পুজোয় কোথায় বেড়ালেন? দেখলেন মরুভূমি না তুষারদেশে ভূমিকম্প?
আসানসোলের রবীন্দ্রনগর থেকে লিখছেন বিশ্বরূপ মৈত্র। |
ভূমিকম্পের রেশ তখনও কাটেনি।
পেলিং যাব বলে যখন আসানসোল থেকে রওনা দিলাম, খবরের কাগজ থেকে টিভি চ্যানেলের খবর সিকিমের ভূকম্পের স্মৃতি তখনও তাজা।
হওয়ারই কথা। সিকিম কেঁপেছে ১৮ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায়। তার পরেও বেশ কয়েকটা ‘আফটার শক’। আর আমরা বেরোলাম ২ অক্টোবর, মহাষষ্ঠীর দিন।
আসানসোল থেকে পেলিং প্রায় ১৭ ঘন্টার পথ। শিলিগুড়ি পর্যন্ত সব মোটামুটি স্বাভাবিক। কিন্তু রাস্তা তিস্তার পাশ ধরে পাহাড়ে উঠতে শুরু করতেই বুক দুরুদুরু। সামনে কি ধস? রাস্তা বন্ধ? আবার কেঁপে উঠবে না তো পায়ের তলার মাটি? পাহাড় থেকে গড়িয়ে আসবে না তো পাথর?
তেমন কিছু অবশ্য ঘটেনি। তবে যেতে যেতে রাস্তার পাশেই চোখে পড়ল ধ্বংসের চিহ্ন। ছড়িয়ে ছিটিয়ে, বেশ কিছু। শেষমেশ পৌঁছনো গেল পেলিং। যে হোটেলে থাকব, বার্নপুরের দুই উদ্যোগী যুবক তার দায়িত্বে। খুবই উৎসাহ আর উষ্ণতার সঙ্গে আমাদের যত্নআত্তি শুরু করে দিল তারা। মনে হল, আপনজনের কাছেই আছি। |
পরের দিন সকাল হল হিমালয়ের নরম আলো গায়ে মেখে। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে অতুলনীয় পেলিংয়ের উচ্চতা প্রায় ৭২০০ ফুট। ছোট্ট জনপদ ঘিরে জঙ্গল আর সবুজ উপত্যকা। আর তার মাথায় যেন ছাতা মেলে দাঁড়িয়ে আছে কাঞ্চনজঙ্ঘা। আকাশ পরিষ্কার থাকলে সে রূপ চোখ ধাঁধিয়ে দেয়। সে রূপ আবার বদলায় ক্ষণে ক্ষণে।
আলস্য ঝেড়ে বেশ বড়সড় একটা দল চললাম পেলিং হেলিপ্যাডের দক্ষিণ-পশ্চিমে সিকিমের অতিপ্রাচীন সাঙ্গা চোলিং গুম্ফায়। প্রায় ৩ কিলোমিটার ট্রেক করে পৌঁছতে হয় সাড়ে ৭ হাজার উচ্চতায়। কষ্ট করে এক বার পৌঁছলে চারপাশের দৃশ্য চোখ জুড়িয়ে দেয়। বিকেলে গেলাম পেমিয়াংশি। সেখানে প্রায় তিনশো বছরের প্রাচীন গুম্ফায় ছোট লামাদের খেলা, দৌড়াদৌড়ি। সেখান থেকে সিকিমের ‘দ্বিতীয় রাজধানী’ রাবজনৎসে। এখনও রয়েছে প্রাচীন রাজপ্রাসাদের ভগ্নাবশেষ। আর চমৎকার ফুলের বাগান।
দ্বিতীয় দিন জিপ ছুটল সিকিমের অন্যতম পবিত্র হ্রদ খেচিপেরির দিকে। বৌদ্ধদের ধর্মীয় পতাকা দিয়ে ঘেরা পাহাড়ে ঘেরা সবুজাভ স্বচ্ছ হ্রদের চারপাশ। পথে পড়ে রিম্বি রক গার্ডেন আর বেশ কয়েকটা ছটফটে ঝরনা। তার মধ্যে সবচেয়ে বড় আর নজরকাড়া অবশ্যই কাঞ্চনজঙ্ঘা জলপ্রপাত। রিম্বি জলপ্রপাতও ভারী সুন্দর। চোখে পড়ে ঝুলন্ত সেতু সিংশোর, সিকিমের উচ্চতম সেতু এটি। আর দেখা যায় ছাঙ্গে জলপ্রপাত।
তৃতীয় দিনের গন্তব্য সিকিমের প্রথম রাজধানী ইয়কসাম। এখানেই ১৬৪২ সালে সিকিমের প্রথম চোগিয়ালের রাজ্যাভিষেক হয়। এক মহীরুহের তলায় সেই পাথরের সিংহাসন এখনও রাখা আছে। নরবুগং চোর্তেন, দুবদি গুম্ফা, কাথক হ্রদও অবশ্য দ্রষ্টব্য। আর, এখান থেকেই শুরু ট্রেকারদের স্বর্গরাজ্য জোংরি বা গোয়েচালার হাঁটাপথ।
বহু বছর আগে জোংরি ট্রেক করতে গিয়েছিলাম। তখন ইয়কসাম ছিল খুব নিরিবিলি এক পাহাড়ি জনপদ। এখন বেশ জমজমাট। বেশ কয়েকটি হোটেল। সরকারি, বেসরকারি ঘরবাড়ি। ভূমিকম্পে কেঁপেও দিব্যি দাঁড়িয়ে আছে!
পাহাড়ে ভিড় বাড়ছে। কিন্তু পেলিং থেকে ইয়কসাম পশ্চিম সিকিম এখনও মোহময়।
|
লিখুন অনধিক ৩০০ শব্দে। খামে ‘পুজো এক্সপ্রেস’ লিখে পাঠিয়ে দিন
আনন্দবাজার পত্রিকা,
এ ১০, ডক্টরস কলোনি, সিটি সেন্টার,
দুর্গাপুর - ৭১৩২১৬।
অবশ্যই দেবেন ছবি (নিজেদের বাদে)। ছবি মেল করতে চাইলে: durgapuredit@abp.in
(লেখা নির্বাচনে সম্পাদকীয় বিভাগের বিবেচনাই চূড়ান্ত) |
|