|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
বামফ্রন্ট প্রার্থী এসএফআই নেতা ঋতব্রত |
নিজস্ব সংবাদদাতা |
দলে ‘শুদ্ধকরণ’ অভিযানের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে স্বচ্ছ ভাবমূর্তির ছাত্র নেতা ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায়কে দক্ষিণ কলকাতা লোকসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচনে প্রার্থী করল সিপিএম। ঘটনাচক্রে ওই কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিজেপিও। যদিও ভবানীপুর বিধানসভা কেন্দ্রে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে উপনির্বাচনে প্রার্থী দেয়নি বিজেপি।
এসএফআইয়ের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক ঋতব্রত টেলিভিশন-বিতর্কের সুবাদে পরিচিত মুখ। বৃহস্পতিবার সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে প্রার্থী হিসেবে ঋতব্রতর নাম চূড়ান্ত হওয়ার পরে রাজ্য নেতৃত্ব কথা বলেন সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাটের সঙ্গে। আলিমুদ্দিনে ডাকা হয় ঋতব্রতকে। তার পরে বামফ্রন্ট শরিকদের জানিয়ে ঋতব্রতর নাম ঘোষণা করা হয়।
বুধবার প্রার্থী হিসেবে সুব্রত বক্সীর নাম ঘোষণা করে তৃণমূল। প্রার্থী বাছাইয়ের জন্য সিপিএমের হাতে বেশি সময় ছিল না। নিজের খাসতালুক দক্ষিণ কলকাতা কেন্দ্র ১৯৯১ সাল থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত একটানা জিতেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওই কেন্দ্র থেকে ইস্তফা দেওয়াতেই ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হচ্ছে। বরাবর তৃণমূলের দখলে থাকা ওই কেন্দ্রে বামেদের লড়াই এমনিতেই যথেষ্ট ‘কঠিন’। তার উপরে এখন তৃণমূলের জনপ্রিয়তা তুঙ্গে এবং তাদের প্রার্থী সুব্রতবাবুর মতো ‘হেভিওয়েট’ মন্ত্রী। সংসদীয় রাজনীতিতে প্রথমেই এমন কঠিন লড়াই? জবাবে আলিমুদ্দিনে ঋতব্রত বলেন, “রাজনীতিতে খাসতালুক বলে কিছু হয় না। আমার লড়াই তৃণমূলের নীতির বিরুদ্ধে। এই সরকার মুখে মা-মাটি-মানুষের কথা বললেও মাটি ও মানুষের প্রতি যে তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই, মানুষের কাছে সে কথা তুলে ধরাই হবে আমার কাজ।”
|
ঋতব্রত বন্দ্যোপাধ্যায় |
কেন্দ্রীয় সরকারের গরিব-বিরোধী আর্থিক নীতি ও মূল্যবৃদ্ধির বিরুদ্ধে সরব ঋতব্রত বলেন, “তৃণমূল প্রধানমন্ত্রীর উপর চাপ সৃষ্টি করে তিস্তা জল-বণ্টন চুক্তি আটকে দিতে পারে। জমি বিল আটকে দিতে পারে। আর তেলের দাম, নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্যবৃদ্ধি আটকাতে পারে না? এ কথাই মানুষের কাছে তুলে ধরব।” বিধানসভা ভোটের পরে ৪৩ জন বামপন্থী কর্মী খুন হয়েছেন, বহু মানুষকে ‘মিথ্যা মামলা’য় জেলে আটক করা হয়েছে, সেই সব অভিযোগও তাঁর প্রচারে উঠে আসবে বলে জানিয়েছেন ঋতব্রত।
২০০৯ সালে মমতা এই কেন্দ্রে প্রায় ২ লক্ষ ২০ হাজার ভোটে জিতেছিলেন। সে দিক থেকে এই আসনে লড়াই যে ‘কঠিনতম’ সাউথপয়েন্ট থেকে মাধ্যমিক, দক্ষিণ কলকাতার আশুতোষ কলেজের ছাত্র সংসদের প্রাক্তন সম্পাদক, কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরাজিতে এমএ, ফেস-বুক, ট্যুইটারে অভ্যস্থ ঋতব্রত তা ভালই জানেন। তাঁকে নির্বাচনের কাজে সহযোগিতা করবেন এই কেন্দ্রে পরপর দু’বার মমতার কাছে পরাজিত সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য রবীন দেব।
ভবানীপুর কেন্দ্রে উপনির্বাচনের সময়ে মমতার বিরুদ্ধে সিপিএমের প্রচার ছিল পুজোর মুখে তিনি জোর করে এই ভোট মানুষের উপরে চাপিয়ে দিয়েছেন। যদিও ভোটাররা বামেদের আবেদনে সাড়া দেয়নি। ভোট কম পড়লেও মমতা রেকর্ড ভোটে জেতেন। পরপর ভোট হওয়ায় কলকাতায় উন্নয়নের কাজ বারবার বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছে তৃণমূল। আলিমুদ্দিনে ঋতব্রতর পাশে দাঁড়িয়ে রবীনবাবু বলেন, “মমতা মুখ্যমন্ত্রী হয়েই পদত্যাগ করলে পরপর দু’টি নির্বাচন হত না। একসঙ্গেই হত। কিন্তু তৃণমূল নেতৃত্বের অবিমৃষ্যকারী সিদ্ধান্তের ফলেই দু’বার ভোট হচ্ছে। মানুষের অসুবিধা হচ্ছে।” কিন্তু মমতাও এ নিয়ে প্রতিবাদ করেছেন। তার জবাবে রবীনবাবু বলেন,“অপরাধ ঢাকতেই এখন উনি নানা কথা বলছেন। কারণ, ওঁর সিদ্ধান্তের ফলেই পর পর ভোট হচ্ছে।”
বিজেপি এখনও প্রার্থীর নাম স্থির করতে পারেনি। ৭ নভেম্বর বিজেপি-র রাজ্য পদাধিকারী বৈঠকে প্রার্থী বাছাই নিয়ে আলোচনা হবে।
৩০ নভেম্বের ভোট হওয়ায় পূর্ব ঘোষণা মতো আগের দিন ২৯ নভেম্বর কলকাতায় বামেদের আইন-অমান্য কর্মসূচি হবে না বলে এ দিন সিপিএমের সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকে ঠিক হয়। আইন অমান্য কর্মসূচি কেন্দ্রীয় ভাবে ঠিক হয়েছিল। এ রাজ্যে পরিবর্তিত দিনক্ষণ কী হবে, তা বামফ্রন্টের বৈঠকে স্থির হবে। ৯ নভেম্বর ফ্রন্টের বৈঠক ডাকা হয়েছে। ভোটের জন্য কলকাতায় সম্মেলন-প্রক্রিয়ার দিনও পরিবর্তন করা হবে। মূল্যবৃদ্ধি, সন্ত্রাস, গণতান্ত্রিক অধিকার হরণের বিরুদ্ধে এ দিন বামফ্রন্টের পক্ষ থেকে এক পুস্তিকা প্রকাশ করা হয়েছে। |
|
|
|
|
|