বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল
ইমার্জেন্সিতে মদ্যপ ডাক্তার, ধুন্ধুমার
দ খেয়ে হাসপাতালে এসে রোগী দেখার অভিযোগ তাঁর বিরুদ্ধে ছিলই। দীর্ঘদিনের অভিযোগ।
আর এ বার সেটাই প্রত্যক্ষ ঘটনা হয়ে দাঁড়াল। রবিবার দুপুরে বাঘা যতীন স্টেট জেনারেল হাসপাতালের ইমার্জেন্সিতে ‘কর্তব্যরত’ সেই মদ্যপ চিকিৎসককে হাতে-নাতে ধরে ফেললেন রোগীরাই। যার জেরে এ দিন প্রায় চার ঘণ্টা বন্ধ থাকে হাসপাতালের কাজকর্ম। মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ওই চিকিৎসককে সাসপেন্ড করা হচ্ছে। মমতার মন্তব্য, “এটা ফৌজদারি অপরাধ। প্রয়োজনে ওঁকে গ্রেফতারও করা হতে পারে।”
প্রবীরকুমার ঘোষ নামে ওই চিকিৎসকের শরীরে মাদক আছে কি না, এ দিন বিকেলে এমআর বাঙুর হাসপাতালে তার পরীক্ষা হয়। প্রবীরবাবু নিজে অবশ্য স্বীকার করেছেন যে, তিনি মদ্যপান করেই ডিউটিতে এসেছিলেন। তাঁর কথায়, “গাঁটে গাঁটে ব্যথা হচ্ছিল। কাজের চাপে ছুটিও নিতে পারছিলাম না। তাই একটু খেয়ে ফেলেছি।” যা শুনে
প্রবীরকুমার ঘোষ
মুখ্যমন্ত্রীর প্রতিক্রিয়া, “এটা ব্যতিক্রমী ঘটনা। ওই চিকিৎসকের কোনও মানসিক অবসাদ থাকতে পারে। কিন্তু তার অর্থ এই নয় যে, তিনি মদ খেয়ে ডিউটিতে আসবেন। ডাক্তারের ঘাটতি রয়েছে, তা ঠিক। তবে বিকল্প ব্যবস্থা না-হওয়া পর্যন্ত আমাদের ধৈর্য ধরতেই হবে।” বাঙুর হাসপাতালের সুপার কাজলকৃষ্ণ বণিক জানান, রাতে এক জন মনোবিদ এবং জেনারেল মেডিসিনের এক চিকিৎসক রাতে প্রবীরবাবুকে পরীক্ষা করেন। তাঁর মৃগী রোগ আছে বলে চিকিৎসকদের জানিয়েছেন প্রবীরবাবু। তাঁকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। চিকিৎসক যে মদ্যপ, কী ভাবে তা বোঝা গেল?
হাসপাতাল-সূত্রের খবর: ঘটনার সূত্রপাত বেলা সাড়ে বারোটা নাগাদ। আজাদগড়ের শম্পা দাস স্বামীকে নিয়ে ইমার্জেন্সিতে গিয়েছিলেন। রিকশা থেকে পড়ে পায়ে চোট পেয়েছিলেন তাঁর স্বামী সমরবাবু। শম্পাদেবী জানাচ্ছেন, “ইমার্জেন্সিতে তখন ওই ডাক্তারবাবু। ওঁকে কেমন অপ্রকৃতিস্থ লাগছিল। এক মহিলা বলছিলেন, পেটের ডান দিকে ব্যথা। দেখি, ডাক্তারবাবু পরীক্ষা করছেন বাঁ দিকটা! পরে আমার স্বামীকে দেখাতে গিয়ে ওঁর মুখে মদের গন্ধ পেলাম।” শম্পাদেবীর অভিযোগ, ডাক্তারবাবু তাঁর স্বামীকে এত উপরে পা তুলতে বলছিলেন যে, ওঁর প্রায় পড়ে যাওয়ার মতো অবস্থা হয়!
পাশের রোগীরাও ততক্ষণে বুঝে গিয়েছেন, ডাক্তারবাবু মদ খেয়ে এসেছেন। হাসপাতাল-কর্মীদের জানানো হয়। খবর যায় পুলিশে। রীতিমতো ধুন্ধুমার বেধে যায়। রোগীরা সিদ্ধান্ত নেন, মিলিত ভাবে কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করবেন। তাঁরা দাবি তোলেন, স্বয়ং সুপারকে এসে তা জমা নিতে হবে। কিন্তু সুপার আসেননি। অরূপ কুণ্ডু নামের এক অভিযোগকারীর কথায়, “সুপার তো এলেনই না, এমনকী ফোনও ধরলেন না!”
ফলে ক্ষোভ আরও বাড়তে থাকে। উত্তেজিত রোগী ও তাঁদের পরিজনেরা প্রবীরবাবুকে ঘিরে রাখেন। পরে পুলিশ ও প্রশাসনের পদস্থ অফিসারেরা পৌঁছালে তাঁদের হাতেই অভিযোগপত্রটি জমা দেওয়া হয়। বিকেল চারটে নাগাদ দক্ষিণ ২৪ পরগনার ডেপুটি সিএমওএইচ(২) দেবাশিস হালদার হাসপাতালে যান। পৌঁছান আলিপুরের এসডিও তনভির আফজল। তাঁদের নির্দেশে পরীক্ষার জন্য প্রবীরবাবুকে নিয়ে যাওয়া হয় এমআর বাঙুরে। রাজ্যের স্বাস্থ্য-অধিকর্তা শ্যামাপদ বসাক বলেন, “বিভাগীয় তদন্ত শুরু হয়েছে। মাদক-পরীক্ষার রিপোর্ট পেলে পরবর্তী পদক্ষেপ করা হবে।”
রোগীদের তো অভিযোগ, কর্তৃপক্ষের চোখের সামনেই বাঘাযতীন স্টেট জেনারেলে দীর্ঘ দিন ধরে এই কাণ্ড চলছে! এত দিন কোনও ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি কেন?
হাসপাতালের সুপার বিকাশ মণ্ডল রাতে বলেন, “সবই মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল। লিখিত অভিযোগ পাইনি। তাই ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।” কিন্তু এ দিন এমন গুরুতর পরিস্থিতির খবর পেয়েও কেন হাসপাতালে এলেন না?
সুপারের জবাব, “আজ ছুটির দিন। তাই আসিনি।”
পরে পুলিশ-সূত্রে বলা হয়, ওই চিকিৎসক যে মদ্যপান করে আসতেন, হাসপাতাল-কর্তৃপক্ষ সে সম্পর্কে অবহিত ছিলেন বলে পুলিশকে জানিয়েছেন। কর্তৃপক্ষ পুলিশকে এ-ও জানিয়েছেন, ডাক্তারের সংখ্যা কম থাকায় ওঁর বিরুদ্ধে কোনও ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.