সম্পাদক সমীপেষু...
‘সংরক্ষিত কামরা’ বলার মানে কী
যাচ্ছিলাম হাওড়া থেকে আমদাবাদ। ৫-১০-’১১ রাত ১১টা ৫৫-তে হাওড়া-আমদাবাদ এক্সপ্রেসের (ট্রেন নং-12834/HWH ADI EXP) S-4 কামরায় 63 ও 64 (SL, SU) নং সিটে আমি ও আমার স্বামী গিয়ে বসি এবং নির্ধারিত সময়ে ট্রেন ছাড়ে। সে-রাত নিরাপদে কাটে এবং টিকিট পরীক্ষক ও রেল পুলিশেরও দেখা পাই।
পরদিন (৬-১০) রাত প্রায় ১০টা নাগাদ ট্রেনটি নাগপুর স্টেশনে পৌঁছয়। ট্রেনের সব যাত্রী তখন নিদ্রিত। এমন সময় ৫০-৬০ জনের একটি দল আমাদের কামরায় উঠে পড়ে এবং চিৎকারে ঘুম ভেঙেই দেখি, তারা যাত্রীদের টেনে হিঁচড়ে তুলে সিট দখল করছে। প্রতিবাদ করায় তারা যাত্রীদের উপর চড়াও হয় এবং শারীরিক নিগ্রহ করে।
মহিলাদেরও রেহাই দেয় না। আমার পাশের সিটে শুয়ে থাকা এক মহিলা তাঁর তিন বছরের শিশুকন্যাকে নিয়ে ঘুমোচ্ছিলেন। তাঁকেও লাথি মেরে তুলে দেওয়া হয়। এই ঘটনার প্রতিবাদ করায় তাঁর স্বামীকে পাঁচ-ছয় জন যুবক চড়াও হয়ে চড়-থাপ্পড়-ঘুষি চালাতে থাকে। সেই ঘটনা দেখে সহযাত্রীদের একজন প্রতিবাদ করতে যান। তাঁকেও ওই একই ভাবে শারীরিক নিগ্রহ করা হয়। অবশেষে তারা আমাদের প্রত্যেক ঘুমন্ত যাত্রীকে উঠে যেতে বলে। আমরা ভয়ে কাঁটা হয়ে যাই। সারা রাত কার্যত দাঁড়িয়ে থাকতে হয়। ভোর চারটের দিকে কোনও একটি স্টেশনে হামলাকারীরা নেমে যায়। আমাদের এই নিদারুণ দুঃসময়ে কোনও টিটি বা নিরাপত্তাকর্মীর দেখা পাইনি। অত্যাচার এতটাই চরমে উঠেছিল, কোনও যাত্রী চেন টেনে ট্রেন থামানোর সুযোগও পাননি। এবং, আমরা যাত্রাপথে এই ঘটনার কোনও লিখিত অভিযোগও করতে পারিনি। ব্যক্তিগত ভাবে এই ঘটনা আমি জনসমক্ষে আনতে চাইছি। সে-দিন রাতের এক অসহায় যাত্রী হিসাবে আমার মনে হয়েছে, তা হলে কি এ-রকম নিরাপত্তাহীন ভাবেই ট্রেনে চাপতে হবে?
রেলযাত্রায় নিরাপত্তাহীনতা (১২-১০ এবং ১৬-১০) প্রায়শই সংবাদের শিরোনাম হওয়া সত্ত্বেও রেল কর্তৃপক্ষের আচরণে কোনও সদর্থক প্রভাব পড়েনি। এই বক্তব্যের সমর্থনে আমি আমার (১৪-১০) হাওড়া থেকে ‘করমণ্ডল এক্সপ্রেস’-এ ভুবনেশ্বর আসার তিক্ত অভিজ্ঞতা বর্ণনা করছি। সংরক্ষিত কামরার এস ৫-এ আমাদের আসন সংরক্ষিত ছিল। কোনও রকমে বসতে পেলেও নিকটবর্তী বেসিন বা শৌচালয়ে যাওয়ার কোনও উপায় ছিল না। পুরো কম্পার্টমেন্ট অসংরক্ষিত যাত্রী ও তাঁদের মালপত্রে ভর্তি। সব স্লিপার ক্লাসেই এই রকম চিত্র। ভুবনেশ্বর পর্যন্ত কোনও টিকিট পরীক্ষকের দেখা মেলেনি। প্রশ্ন এই যে, সংরক্ষিত কামরার জন্য রিজার্ভেশন করিয়ে (প্রায় তিন মাস আগে) রেলযাত্রীরা কি এই ভাবেই প্রতিনয়ত অপদস্থ হবেন?
