চব্বিশ ঘণ্টা আগেও যে দলের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসের অভিযোগ এনেছিলেন, সেই তৃণমূলের জেলা সভাপতি তাঁর বাড়িতে যেতেই রাগ গলে জল প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক তমসের আলির। এবং রাজ্য রাজনীতিতে যা কার্যত বেনজির, রবিবার সেই সৌজন্যেরও সাক্ষী থাকল তুফানগঞ্জ মহকুমার প্রত্যন্ত গ্রাম দেওচড়াই। তৃণমূলের জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ তমসের আলিকে বুকে জড়িয়ে ভরসা দিলেন। হাসি ফুটল আত্মহত্যার হুমকি দেওয়া প্রাক্তন সিপিএম বিধায়কের মুখে। |
এ দিন বাম শিবিরের দাপুটে নেতা, তমসের আলির সঙ্গে দেখা করেন বর্তমান তৃণমূল বিধায়ক রবীন্দ্রনাথবাবু। তিনি তমসেরকে বলেন, “আত্মহত্যা করার চিন্তা একদম মাথায় আনবেন না। দরকারে আমি নিজে এসে ধান, পাট কাটানোর ব্যবস্থা করব। আমরা রাজনৈতিক প্রতিহিংসায় বিশ্বাস করি না।” যা শুনে দৃশ্যতই আপ্লুত প্রাক্তন বিধায়ক বলে ফেললেন, “রাজনীতিতে হারজিত আছে। ভোটের পর এ সবের ইতি হওয়া উচিত। জ্যোতি বসু এবং সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় বিধানসভায় যতটা শত্রু ছিলেন, বাইরে ছিলেন ততটাই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। ব্যক্তিগত ভাবে আমরাও তেমন বন্ধু হতে পারি।” নাটাবাড়ি কেন্দ্রের দু’বারের বিধায়ক তমসের আলি এ বার বিধানসভা ভোটে রবীন্দ্রনাথবাবুর কাছে হেরে যান। অভিযোগ, এর পর থেকে দেওচড়াইয়ে তাঁকে বাড়িতে ঢুকতে বাধা দেওয়া, দিনমজুর না মেলায় চাষাবাদ ও মাছ চাষ শিকেয় ওঠা-সহ নানা রকম সমস্যায় পড়তে হয়। তৃণমূল কর্মীদের নামে সন্ত্রাসের অভিযোগ তুলে সরব হন তমসের। এমনকী ২ নভেম্বর জেলাশাসককে চিঠি দিয়ে প্রতিকারের আর্জি জানানোর পাশাপাশি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে আত্মহত্যার হুমকি দেন।
সংবাদ মাধ্যমে সমস্ত ঘটনা জানার পরে রবিবার প্রাক্তন বিধায়কের বাড়ি যান তৃণমূল জেলা সভাপতি। ঈদ-শুভেচ্ছা জানিয়ে যুযুধান দুই শিবিরের নেতা পরস্পরকে আলিঙ্গন করেন। ৫০ কেজি চাল, ৫ কেজি মুগ ডাল, ৫ কেজি সর্ষের তেল, নুন, সিমাই, লুঙ্গি, শাড়ি, পাজামা-পাঞ্জাবি ঈদের উপহার হিসাবে তুলে দেওয়া হয় তমসেরের হাতে। রবীন্দ্রনাথবাবুকে তমসের পুকুর, বিক্রি না হওয়া ধান, পাট খেত ঘুরিয়ে দেখান। মা, পুত্রবধূ-সহ পরিবারের সকলের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দেন। সেতু তৈরি, রাস্তা সংস্কার, গার্লস স্কুল তৈরির মতো বাম-আমলের অসম্পূর্ণ কাজে রবীন্দ্রনাথবাবু সহযোগিতা চাইলে তিনি প্রস্তুত বলেও জানিয়ে দেন প্রাক্তন সিপিএম বিধায়ক।
পরে জেলা তৃণমূল সভাপতি বলেন, “তমসের ভাইয়ের সমস্যা সরেজমিন দেখতে এসেছিলাম। দীর্ঘ দিন একটা দল ক্ষমতায় থাকায় এলাকায় ক্ষোভ রয়েছে। মুখ্যমন্ত্রীও বদলা, সন্ত্রাসের রাজনীতিতে বিশ্বাস করেন না। তাই রাজ্যে পরিবর্তনের পরেও গোলমাল হয়নি। ওঁর আর অসুবিধে হবে না।” তমসের আলি যা শুনে বলেছেন, “রবিবাবুর উদ্যোগে সমস্যা মিটলে খুব ভাল হবে।” |