সম্পাদকীয় ১...
উহারা এবং আমরা
পরাধ করিলে শাস্তি পাইতে হয়, ইহাই ন্যায়বিচারের প্রথম কথা। বস্তুত, শেষ কথাও। কিন্তু এ দেশে কথা এবং কাজের ফারাক সচরাচর দুস্তর। সেই অনুপাতেই, অপরাধ এবং শাস্তির দূরত্ব প্রায়শ অসেতুসম্ভব। নূতন অপরাধ পুরানো হয়, পুরানো অপরাধ পুরানোতর হয়, অপরাধী নশ্বর জগতের অমোঘ নিয়মে সমস্ত আদালতের নাগালের বাহিরে চলিয়া যায়, ধর্মের কল নড়ে না। অন্য দিকে, বছরের পর বছর ধরিয়া প্রলম্বিত বিচারপ্রক্রিয়ার অনন্ত অবকাশে অভিযুক্ত ব্যক্তি কারাবাস করিয়া চলেন, ‘বিচারাধীন’ বন্দিত্বের কাল সম্ভাব্য শাস্তির সর্বোচ্চ সীমা অতিক্রম করিয়া যায়, ধর্মের কল অনড়, অচল। কারণটি বহুচর্চিত। প্রবচন যাহাই বলুক, ধর্মের কল আদৌ বাতাসে নড়ে না, তাহাকে নাড়াইতে হয়। প্রশাসন এবং বিচারব্যবস্থা নিরপেক্ষ ও তৎপর হইলে কলটি নড়ে, নচেৎ নড়ে না, অথবা ভুল ভাবে নড়ে, দুষ্টের পালন এবং শিষ্টের দমন ঘটে। এই দেশ এমন অনাচারেই অভ্যস্ত।
সেই কারণেই ভারতীয় নাগরিকের চোখে পাকিস্তানের দুই ক্রিকেটার সলমন বাট ও মহম্মদ আসিফের বিচার ও শাস্তির সংবাদটি চমকপ্রদ ঠেকিতে পারে। অপরাধ গত বছরের, বিচার সম্পন্ন হইতে আঠারো মাসও লাগে নাই, দণ্ডাদেশও আজই ঘোষিত হইবার কথা। ক্রিকেট খেলায় দুর্নীতির অভিযোগ অনেক দিন ধরিয়াই নানা দেশের নানা খেলোয়াড় সম্পর্কে উঠিয়াছে, কয়েকটি ক্ষেত্রে অপরাধী খেলার ময়দান হইতে নির্বাসিত হইয়াছেন, কিন্তু সরাসরি শাস্তি কেহই পান নাই, কারাবাস তো দূরস্থান। ইহা তাৎপর্যপূর্ণ যে, বিচার ও শাস্তির এই অ-ভূতপূর্ব ঘটনাটি ঘটিল ইংল্যান্ডে, কার্যত ‘উন্নত’ দুনিয়ার একমাত্র ক্রিকেট-খেলিয়ে দেশে। এবং সেই দেশের প্রেক্ষিতে ইহা কোনও অস্বাভাবিক ঘটনা নয়, এই ভাবেই সে দেশের বিচার প্রক্রিয়া চলিয়া থাকে। যথা, ইংল্যান্ডে সাম্প্রতিক দাঙ্গাহাঙ্গামার দায়ে অভিযুক্ত বেশ কিছু ব্যক্তির বিচার ও শাস্তি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হইয়া গিয়াছে, ভারতে যাহা অকল্পনীয়। একটি ব্যবস্থা কাজ করে, ধর্মের কল নড়ে, অন্যটি কাজ করে না, ধর্মের কল নড়ে না। বিলম্বিত বিচার, অ-বিচার, ভুল বিচার ইত্যাদি বিষয়ে যত কথা হয়, এ দেশের বিচার প্রক্রিয়ার অন্য একটি অনাচার সম্পর্কে তাহার সিকিভাগও হয় না। অথচ তাহাও অনৈতিক এবং অন্যায়। বিনা বিচারে বা বিচারাধীন অবস্থায় অনেককেই দীর্ঘ দিন আটক করিয়া রাখা হয়, জামিন দেওয়া হয় না। এ ক্ষেত্রেও উন্নত দুনিয়ার সহিত তুলনা প্রাসঙ্গিক। সম্প্রতি ব্যবসা সংক্রান্ত গোপন তথ্য অন্যায় ভাবে জানাইয়া দেওয়ার দায়ে অভিযুক্ত ম্যানেজমেন্ট বিশেষজ্ঞ রজত গুপ্ত মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সিকিয়োরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এস ই সি) নিকট আত্মসমর্পণ ও গ্রেফতার বরণের কয়েক ঘণ্টা পরেই জামিন পাইয়া যান। তিনি অপরাধী কি না, তাঁহার বিচারে কী সাব্যস্ত হইবে, সে সকলই ভবিষ্যতের প্রশ্ন, কিন্তু বড় রকমের অপরাধে অভিযুক্ত হইলেই জামিন মিলিবে না এ দেশের অতিপরিচিত নজিরের সহিত মার্কিন বিচার প্রক্রিয়ার পার্থক্যটি অতি স্পষ্ট। বিচারের স্বার্থে একান্ত প্রয়োজন না থাকিলে কাহাকেও আটক করিয়া রাখিবার রীতি সুবিচারের মৌলিক নীতির প্রতিকূল, ‘হেবিয়াস কর্পাস’-এর আদর্শের পরিপন্থী। অভিযুক্তকে জামিন না দেওয়া হইলে এই আদর্শ লঙ্ঘনের প্রবল আশঙ্কা থাকিয়া যায়। বিচার সচরাচর বিলম্বিত বলিয়াই এই অন্যায় ভারতের মতো দেশে দ্বিগুণ গর্হিত। অথচ সেই ট্র্যাডিশনই সমানে চলিতেছে। উন্নত দুনিয়ার নজিরগুলি এই অন্যায়কে বিশেষ ভাবে প্রকট করিয়া তোলে, জানাইয়া দেয় উন্নত নামক বিশেষণটি নিছক ইতিহাসের অবশেষ নহে, উহাদের বিচার এবং আমাদের বিচারের মধ্যে এখনও দুস্তর ব্যবধান।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.