শনিবার রাত সাড়ে ১১টা। পাঁচ নম্বর সেক্টর এবং নিউ টাউনের সংযোগকারী সেতুর উপর থেকে তীব্র গতিতে সল্টলেকে ঢুকে পড়ল একটি বোলেরো গাড়ি। সেই গাড়িতে কে বা কারা আছেন, তা দেখার লোক নেই। রয়েছে একটি মাত্র পুলিশ-কিয়স্ক। তবে, তা ঘুটঘুটে অন্ধকার।
রাত ১২টা। একই ছবি বেলেঘাটা-চিংড়িঘাটা মোড়ে। ই এম বাইপাসের দিক থেকে উড়ালপুল ধরে একের পর এক গাড়ি সল্টলেকে ঢুকছে। কেউ নেই সেগুলির উপরে নজরদারি করার। যে সব গার্ডরেল পথে দাঁড় করিয়ে গাড়ি পরীক্ষা করার কথা, সেগুলি রাস্তার একপ্রান্তে সারি দিয়ে দাঁড় করানো। |
রাত সাড়ে ১২টা। পরিবেশ ভবনের সামনে পুলিশ-গুমটিতে দুই পুলিশকর্মী বসেছিলেন। কিন্তু সামান্য দূরে গাড়ির ‘প্রেস’ লেখা বোর্ড খুলে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকলেও গুমটি থেকে বেরিয়ে কেউ কিছু জানতেই চাইলেন না।
রাত ১টা। সল্টলেকের অন্যতম প্রবেশপথ দু’নম্বর গেট। পুলিশের টহলদার ভ্যান দাঁড়িয়ে রয়েছে। কিন্তু গাড়ির ভিতরে পুলিশকর্মীরা নিদ্রামগ্ন। সামনে দিয়ে বেরিয়ে গেল দু’-তিনটে গাড়ি। দু’টি মোটরবাইকে কয়েক জন তরুণ-তরুণী সেই গাড়ির সামনে দিয়েই উদ্দাম ভাবে বেরিয়ে গেলেন। মাথায় হেলমেটের বালাই নেই। সল্টলেকের বিভিন্ন রাস্তায় দু’-তিন জনকে নিয়ে তীব্র গতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে এ রকম বেশ কিছু মোটরবাইক।
ব্লকের ভিতরেও কার্যত একই চিত্র। রাত দেড়টা নাগাদ, ই ই ব্লকের ভিতরে কোনও রকম নিরাপত্তারক্ষীর ঘোরাফেরা কিংবা পুলিশের টহলদারি চোখে পড়ল না। আবার এক নম্বর সেক্টরের বি এ ব্লকে দেখা গেল, মশা তাড়ানোর ধূপ জ্বালিয়ে নিশ্চিন্তে ঘুমোচ্ছেন ব্লকের নিরাপত্তারক্ষী। রাতে তিন ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সল্টলেকের রাস্তায় ঘুরে তিনটির বেশি পুলিশের গাড়ি চোখে পড়েনি।
সল্টলেক হোক কিংবা শিল্পতালুক, সব জায়গাতেই ছবিটা প্রায় এক রকম। পুলিশের দেখা প্রায় নেই বললেই চলে। কেষ্টপুর খালের ধারে বৈশাখী অঞ্চলে সাহা ইনস্টিটউট অফ নিউক্লিয়ার ফিজিক্সের কাছে অবশ্য পুলিশের জিপ দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। কিন্তু কেষ্টপুর খালের ধারে এ এ ব্লক থেকে শরৎ আবাসন কিংবা ইস্টার্ন ড্রেনেজ খাল লাগোয়া ই ই ব্লক থেকে টানা কেবি-কেসি ব্লক পর্যন্ত ঘুরেও পুলিশের গাড়ি অথবা মোটরসাইকেলে পুলিশি টহলদারি দেখা যায়নি। পুলিশ সূত্রে খবর, এই সব নিয়ে পুলিশের বিভিন্ন স্তরে আলোচনা হয়েছে। তার ভিত্তিতেই বিধাননগরের ক্ষেত্রে হাওড়ার মতো কমিশনারেট করার চিন্তাভাবনা হচ্ছে।
ক’মাস আগেই চোর-ডাকাতের উপদ্রব সল্টলেকের পুলিশ প্রশাসনের ঘুম কেড়ে নিয়েছিল। তখন পুলিশকর্মী তো বটেই, রাতপাহারার কাজে রাস্তায় নামেন সল্টলেকের পুলিশকর্তারাও। কিন্তু শনিবার রাতে সল্টলেকের বিভিন্ন ব্লক কিংবা প্রবেশপথগুলি ফের প্রমাণ করল, কোনও ঘটনা ঘটলে তবেই প্রশাসনের তৎপরতা বাড়ে।
দীর্ঘদিন ধরেই সল্টলেকে পুলিশকর্মীদের অপ্রতুলতা নিয়ে সরব বাসিন্দারা। কিন্তু জেলা পুলিশকর্তারা তা মানতেন না। তবে আবাসিকদের দাবি যে ঠিক, কার্যত তা মেনে নেন স্বয়ং রাজ্য পুলিশের আইজি (দক্ষিণবঙ্গ) সঞ্জয় মুখোপাধ্যায়। তবে সেই সমস্যার সমাধানে ইতিমধ্যেই পুলিশকর্মী বাড়ানোর জন্য রাজ্য সরকারের কাছে যে আবেদন করা হয়েছে, তা-ও জানান আইজি। |
সঞ্জয়বাবু বলেন, “আবেদনের ভিত্তিতে পুলিশকর্মীর সংখ্যা বেড়েছে। তবে পুরোটা একবারে হবে না। পর্যায়ক্রমে হবে।” গভীর রাতে টহলদারি প্রসঙ্গে পুলিশকর্তাদের দাবি, বিভিন্ন অপরাধের ‘ময়না-তদন্ত’ করে তাঁরা মনে করছেন, সন্ধ্যা ও ভোরেই অপরাধ বেশি হচ্ছে। ফলে সল্টলেকে টহলদারির সময় পাল্টে জোর দেওয়া হয়েছে সন্ধ্যা ও ভোরের দিকে।
আইজি বলেন, “সল্টলেকের বিভিন্ন অপরাধের ঘটনা পর্যালোচনা করে দেখা গিয়েছে, ভোরের দিকে বা সন্ধ্যায় নজরদারি করলে ফল পাওয়া যাচ্ছে। তাই ঠিক জায়গায় ঠিক সময়ে এই সংখ্যক পুলিশ দিয়েই পরিকল্পনা সফল করার চেষ্টা হচ্ছে। তা কাজেও আসছে। পুজোর পর থেকে সল্টলেকে অপরাধের ঘটনা কমেছে। আগামী দু’তিন মাসে আরও উন্নতি হবে।” পাশাপাশি, এলাকাবাসীর সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতেও পরিকল্পনা নেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।
পুলিশকর্মীদের বক্তব্য, চারটে থানা আছে। অথচ, কর্মী ও গাড়ি দুয়েরই অবস্থা তথৈবচ। এই নিয়েই খেলা, ভিআইপি ডিউটি, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান কিংবা বিক্ষোভ সবই সামলাতে হচ্ছে তাঁদের। সল্টলেকে ৩০টি প্রবেশপথ রয়েছে। ফলে রাতে সর্বত্র নজরদারি রাখা সম্ভব হয় না।
|