রাস্তায় ফালি পেতে গাড়িতে ছিনতাই চালাল দুষ্কৃতীরা। বুধবার ভোরে ঘটনাটি ঘটেছে বাঁকুড়া সদর থানার পোয়াবাগান এলাকার কাছে ৬০-এ জাতীয় সড়কে। পুলিশ জানিয়েছে, নগদ কয়েক হাজার টাকা, কিছু গয়না ও মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নিয়ে পালায় দুষ্কৃতীরা। ঘটনার প্রতিবাদে এবং পুলিশি ‘নিষ্ক্রিয়তার’ অভিযোগ তুলে এ দিন তিন ঘণ্টা জাতীয় সড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান এলাকাবাসী।
স্থানীয় সূত্রের খবর, মঙ্গলবার রাতে জলসা সেরে ছাতনার বাইড়্যা গ্রাম থেকে অর্কেস্ট্রা দলের সদস্যদের নিয়ে বাঁকুড়ায় ফিরছিল ওই ট্রেকারটি। ভোর সাড়ে ৫টা নাগাদ ফালিবাজদের খপ্পরে পড়ে গাড়িটি। ওই অর্কেস্ট্রা দলের সদস্য স্বরূপ দাস বলেন, “ট্রেকারে আমরা ১২ জন ফিরছিলাম। দু’জন মহিলা সদস্যও ছিলেন। মাদলাজোড় ও বচারগ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় রাস্তায় দুষ্কৃতীরা ফালি পেতে রেখেছিল। তাতেই আমাদের গাড়ির চাকা ফেঁসে যায়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই প্রায় ১৪ জনের সশস্ত্র দুষ্কৃতীদল আমাদের উপরে চড়াও হয়। ওদের হাতে ভোজালি ছিল। আমাদের কয়েক জনকে লাথি-ঘুষি মারে। এর পরে লুঠপাট চালায়।” প্রায় আধঘণ্টা ধরে লুঠপাট চললেও ওই সময় কোনও পুলিশি টহলদারি গাড়ি তাঁদের চোখে পড়েনি বলে তিনি জানান। |
ঘটনার পরে এখনও আতঙ্ক কাটেনি ওই অর্কেস্ট্রা দলের সদস্যদের। স্বরূপবাবুর কথায়, “দুষ্কৃতীরা মহিলাদের গলা থেকে সোনার হার ছিনিয়ে নেয়। কেড়ে নেয় মোবাইল আর নগদ টাকা।” ওই গাড়ির চালক মাজারুল খান বলেন, “দুষ্কৃতীরা রাস্তার দু’ধারে ওঁত পেতে বসেছিল। ঘটনাটি বুঝতে পেরে আমি দৌড় লাগাই বচার গ্রামের দিকে। সেখানে গিয়ে গ্রামবাসীদের সব জানাই। জনা কুড়ি বাসিন্দা আমার সঙ্গে ঘটনাস্থলে যান। কিন্তু ততক্ষণে লুঠপাট চালিয়ে রাতের অন্ধকারে গা ঢাকা দিয়েছে দুষ্কৃতীরা।” ঘটনা ঘটার প্রায় এক ঘণ্টা পরে পুলিশ সেখানে পৌঁছয় বলে ওই গাড়ির আরোহীরা জানিয়েছেন।
পোয়াবাগান এলাকার কাছাকাছি নতুনগ্রাম, মাদনাজোড়, বচারগ্রাম অঞ্চলে জাতীয় সড়কের উপরে চুরি-ছিনতাই-লুঠপাটের ঘটনা নতুন কিছু নয়। ওই রাস্তায় পুলিশের গাড়ি টহল দেয়। তার পরেও এমন ঘটনা ঘটায় পুলিশের বূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন স্থানীয় মানুষ। ঘটনার প্রতিবাদে এ দিন ঘণ্টা তিনেক জাতীয় সড়ক অবরোধ করেন তাঁরা। তার জেরে যানজট হয়। অবরোধকারী, নতুনগ্রামের বাসিন্দা হাবিবুল খান, মিসবাউল খান, আলিমুন খানদের ক্ষোভ, “দীর্ঘদিন ধরে চুরি, ছিনতাই হচ্ছে জাতীয় সড়কে। ছিনতাই করে খুনের ঘটনাও ঘটেছে এখানে। অথচ পুলিশের কোনও নজর নেই।” তাঁদের আরও অভিযোগ, তাঁরা বহুদিন ধরে ওই এলাকায় একটি পুলিশ ফাঁড়ি করার দাবি জানিয়ে আসছেন। কিন্তু এ ব্যাপারে পুলিশ কখনওই গুরুত্ব দেয়নি। বড় কোনও ঘটনা ঘটলে তখন কিছুদিন পুলিশ তৎপরতা চোখে পড়ে। তার পরে যেই কে সেই। গ্রামবাসীদের দাবি, “রাতে যে পুলিশ গাড়িটি টহল দেয়, সেটি পোয়াবাগান মোড় পর্যন্ত যায়। আমাদের এলাকার দিকে আসে না। বুধবার ভোরেও লুঠের ঘটনার এক ঘণ্টা পরে পুলিশ আসে।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার প্রণব কুমার বলেন, “ওই এলাকায় নজরদারি বাড়ানো হবে। তবে ওখানে পুলিশ ফাঁড়ি হবে কি না, তা এখনই বলা যাবে না। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাব।” |