প্রতি পদে তৃণমূল বাধা দেওয়ায় দিনমজুরের অভাবে চাষবাস, পুকুর দেখাশোনার কাজ শিকেয় উঠেছে বলে লিখিত অভিযোগ করলেন কোচবিহারের নাটাবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক তমসের আলি। অবিলম্বে পুলিশ-প্রশাসনের তরফে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া না-হলে সপরিবার আত্মহত্যার হুমকি দিয়েছেন সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়ক। তিনি বলেন, “প্রাথমিক স্কুল থেকে স্বেচ্ছাবসর নিয়ে রাজনীতি করছি। চাষবাস, পুকুরের উপরেই সংসার চলে। অথচ শ্রমিক না-পাওয়ায় পাট কাটাতে পারিনি। ধান চাষ হয়নি। স্কুল শিক্ষক ছেলে প্রতি মাসে সামান্য কিছু অর্থ সাহায্য দেয়। তা দিয়ে সংসার চলছে না। পুলিশ-প্রশাসন ব্যবস্থা না-নিলে সপরিবার আত্মহত্যা ছাড়া আর কোনও উপায় নেই।”
|
তমসের আলি
ছবি: হিমাংশুরঞ্জন দেব |
কোচবিহারের জেলাশাসক মোহন গাঁধী এবং পুলিশ সুপার প্রণব দাস বিষয়টি সম্পর্কে ওয়াকিবহাল। বুধবার জেলাশাসক বলেন, “কিছু অভিযোগ নিয়ে এ দিন নাটাবাড়ির প্রাক্তন বিধায়ক আমার কাছে এসেছিলেন। পুলিশ সুপারের সঙ্গে সে সব নিয়ে কথা বলেছি। তবে আত্মহত্যার হুমকি নিয়ে কিছু মন্তব্য করতে চাই না।” কোচবিহারের পুলিশ সুপার কোনও মন্তব্য করেননি। সিপিএমের প্রাক্তন বিধায়কের ওই অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে দাবি করেছেন তৃণমূল কংগ্রেসের কোচবিহার জেলা সভাপতি রবীন্দ্রনাথ ঘোষ। যিনি গত বিধানসভায় তমসেরকে হারিয়ে ভোটে জেতার পরে এখন এনবিএসটিসির চেয়ারম্যান। রবীন্দ্রনাথবাবু বলেন, “এটুকু বলতে পারি, তমসেরের সংসার চলছে না বললে এলাকার লোকজন হাসবেন। প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে তো প্রায় ১৬ হাজার টাকা পেনশন পান উনি। সেটা ভুললে চলবে না।”
তা হলে ওঁর জমি-পুকুরে কাজের জন্য লোক মিলছে না কেন? তৃণমূল জেলা সভাপতির বক্তব্য, “উনি দীর্ঘদিন ধরে এলাকায় কর্তৃত্ব করেছেন। ক্ষমতায় থাকাকালীন ওই সিপিএম নেতা কাজ করিয়ে অনেক মজুরকেই মজুরি দিতেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তখন কেউ প্রতিবাদ করতে পারেননি। এখন পরিবর্তন আসায় হয়তো তাঁরাই কাজ করতে চাইছেন না।”
তমসের অবশ্য দাবি করেছেন, তাঁর প্রাক্তন বিধায়ক হিসেবে প্রাপ্য পেনশন এখনও চালু হয়নি। তিনি আক্ষেপের সুরে অভিযোগ করেন, বিধানসভা ভোটে হারের পর থেকেই প্রতি পদে হেনস্থা হচ্ছেন। তাঁর অভিযোগ, তৃণমূলের উস্কানিতেই দিনমজুরেরা কেউ তাঁর জমির পাট কাটতে রাজি হননি। একই কারণে কয়েক মাস আগে গাড়ির চালক নিয়োগ করতে পারছিলেন না। সমস্ত ঘটনা রাজ্যের মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, বিধানসভার বিরোধী দলনেতা এবং বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুকে জানাবেন বলে ঠিক করেছেন। এই ব্যাপারে তৃণমূলের জেলা সভাপতি বলেন, “উনি অভিযোগ জানাতেই পারেন। কিন্তু অশোক স্তম্ভ ছাপ মারা সরকারি প্যাড ব্যবহার করে ঠিক করেননি। তা ছাড়া, আত্মহত্যার হুমকি দেওয়াটা আইনের চোখে অপরাধ।”
তমসেরের যুক্তি, “এমএলএ’র প্যাডে চিঠি লিখেছি। তবে প্যাডে এমএলএ-এর আগে ‘এক্স’ শব্দটা লিখেছি। তাড়াহুড়োয় প্যাডে যে অশোক স্তম্ভের ছাপ রয়েছে সেটা খেয়াল করিনি। দেখি পুলিশ-প্রশাসন কী ব্যবস্থা নেয়!” |