সেতু হবে, নাকি ভেসেলে পারাপারের ব্যবস্থা হবে তা নিয়ে প্রশাসন নির্দিষ্ট সিদ্ধান্তে আসতে না পারায় দু’দিকের কাজই শুরু করে দেওয়া হয়। একদিকে সেতুর তৈরির জন্য শুরু হয়ে যায় মাপজোক, মাটি পরীক্ষা-সহ অন্যান্য আনুষঙ্গিক কাজ। অন্যদিকে নদীতে পারাপারের জন্য কোটি টাকা ব্যয়ে বার্জ পরিষেবা চালুর তোড়জোড় শুরু হয়ে যায়। কিন্তু সেতু না বার্জ, এই দুয়ের যুদ্ধে কোনওটাই উপকারে আসেনি উত্তর ২৪ পরগনার হিঙ্গলগঞ্জের মানুষের। একদিকে বন্ধ রয়েছে সেতুর কাজ। অন্যদিকে বন্ধ হয়ে গিয়েছে বার্জ চলাচল।
হিঙ্গলগঞ্জের দুলদুলি পঞ্চায়েত এলাকার সাহেবখালি নদীর উপরে সেতুর কাজ যে ভাবে শিলান্যাসেই আটকে গিয়েছে, সে ভাবেই রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে তলিয়ে যেতে বসেছে ভাসমান জেটি। সরকারি কাজের এমন হাল দেখে স্থানীয় মানুষ ক্ষুব্ধ। তাঁদের অভিযোগ, বার বার প্রবঞ্চনা করা হচ্ছে সুন্দরবন এলাকার মানুষের সঙ্গে। ভোট এলেই সমস্ত রাজনৈতিক দলের নেতারা এসে বলেন, সেতু তৈরি না হওয়া পর্যন্ত বার্জ চলবে। কিন্তু এখন কোথায় কী?”
প্রশাসন ও স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় সাহেবখালি নদীর উপরে সেতুর জন্য দু’বার শিলান্যাস হয়। |
একবার শিলান্যাস করেছিলেন রাজ্যের প্রাক্তন প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু এবং একবার প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী। কিন্তু সেতুর কাজ শুরু হয়নি। এলাকার মানুষের অনেক আন্দোলনের পরে কোটি কোটি টাকা খরচ করে নদীর উপরে পল্টুন ব্রিজের উদ্বোধন করেছিলেন প্রাক্তন ও প্রয়াত পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। কিন্তু উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যেই তা বন্ধ হয়ে যায়। প্রশাসনিক কর্তাদের বক্তব্য, পল্টুন ব্রিজ বা ভাসমান জৈটি তৈরির পরে ভেসেল বা বার্জ চালিয়ে ঢ়াবের চেয়ে ক্ষতিই হচ্ছিল বেশি। সে জন্যই সাময়িক ভাবে ভেসেল চলাচল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। কিন্তু তার পর প্রায় পাঁচ বছর কেটে গিয়েছে। ভেসেল চলাচল বন্ধ থাকায় উপযুক্ত রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ভাসমান জেটি ফুটো হয়ে জল ঢুকে অর্ধেক ডুবে গিয়েছে। এ ব্যাপারে কি বলছে প্রশাসন?
বসিরহাটের মহকুমাশাসক অনামিকা মজুমদার বলেন, “জেটি মেরামত করে ভেসেল চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাঁরা আশ্বাস দিয়েছেন দ্রুত ভেসেল চালানোর ব্যবস্থা হবে।”
১৯৯০ সালে সেতুর প্রথম শিলান্যাস করেন তদানীন্তন পরিবহণমন্ত্রী শ্যামল চক্রবর্তী। কিন্তু কাজ শুরু হয়নি। ’৯৫ সালে ফের শিলান্যাস করেন মুখ্যমন্ত্রী প্রয়াত জ্যোতি বসু। তার পরেও কাজ শুরু হয়নি সেতুর। মাটি পরীক্ষার পরে পূর্ত বিভাগ জানিয়ে দেয় ওই জায়গায় সেতু করাটা অত্যন্ত ব্যয়বহুল হবে। ক্ষুব্ধ স্থানীয় মানুষ শিলান্যাসের ফলক ভেঙে নদীতে ফেলে দেন। এর পরে প্রশাসন সিদ্ধান্ত নেয়, নদীর দু’ধারে ভাসমান জেটি তৈরি করে ভেসেলে পারাপার করা হবে। ২০০৭ সালে এর উদ্বোধন করেন প্রাক্তন পরিবহণমন্ত্রী সুভাষ চক্রবর্তী। মানুষ ভেবেছিলেন, এ বার তাঁদের সমস্যার সুরাহা হবে। কিন্তু অচিরেই তাঁদের সেই ভুল ভেঙে যায়। বন্ধ হয়ে যায় ভেসেল চলাচল। মহকুমা প্রশাসন সূত্রে জানানো হয়, যে ঠিকাদার সংস্থাকে ওই পল্টুন ব্রিজ বা ভাসমান জেটি তৈরির দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, তাদের নকশায় ত্রুটি থাকার কারণে ভেসেলে গাড়ি তুলতে সমস্যা হচ্ছিল। জানানো হয়, মেরামতির পরে ফের তা চালু করা হবে। কিন্তু আজও তা চালু হয়নি। উল্টে দীর্ঘদিন ধরে পড়ে থাকায় রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জেটি ফুটো হয়ে জল ঢুকে অর্ধেক ডুবে গিয়েছে। কিন্তু তা নিয়েও প্রশাসনের হেলদোল নেই বলে অভিযোগ মানুষের। ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা বিষয়টি মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে জানানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তাঁদের আশা, এ বার হয়তো তাঁদের সমস্যার সুরাহা হবে। |