্তুষ্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। আগের মতো এখন আর গোটা গ্রাম ঘিরে অভিযান হচ্ছে না। নির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হচ্ছে। গ্রাম ঘিরে অভিযানে নিরীহ গ্রামবাসীরা হেনস্থা হতেন। তার ফলে মাওবাদীরাও সরকারের বিরুদ্ধে পাল্টা প্রচার চালানোর সুযোগ পেয়ে যেত। মমতা ক্ষমতায় আসার পরে জঙ্গলমহলে অভিযান কার্যত বন্ধ হয়ে যাওয়ায় যথেষ্ট ক্ষোভ তৈরি হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকে। একই ভাবে নীতীশ কুমারও পুলিশি অভিযানকে বিশেষ গুরুত্ব না দেওয়ায় মন্ত্রকে উদ্বেগ ছড়িয়েছিল। কিন্তু মন্ত্রকই দুই প্রতিবেশী রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রীকে এখন তাঁদের রাজনৈতিক উদ্যোগের জন্য সাধুবাদ জানাচ্ছে।
|
এই সংক্রান্ত অন্য খবর •
বলরামপুরে পথ আটকে যৌথ বাহিনীর গুলি, হত দুই মাওবাদী
|
|
|
 |
|
|