দায়িত্বজ্ঞানও তথৈবচ
১২-১০-’১১ হলদিবাড়ি সুপারফাস্ট ট্রেনে আমাদের টিকিট ছিল। জলপাইগুড়ি স্টেশন থেকে আমি, আমার ৭০ বছর বয়স্ক বাবা, ৫২ বছর বয়স্কা পিসি ও ৩-বছরের মেয়ে ট্রেনে উঠি। আলুয়াবাড়ি স্টেশনে এসে সকাল ১১-৩০ মিনিটে ট্রেন থামে। দীর্ঘ সময় পরে খবর পাওয়া যায়, কিষানগঞ্জে অবরোধ। বিকেল পাঁচটা নাগাদ অবরোধ উঠবে। পাঁচটা বাজার পরেও ট্রেন থেমে ছিল। এবং প্ল্যাটফর্মে কোনও ঘোষণা শোনা যায়নি। রেল কর্তৃপক্ষের কি কোনও দায়িত্ব ছিল না? এতগুলি বয়স্ক মানুষ, দুধের শিশু, অসুস্থ মানুষ এদের জেনেশুনে বিপদের মুখে ঠেলে দেওয়া হল কেন?
দ্বিতীয়ত, সন্ধে ৬-৩০ মিনিট নাগাদ একটি ফুল দিয়ে সাজানো ট্রেন দু’চার জন যাত্রী নিয়ে আলুয়াবাড়ি স্টেশনে এল আবার মিনিট দশেক পরে ফিরে চলে গেল নিউ জলপাইগুড়ির দিকে। কাগজে ওই ট্রেনটির উদ্বোধনের কথা দেখেছিলাম। কিন্তু যেখানে প্রায় কয়েক হাজার মানুষ সকাল থেকে দুর্ভোগের মধ্যে কাটিয়েছেন, রেলের ওই উদ্বোধন- প্রহসন করার খুব দরকার ছিল কি? বাড়ির আনন্দ-অনুষ্ঠান তো দুর্ঘটনা ঘটলে বাতিল হয়।
তৃতীয়ত, বিকেলের দিকে গুয়াহাটি-নিউদিল্লি রাজধানী এক্সপ্রেস যখন আলুয়াবাড়ি স্টেশনে এসে দাঁড়াল, তখন রেলের তৎপরতা ছিল দেখার মতো। সশস্ত্র পুলিশ বাহিনী, মেডিক্যাল টিম দেওয়া হল। কিন্তু তার আগে পর্যন্ত দু’জন লাঠিয়াল পুলিশ দিয়ে হলদিবাড়ি সুপার ফাস্টের যাত্রীদের সুরক্ষার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। বৈধ টিকিটের যাত্রী হওয়া সত্ত্বেও আমাদের ট্রেনের আলো, পাখা, জল সবই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। ট্রেন চলার পর অবশ্য আলোটা জ্বলেছিল। কিন্তু পাখা আর জলের ব্যবস্থা রেল করতে পারেনি।
যাই হোক, এত দুর্ভোগের মধ্যে কয়েকটা কথা উল্লেখ্য। তা হল, সহযাত্রীদের সাহায্য। তাঁরা বাড়ির লোকের মতো ট্রেন পাহারা দিয়ে রেখেছিলেন। সকলের সুবিধা- অসুবিধার ব্যাপারে লক্ষ রেখেছিলেন। স্থানীয় মানুষরা দোকান খোলা রেখে খাবারের জোগান দিয়েছিলেন।
আর একজন বয়স্ক মানুষ ‘কালীদা’ বা ‘কালীবাবু’ বলে সম্বোধন করছিলেন সবাই তাঁকে। পুরো নাম জানা হয়নিতিনি অসুস্থ অবস্থায় প্রায় ১৩ ঘণ্টা (সকাল সাড়ে ১১টা থেকে রাত সাড়ে ১২টা পর্যন্ত) বসে রইলেন। যাচ্ছিলেন চা-বাগানের মজুরদের মজুরি বৃদ্ধি সংক্রান্ত মিটিংয়ে। তাঁকে দেখে অনেকটা প্রেরণা পাওয়া গেল। দুর্ভোগের ট্রেনযাত্রায় প্রাপ্তি বলতে এই ক’টি বিষয়। পরদিন সকাল ১১টা ৮ মিনিটে দুর্ভোগের যাত্রা শেষ করে কলকাতা স্টেশনে ঢুকলাম। ১২ ঘণ্টার যাত্রাকালে ১৩ ঘণ্টা দেরিএটাও পাওনা!


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.