|
|
|
|
|
নিশানা ব্যাঙ্ক |
কর্মীর চাহিদা বিপুল। তাই জোগান বাড়াতে প্রস্তুত বেশির ভাগ ব্যাঙ্ক। রাষ্ট্রায়ত্ত হোক বা বেসরকারি,
ব্যাঙ্কে চাকরির পথটা ঠিক কী রকম, জানাচ্ছেন কৌলিক ঘোষ ও গার্গী মজুমদার। |
সময় দ্রুত বদলায়। অমোঘ সত্যিটা আরও একবার অনুভব করাল রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে চাকরির পরীক্ষা। মাত্র ১০-১১ বছর আগের কথা। হত্যে দিয়ে বসে থাকতে হত ব্যাঙ্কিং সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের (বিএসআরবি) পরীক্ষার ফর্ম বেরনোর অপেক্ষায়। প্রতি বার আলাদা করে আবেদনপত্র তোলা, জমা দেওয়া, আলাদা পরীক্ষা। প্রতি সপ্তাহে বা ১৫ দিন অন্তর ছোটা পরীক্ষা দিতে। অনেকের মনেই তাজা সেই স্মৃতি। তার পর গত বছর তিনেক ধরে প্রয়োজন অনুযায়ী নিয়োগের পরীক্ষা নিয়েছে ব্যাঙ্কগুলি নিজেরাই। কিন্তু অন্য অনেক কিছুর মতোই বদলে যাওয়া সময়ের হাত ধরে সম্প্রতি বড়সড় পরিবর্তন ঘটে গেল বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের নিয়োগ প্রক্রিয়াতে।
|
ব্যাঙ্কিং সার্ভিস রিক্রুটমেন্ট বোর্ডের জমানা শেষ। নতুন যুগ শুরু ইনস্টিটিউ অফ ব্যাঙ্কিং পার্সোনেল সিলেকশন (আই বি পি এস)-এর হাত ধরে। এ বার থেকে বেশির ভাগ রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের খালি পদ ভর্তি করতে আই বি পি এস-ই ম্যানেজমেন্ট প্রবেশিকা ‘ক্যাট’ বা ‘জিম্যাট’-এর ধাঁচে পরীক্ষা নেবে দেশ জুড়ে। আই বি পি এস সূত্রের খবর, বস্তুত এই প্রবেশিকার মাধ্যমে তারা ব্যাঙ্কগুলির সামনে তুলে ধরবে যোগ্য প্রার্থীদের। পরীক্ষায় পাওয়া নম্বরের ভিত্তিতেই তাঁদের চিহ্নিত করে দেওয়া হবে ‘স্কোর কার্ড’। যা এক বছর বৈধ হিসেবে গণ্য হবে। এবং এই ‘স্কোর কার্ড’ প্রাপ্তদের মধ্যে থেকেই বছরভর প্রয়োজন মাফিক কর্মী বেছে নেবে ব্যাঙ্কগুলি। অর্থাৎ যখন লোক নেওয়ার দরকার পড়বে, তখন বিজ্ঞপ্তি জারি করবে ব্যাঙ্কগুলি। আবেদন করতে পারবেন আই বি পি এস-এর পরীক্ষার স্কোর কার্ড থাকলে। এর পর ব্যাঙ্কের নিজস্ব ইন্টারভিউ বা গ্রুপ ডিসকাশনের বাধা টপকাতে পারলেই চাকরি পাকা।
ব্যাঙ্কগুলিতে প্রচুর মানবসম্পদ লাগবে এখন। ক্লার্ক স্তর থেকে অফিসার, চাহিদা সর্বত্র। বিভিন্ন ব্যাঙ্কিং সূত্রে খবর, এই অর্থবর্ষে অর্থাৎ আগামী মার্চের মধ্যেই ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কে প্রায় ৪৫ হাজার শূন্যপদ পূরণ করা হবে। আর আই বি পি এসের নিজস্ব হিসেবে আগামী পাঁচ বছরে ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে চাকরি পাবেন ৭.৫ লক্ষ ছেলেমেয়ে। পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ করা হবে ‘ক্লার্ক’, ‘এন্ট্রি-লেভেল অফিসার’ ও ‘স্পেশ্যালিস্ট অফিসার’ পদে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে খবর, বছরে দু’বার ক্লার্ক ও দু’বার অফিসার নিয়োগের পরীক্ষা নেওয়ার কথা আই বি পি এস-এর।
