স্কুলে নাট্যশিক্ষা কবে আসবে? |
বিদ্যালয় শিক্ষার আধার। তাই খুব স্বাভাবিক ভাবেই শিক্ষালাভের সমস্ত উপকরণই সেখানে বর্তমান থাকবে, এটাই দস্তুর। শিক্ষার্থীরা সমস্ত উপকরণগুলির নির্যাস আত্মীকরণ করবে এবং তার অধীত জ্ঞানের প্রয়োগে সমাজের অন্ধকার দূর হবে, তৈরি হবে নতুন নতুন সম্পদ বিদ্যালয় শিক্ষা প্রবর্তনের এটাই ছিল প্রাথমিক চিন্তাভাবনা। কিন্তু দেখা যাচ্ছে যে, প্রথাগত শিক্ষা ব্যবস্থায় শিক্ষার্থীদের জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে অন্যতম প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছে গতানুগতিক একঘেঁয়ে সিলেবাস। শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাকে আকর্ষণীয় করার নানান প্রয়াস আন্তরিক ভাবে অনুশীলনের মাধ্যমে প্রয়োগ করছেন, এটা বাস্তব। কিন্তু তবু কেন যেন কোনও কিছুর একটা কমতি। আর ঠিক এখানেই ‘থিয়েটার এডুকেশন’ বা ‘নাট্যশিক্ষা’-র প্রাসঙ্গিকতা। কেন? কারণ, অভিজ্ঞতা এমনটাই বলছে। |
দক্ষিণ দিনাজপুরের একটি স্কুল অযোধ্যা কে ডি বিদ্যানিকেতন। দেখা যাচ্ছে, টিফিন পিরিয়ডে বা স্কুল ছুটির পর ছাত্রছাত্রীদের ভিড় উপচে পড়ছে। তাদের যাবতীয় আকর্ষণ দোতলায় একটি হলঘরের প্রতি, কারণ সেখানেই যে চলছে নাট্যশিক্ষার কাজ ও মহড়া। একটু একটু করে ক্লাসপ্রতি নাটকে আগ্রহীদের ভিড় বাড়তে থাকে বাড়তেই থাকে। নাট্যদলে সুযোগ পেতে হলে ছাত্রছাত্রীদের নিয়মিত হাজিরা দিতে বলা হয়। তারা রাজি হয় এবং তা নিয়মিত মেনে চলে। (এখানে মনে রাখতে হবে, উক্ত ছাত্রছাত্রীদের সিংহভাগ স্কুলে অনুপস্থিত থাকত, এমনকি কয়েকজন প্রায় স্কুলছুটের পর্যায়ে চলে গিয়েছিল) এবং সব শেষে দেখা যায়, স্কুলের বার্ষিক পরীক্ষায় যে-সমস্ত ছাত্রছাত্রী নাট্যশিক্ষা নিয়েছিল, তাদের ফল অবিশ্বাস্য ভাবে ভাল হয়েছে। গত চার বছর থেকে অযোধ্যা কে ডি বিদ্যানিকেতনের এটাই রোজনামচা।
নাটকে তোদের এত আগ্রহ কেন? এই প্রশ্নের উত্তরে ছাত্রছাত্রীদের কেউ বলল, ওরা নাটকের সঙ্গে ওদের জীবনের মিল খুঁজে পাচ্ছে। কেউ বলল, পড়াশুনার মাঝে এই বিষয়টি একদম অন্য রকম, তাই ভীষণ ভাল লাগে। কেউ বলল, সবাই মিলে একসঙ্গে কাজ করতে খুব ভাল লাগছে। এই চিত্র দক্ষিণ দিনাজপুরের শহর গ্রামের অনেক স্কুলে। সেখানে নিয়মিত নাট্যচর্চা হয়। তবে শুধু দক্ষিণ দিনাজপুর নয়, উত্তরবঙ্গেরই অসংখ্য স্কুলে নাট্যপ্রেমী শিক্ষক-শিক্ষয়িত্রী নীরবে, আন্তরিক ভাবে এই অনুশীলন চালিয়ে যান। যেখানে ‘থিয়েটার’ একটা ‘থেরাপি’, সমগ্র পৃথিবীতেই থিয়েটার থেরাপির একটা সুচিন্তিত প্রয়োগ আছে। এই তো যেমন কিছু দিন আগে বিশ্ববিখ্যাত ব্রিটিশ ফুটবল খেলোয়াড় পল গাসকোয়েন থিয়েটার থেরাপির মাধ্যমেই ফিরে পেলেন নতুন জীবন, যা অন্ধকারে ডুবে গিয়েছিল।
বিদ্যালয়গুলিতে রয়েছে আমাদের ভবিষ্যৎ। ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে সহবত, মানবতার শিক্ষা প্রদান, স্কুলছুটদের স্কুলে টেনে আনতে এই অস্থির সময়ে নাট্যশিক্ষার প্রয়োগ বাঞ্ছনীয় নয় কি! এর মাধ্যমে কর্মসংস্থানের যে নতুন দিকটি উন্মোচিত হবে, সেটাও কিন্তু মানবতাবাদের আরেক দিক। সময়ের দাবির দিকে কর্তৃপক্ষ নজর দিন। |