বেহাল রাস্তার পূর্ণাঙ্গ সংস্কারের পরিবর্তে প্রলেপ পড়েছে। কিন্তু তাও খাপছাড়া ভাবে। দুর্ঘটনা, ছিনতাই, লুঠপাটের জন্য কুখ্যাত এই রাস্তাই কল্যাণী এক্সপ্রেসওয়ে। রাস্তা খারাপের সুযোগে অসামাজিক কার্যকলাপ নিয়ে পুলিশের কাছে অভিযোগও ছিল বিস্তর। দীর্ঘদিন পরে রাস্তা সারাতে প্রশাসন উদ্যোগী হলেও কল্যাণী থেকে সোদপুর পর্যন্ত বহু জায়গাই এখনও ভাঙা থেকে গিয়েছে।
ওই রাস্তায় যাতায়াতকারী যানচালক, পথচারীদের অভিযোগ, বেছে বেছে সেই সব জায়গাগুলি সারানো হয়নি, যেখানে বেশি রাতে গাড়ি দাঁড় করিয়ে ছিনতাই করা হয়। কোথাও কোথাও ভাঙার মাত্রা এতটাই বেশি যে ছোট গাড়ির মেঝে পর্যন্ত রাস্তায় ঠেকে যাচ্ছে। এক-দেড় কিলোমিটার এমন অবস্থার পরে ফের বেশ কিছুটা অংশ সারানো হয়েছে। ব্যারাকপুর-কল্যাণী শিল্পাঞ্চলের পুলিশ প্রশাসনও বিষয়টি নিয়ে উদ্বিগ্ন। পুলিশের টহলদারি বাহিনীর অফিসারেরাও জানিয়েছেন, যে জায়গাগুলি দুর্ঘটনাপ্রবণ বা এর আগে বেশ কয়েকবার ছিনতাইয়ের চেষ্টা হয়েছে সেই জায়গাগুলি বেছে বেছে রাস্তা সারানো হয়নি। |
নিয়ম অনুযায়ী, ভাঙা রাস্তার পুরো অংশই সারানোর কথা। এক্ষেত্রেও কেএমডিএ রাস্তার জন্য টাকা অনুমোদন করলেও রাস্তা সারানোর কাজ ঠিকমতো হয়নি বলে অভিযোগ করেছেন খোদ এই রাস্তায় কর আদায়ের দায়িত্বে থাকা ঠিকাদার সংস্থা। বেসরকারি ওই সংস্থার ম্যানেজার সুনীলকুমার মাহাতো বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে ভাঙা রাস্তা ভালভাবে সংস্কার না করার জন্য কর আদায় করতে গিয়ে আমরা গাড়ি চালকদের ক্ষোভের মুখে পড়ছি। রাস্তা সারানোর প্রতিশ্রুতি দিয়ে কর আদায় করা হলেও যখন রাস্তা সারানো হচ্ছে তখন দেখা যাচ্ছে বহু জায়গা বাদ চলে গিয়েছে। যেমন বীজপুরে টোল প্লাজার কাছেই রাস্তা খুবই খারাপ। তা সত্ত্বেও কর দিয়ে ভাঙা রাস্তা পেরিয়ে যেতে হচ্ছে চালকদের।’’ পরে অবশ্য সুনীলবাবু বলেন, ‘‘রাস্তা সারানোর জন্য এলাকা ভাগ করে ঠিকাদারদের বরাত দেওয়া হয়েছিল। তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁরা টাকার সমস্যার কথা বললেও অবিলম্বে যাতে রাস্তার ভাঙা অংশ সারানো হয় সেদিকে নজর দিতে বলেছি। কারণ গাড়ির চালকদের ক্ষোভ-বিক্ষোভের মুখে পড়তে হচ্ছে আমাদের কর্মীদেরই। কেএমডিএ কর্তৃপক্ষকেও বিষয়টি জানিয়েছি।’’
নিমতা, ঘোলা, খড়দহ, জগদ্দল, নৈহাটি ও বীজপুরের কিছু অংশে রাস্তার খারাপ অবস্থা নিয়ে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারাও। দিন কয়েক আগে বীজপুরে এই রাস্তাতেই সাইকেল আরোহী এক স্কুলছাত্র ও তার বাবাকে পিছন থেকে একটি ট্রাক ধাক্কা দেওয়ায় ছাত্রটি মারা যায়। রাস্তা খারাপের পাশপাশি ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। এই এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন কল্যাণীর বাসিন্দা তপন দাস। তিনি বলেন, ‘‘একটা গুরুত্বপূর্ণ রাস্তা নিয়ে যেন ছেলেখেলা চলছে। একটু সারানো হচ্ছে। আবার ভেঙে যাচ্ছে। পাকাপাকি কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না। ক্রমাগত দুর্ঘটনা ঘটলেও প্রশাসন উদাসীন। টোল প্লাজা নিজেদের মতো করে কর আদায় করছে। রাস্তা নিয়ে সাধারণ মানুষের সমস্যার দিকে কারও নজর নেই।’’ |