|
আগে এক বার অফিসার নিয়োগের পরীক্ষা হয়েছে। এ বার রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কগুলিতে কয়েক হাজার ক্লার্ক নিযুক্তির জন্য লিখিত পরীক্ষার দিন ঘোষণা করেছে আই বি পি এস। আগামী ২৭ নভেম্বর। খুব শীঘ্রই আরও একটি পরীক্ষার বিজ্ঞপ্তি বেরোবে বলে মনে করছে সংশ্লিষ্ট মহল। এর জন্য এমপ্লয়মেন্ট নিউজে নজর রাখা জরুরি। পরীক্ষার খবর, আবেদনপত্র, পরীক্ষার কল লেটার-সহ সব কিছু মিলবে আই বি পি এস-এর www.ibps.in ওয়েবসাইটেও। আবেদনপত্র জমাও হবে ওয়েবসাইট থেকেই।
আপাতত চলছে ক্লার্কশিপ পরীক্ষার প্রস্তুতি। যাঁরা আবেদনপত্র জমা দিয়েছেন, তাঁদের তৎপরতা তুঙ্গে। ৬০% নম্বর নিয়ে দশম পাশ, ৫০% নম্বর-সহ ১০+২ পাশ ও স্নাতকরা পরীক্ষায় বসতে পারছেন। বয়স হতে হবে ১৮-২৮। তফসিলি জাতি, উপজাতি, এক্স আর্মি, অন্য অনগ্রসর জাতিদের জন্য সব ক্ষেত্রেই ছাড় আছে। আইনত আলাদা অথচ পুনর্বিবাহ করেননি এমন বিধবা-বিবাহ বিচ্ছিন্না মহিলাদেরও বয়সে ছাড় আছে।
|
ক্লার্ক পদে চাকরির জন্য আই বি পি এস যে সমস্ত বিষয়গুলির উপর পরীক্ষা নেবে, সেগুলি হল: টেস্ট অফ রিজনিং, ইংরেজি, নিউমেরিক্যাল এবিলিটি, সাধারণ জ্ঞান (ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রের উপর বিশেষ জোর থাকবে) এবং কম্পিউটার জ্ঞান। অর্থাৎ বিষয় পাঁচটি। প্রত্যেকটি বিষয়ে ৫০ নম্বরের ৫০টি করে প্রশ্ন থাকবে। অর্থাৎ ১৫০ মিনিটে (আড়াই ঘন্টা) এক নম্বর করে ‘অবজেকটিভ মাল্টিপল চয়েজ’ ধরনের মোট ২৫০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। ইংরেজি ও হিন্দি দু’ভাষাতেই থাকবে প্রশ্ন। লিখিত পরীক্ষায় প্রতিটি বিষয়ে ন্যূনতম পাশ নম্বর পেলে মিলবে স্কোর কার্ড।
|
পরীক্ষার জন্য ঠিক পথে নিজেকে তৈরি করতে হলে আগে জানতে হবে কী ধরনের প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে, জানালেন ব্যাঙ্কিং পরীক্ষার প্রশিক্ষণ প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ব্যাঙ্কিং অ্যান্ড সার্ভিসেস (আই আই বি এস)-এর ডিরেক্টর সুব্রত কুমার মণ্ডল। সেই দিশা দিতেই নির্দিষ্ট পাঁচটি বিষয়ের কোনটিতে কী প্রশ্ন ধরনের করা হবে তারও ধারণা দিলেন তিনি। যেমন
১) টেস্ট অফ রিজনিং-এর মধ্যে থাকবে কোডিং অ্যান্ড ডিকোডিং, ম্যাথেমেটিক্যাল অ্যান্ড লজিক্যাল ডায়াগ্রামস, ভার্বাল অ্যান্ড নন-ভার্বাল, কম্পারিজন অফ র্যাঙ্ক, লজিক্যাল অ্যালফাবেট নাম্বার অ্যান্ড টাইম ফ্রিকোয়েন্স, অ্যানালিটিক্যাল রিজনিং।
