কেন্দ্রের দ্বারস্থ মমতা
শুল্কের বাধা কাটলেই বাঙালির
পাতে ইরাবতীর ইলিশ
বাঙালির রসনা এবং মায়ানমারের বড় ইলিশের মধ্যে বাধা এখন শুধু আমদানি শুল্ক।
মুখ্যমন্ত্রীর আর্জি মেনে কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী যদি সেই শুল্কের সুরাহা করেন, তা হলেই কেল্লা ফতে! ২০০ টাকা কিলোগ্রাম দরে মায়ানমারের দেড় থেকে দু’কেজি ওজনের তাজা ইলিশ পেতে পারে কলকাতা।
বাজার থেকে এই ওজনের ইলিশ বহু দিন আগেই অদৃশ্য। বাঙালির সেই রুপোলি দিন ফিরতেই পারে যদি কেন্দ্র একটু মুখ তুলে চায়। সরাসরি মায়ানমার থেকে ইলিশ আমদানির অনুকূল ব্যবস্থা করে দেওয়ার জন্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর্জি জানিয়েছেন কেন্দ্রীয় বাণিজ্যমন্ত্রী আনন্দ শর্মাকে।
মায়ানমারের ইরাবতী নদীর মোহনা থেকে ধরা ইলিশ কলকাতার মৎস্য ব্যবসায়ীরা কয়েক বছর ধরেই আমদানি করছেন। তবে তা মায়ানমারের তাজা ইলিশ নয়। তাঁরা জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে মায়ানমার মুলুক থেকে আমদানি করেন হিমায়িত ইলিশ। সেই ইলিশ আবার ঢুকে যায় হিমঘরে। তা কলকাতার বাজারে ছাড়া হয় এপ্রিল-মে মাসে, যখন ইলিশের প্রচণ্ড আকাল। বর্ষার আগে কয়েক মাস ইলিশ ধরা পড়ে না। তখন মায়ানমারের বড় ইলিশ প্রায় ৫০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয় কলকাতায়।
মহানগরীর ব্যবসায়ীরা এ বার মায়ানমারের তাজা ইলিশও আমদানি করতে চান। কিন্তু বাদ সাধছে চড়া আমদানি শুল্ক। ফিশ ইম্পোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অতুল দাস বললেন, “মায়ানমারে আমরা বরফ-জমাট ইলিশ পাইকারি দরে পাই ৭০ থেকে ৯০ টাকা কেজি। কিন্তু তার উপরে সব মিলিয়ে প্রায় ৩৫% আমদানি শুল্ক ধার্য করে শুল্ক দফতর। জাহাজে আনার খরচ বেশি নয়, প্রতি কেজি ১০ টাকা।”
গত বছর মায়ানমারের হিমায়িত ইলিশ আমদানি হয়েছিল ১০০ টন। অতুলবাবুর বক্তব্য, কেন্দ্র শুল্কের দিকটা বিবেচনা করলে ইয়াঙ্গন থেকে তাজা ইলিশ আমদানি করে অনেক সস্তায় বাঙালির পাতে দেওয়া সম্ভব। মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে মৎস্য ব্যবসায়ীরা স্বভাবতই খুশি। অতুলবাবু বলেন, “ইরাবতীর ইলিশের স্বাদ গঙ্গা বা পদ্মা-মেঘনার ইলিশের ধারেকাছে যাবে না। তবে খুব খারাপও নয়। ইরাবতীর আমদানিযোগ্য সব ইলিশই দেড় থেকে দু’কেজি। পশ্চিমবঙ্গে তো বটেই, বাংলাদেশেও এখন এত বড় ইলিশ দুর্লভ।” তাঁর বক্তব্য, মায়ানমারে তাজা ইলিশের দাম আরও কম। বাংলাদেশের মতো শুল্ক-ছাড় পেলে জাহাজের ভাড়া ও অন্য খরচ মিটিয়েও কলকাতার মানুষকে ২০০ টাকা কেজি দরে বড় ইলিশ খাওয়ানো সম্ভব।
গত বছর মমতা যখন রেলমন্ত্রী ছিলেন, তখন অ্যাসোসিয়েশন তাঁকে চিঠি দিয়ে মায়ানমারের ইলিশে শুল্ক ছাড়ের ব্যবস্থা করে দিতে আর্জি জানায়। অতুলবাবুরা অতীতে বামফ্রন্ট সরকারের কাছে বহু দরবার করেও ফল না-পেয়ে রেলমন্ত্রীর শরণাপন্ন হন। অতুলবাবুর আশা, “এ বার হয়তো মায়ানমারের তাজা ইলিশ আনা করা যাবে।” রাজ্যের মৎস্যমন্ত্রী আবু হেনা বলেন, “মুখ্যমন্ত্রী তো উদ্যোগী হয়েছেনই। এই ব্যাপারে মৎস্য দফতরের তরফে আরও কিছু করার থাকলে নিশ্চয়ই করব।”
বাংলাদেশ থেকে মূলত তাজা ইলিশই আমদানি করেন কলকাতার ব্যবসায়ীরা। সেই ইলিশে আমদানি বা অন্য কোনও শুল্ক লাগে না। কিন্তু ইলিশের উৎপাদন কমে যাওয়ায় এবং চাহিদা বাড়ায় বাংলাদেশে ইলিশের দাম বেড়েছে। ফলে কলকাতার ব্যবসায়ীরা লোকসানের ঝুঁকি কমাতে ও-পার থেকে অনেক কম ইলিশ আনছেন। কয়েক বছর আগেও ২০ হাজার টন ইলিশ আমদানি হয়েছে বাংলাদেশ থেকে। কিন্তু ইদানীং ছয় থেকে আট হাজার টনের বেশি আমদানি হচ্ছে না। তাতে কী হচ্ছে?
অতুলবাবু বললেন, “দেখছেন না, আমাদের বাজারে এ বছর ইলিশের দান ৩০০ টাকার নীচে নামেনি!”
কিন্তু স্বাদের প্রশ্নে পদ্মা-মেঘনা বা গঙ্গার ইলিশের থেকে ইরাবতীর ইলিশ পিছিয়ে কেন?
সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নদী মৎস্য বিভাগের প্রধান উৎপল ভৌমিকের ব্যাখ্যা: ইলিশ যখন সমুদ্রের নোনা জলে থাকে, তখন তার শরীরে থাকে আয়োডিন। সে যত মিষ্টি জলের দিকে আসতে থাকে, আয়োডিনের পরিমাণও কমতে থাকে তার শরীরে। তৈরি হতে থাকে চর্বি বা তেল। সেটাই ইলিশের স্বাদ বাড়ায়। পদ্মা-মেঘনা বা গঙ্গার ইলিশের স্বাদের সুনাম তাই জগৎজোড়া। কিন্তু ইরাবতী নদীর মোহনায় জলের স্বচ্ছতা কম, লবণাক্ত ভাব বেশি। সেই কারণেই ইরাবতীর ইলিশের স্বাদ খানিকটা কম।
উৎপলবাবু এ মাসেই ঢাকা যাচ্ছেন ইলিশ সংরক্ষণ নিয়ে আন্তর্জাতিক আলোচনাচক্রে যোগ দিতে। সেখানে বাংলাদেশ, মায়ানমারের মৎস্যবিজ্ঞানীরাও থাকবেন। তাঁর আশা, পশ্চিমবঙ্গের বিপন্নপ্রায় ইলিশ সংরক্ষণের ব্যাপারে ওই সম্মেলনে কোনও দিশা মিলতেও পারে।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.