২) টেস্ট অফ ইংলিশ ল্যাঙ্গুয়েজ-এ থাকবে ইংরেজি ব্যাকরণ, বাক্য সংশোধন, সমার্থক শব্দ, বিপরীতার্থক শব্দ ইত্যাদি।
৩) টেস্ট অফ নিউমেরিক্যাল এবিলিটি-তে থাকবে দশমিক, বর্গ এবং ঘন, গড়, শতকরা, লাভ-ক্ষতি, অনুপাত-সমানুপাত, অংশীদার, চেনরুল, পাইপ ও সিস্টার্ন, সরল (সিম্পল) সুদ, চক্রবৃদ্ধি হারে (কম্পাউন্ড) সুদ, ক্ষেত্রফল, প্রবলেম্স অফ নাম্বার, সার্ডস অ্যান্ড ইন্ডিসিস ইত্যাদি।
৪) টেস্ট অফ জেনারেল অ্যাওয়ারনেস বা সাধারণ জ্ঞান (ব্যাঙ্কিং ক্ষেত্রে যেখানে বিশেষ জোর দেওয়া হবে)-এর মধ্যে থাকতে পারে আশেপাশের যে কোনও বিষয়ই।
৫) টেস্ট অফ কম্পিউটার নলেজে থাকবে কম্পিউটারের ইতিহাস ও তার বিভিন্ন ‘জেনারেশন’ সম্পর্কে তথ্য, কম্পিউটার সিস্টেমের শ্রেণিবিভাগ, কম্পিউটার পরিভাষা বা টার্মিনোলজি, সফটওয়্যার, এমএস-ডস এবং এমএস-অফিসের প্রাথমিক জ্ঞান, ইন্টারনেটের ইতিহাস, ফাইল ম্যানেজমেন্ট কম্যান্ডস ইত্যাদি।
|
যে ১৯টি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের জন্য পরীক্ষা হবে |
|
• এলাহাবাদ ব্যাঙ্ক
• অন্ধ্র ব্যাঙ্ক
• ব্যাঙ্ক অফ বরোদা
• ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
• ব্যাঙ্ক অফ মহারাষ্ট্র
• কানাড়া ব্যাঙ্ক
• সেন্ট্রাল ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
• কর্পোরেশন ব্যাঙ্ক
• দেনা ব্যাঙ্ক
• ইন্ডিয়ান ব্যাঙ্ক |
• ইন্ডিয়ান ওভারসিজ ব্যাঙ্ক
• ওরিয়েন্টাল ব্যাঙ্ক অফ কমার্স
• পঞ্জাব ন্যাশনাল ব্যাঙ্ক
• পঞ্জাব অ্যান্ড সিন্ধ ব্যাঙ্ক
• সিন্ডিকেট ব্যাঙ্ক
• ইউকো ব্যাঙ্ক
• ইউনিয়ন ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া
• বিজয়া ব্যাঙ্ক
• ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়া |
|
ব্যাঙ্কের চাকরিতে এই মুহূর্তে প্রতিযোগিতা তীব্র। এই কারণে ছাত্রছাত্রীদের কয়েকটি বিষয় আগে থাকতেই খেয়াল রাখতে হবে মনে করেন ফ্রন্টলাইন ইনস্টিটিউট অফ কম্পিটেটিভ এগজামিনেশনের কর্ণধার ভাস্কর বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি জানালেন, অন্যান্য প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার তুলনায় আই বি পি এস-এর এই ‘কমন রিট্ন এগজামিনেশন্স’-এর ধরন অনেকটাই আলাদা। সফল হওয়ার জন্য ব্যাঙ্কিং, ফিনান্স এবং কম্পিউটারের যথোপযুক্ত জ্ঞান থাকা জরুরি। পাশাপাশি খুব কম সময়ের মধ্যে দ্রুত উত্তর করার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে। কারণ, আড়াই ঘণ্টায় ২৫০টি প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে। অর্থাৎ এক মিনিটের জন্য বরাদ্দ একটি উত্তর। এই পরীক্ষায় ‘নেগেটিভ মার্কিং’ আছে। একটি ভুল উত্তরের জন্য নম্বর কাটা যাবে এক চতুর্থাংশ। অনেকেই না জেনেবুঝে উত্তর দিয়ে দেয় প্রশ্নের। কিন্তু ভাল নম্বর পেতে ১০০% নিশ্চিত হওয়ার পর উত্তর দেওয়া উচিত। জানালেন ভাস্করবাবু।
পরীক্ষার্থীদের জন্য আইআইবিএস-এর কর্তা সুব্রতবাবুর পরামর্শ
• অনুশীলনের সময় প্রতিটি বিষয়ের আলাদা খাতা তৈরি করো
• সামনে ঘড়ি নিয়ে বসে সময় ধরে নিজে নিজেই পরীক্ষা দিয়ে নিজেকে যাচাই করো
• প্রতিদিন অন্তত একটি করে ইংরেজি সংবাদপত্র খুঁটিয়ে পড়ো
• ইন্টারনেট খুলে ব্যাঙ্কিং সংক্রান্ত বিভিন্ন তথ্য ডাউনলোড করে সাধারণ জ্ঞানের জন্য অনুশীলন করো
• আরও ভাল হয় বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিদের পরামর্শ নিতে পারলে
সুব্রতবাবুর কথায়, “লক্ষ লক্ষ প্রতিযোগীর সঙ্গে হাড্ডাহাড্ডি যুদ্ধে নামতে হবে। সেই কারণে প্রতিদিন অন্তত ৮ ঘন্টা করে প্রতি বিষয়ের নানান ধরনের প্রশ্ন নিয়ে অনুশীলন করতে পারলে সাফল্য আসবে।”
আর এক প্রশিক্ষণ প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান জর্জ স্কুল অফ কম্পিটেটিভ এগজামিনেশনের অভিজিৎ কুণ্ডু জানিয়েছেন যে, অঙ্ক করতেই বেশি সময় লেগে যায়। তাই অঙ্ক কী ভাবে সহজ পথে দ্রুত করা যায় (শর্টকাট মেথড) তা রপ্ত করা খুব জরুরি। |
(চলবে) |
|
খেয়াল রাখুন |
|
ওরিয়ন এডুটেক এনেছে এক বছরের স্নাতকোত্তর ‘ডিপ্লোমা ইন কর্পোরেট ম্যানেজমেন্ট’। ব্যাঙ্কিং, টেলিকম, রিটেল, বিমা, বিপিও, শিক্ষা ও ভোগ্যপণ্য-সহ যে কোনও শিল্পে কেরিয়ার গড়ার ক্ষেত্রেই কোর্সটি উপযোগী বলে দাবি কর্তৃপক্ষের। ইংরেজি কথোপকথন, সকলের সামনে নিজেকে উপস্থাপনের পদ্ধতি, ব্যক্তিত্ব বিকাশ, তথ্যপ্রযুক্তি ও জনসংযোগ, বিক্রি ও বিপণন সংক্রান্ত বিষয় পরিচালনা, ব্যবসা সংক্রান্ত সংযোগসাধন, শিষ্টাচার, কর্পোরেট রীতি, আর্থিক হিসেব-নিকেশ সামলানো, কোম্পানি আইন ইত্যাদির প্রশিক্ষণ দেওয়া হবে। ১০+২ উত্তীর্ণরা ভর্তি হতে পারবেন।
|
বিদেশের বেশ কিছু প্রতিষ্ঠানে স্নাতক, স্নাতকোত্তর বা বিজনেস ম্যানেজমেন্ট পড়ার আকর্ষণ এ দেশের পড়ুয়াদের কাছে অমোঘ। কিন্তু সে ক্ষেত্রে যে পরীক্ষার বেড়া পেরোতে হয়, তা নিয়ে কম-বেশি সন্ত্রস্ত থাকেন অনেকেই। তাই জিম্যাট, স্যাট, আই ই এল টি এস, টোয়েফেল ইত্যাদি পরীক্ষার প্রস্তুতি ও মেধাবী পড়ুয়াদের জন্য বৃত্তির ব্যবস্থা করল রোড্স অ্যাকাডেমি। অষ্টম শ্রেণি থেকেই পড়ুয়াদের মনে বিদেশে পড়ার আগ্রহ জাগানোর উদ্যোগও নিয়েছে রোড্স। দেখুন www.edroads.com ওয়েবসাইট। |
|
|
|
|
|