মাজরা পোকার আক্রমণে ধান চাষে ক্ষতি হয়েছে। এমনই দাবি কালনা ১ ব্লকের গ্রাম কালনা ও মালতিপুর গ্রামের চাষিদের। তাঁরা জানান, জমিতে বিঘা প্রতি স্বাভাবিক ফলন ২০ মণ। সেখানে এ বার বেশি হলে চার থেকে পাঁচ মণ ফলন মিলবে।
ধাত্রীগ্রাম পঞ্চায়েতের এই দু’টি গ্রামে বেশিরভাগ বাসিন্দারাই চাষাবাদের উপরে নির্ভরশীল। আমন মরসুমে চাষিরা লালস্বর্ণ ও রত্না নামে দুই প্রজাতির ধান চাষ করেন। তাঁদের দাবি, এ বার দুই গ্রামে প্রায় ১২০০ বিঘা জমিতে ধান চাষ হয়েছে। কিন্তু মাজরা পোকার সংক্রমণে নষ্ট হয়ে গিয়েছে বেশিরভাগ জমির ধান। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখা গিয়েছে, জমিতে বেশিরভাগ ধানের শিষ হলুদ হয়ে গিয়েছে। শিষের ভিতরে যে ধান রয়েছে, তাতে নেই শস্য। চাষিদের কথায়, এমন বিপর্যয় আগে কখনও হয়নি। রেওয়াজ অনুযায়ী, আমন ধান তোলার পরেই এই দুই এলাকায় আলুর চাষ শুরু হয়। বেশিরভাগ মাঝারি ও প্রান্তিক চাষিরা ধান বিক্রির টাকায় আলু চাষের বীজ, সার, কীটনাশক-সহ প্রয়োজনীয় সামগ্রী কেনেন। বেশির ভাগ জমিতেই প্রয়োজন মতো ধান না মেলায় আলু চাষ নিয়ে তৈরি হয়েছে ঘোর অনিশ্চিয়তা। সমস্যা আরও বাড়িয়ে দিয়েছে ধানের অভাবী বিক্রি। |
ক্ষতিগ্রস্ত ফলন। নিজস্ব চিত্র। |
গ্রাম কালনার চাষি ইনছুর শেখ বলেন, “বিঘা প্রতি অন্য বার ১২ বস্তা ধান মিললেও মাজরার সংক্রমণে এ বার খুব বেশি হলে মিলবে দুই থেকে তিন বস্তা। যেটুকু ধান মিলবে, তাও ভাল দামে বিক্রি করা যাবে না। কী ভাবে রবি মরসুমে আলুর চাষ করব, তা বুঝতে পারছি না।”
গ্রাম উন্নয়ন কমিটির সচিব ফিরোজ শেখও পেশায় চাষি। তাঁর কথায়, “দুই গ্রামের অনেক চাষি এ বার ফলন কমে যাওয়ার কারণে মাঠ থেকে দান তুলতে চাইছেন না। মাজরার সংক্রমণে ধান চাষে ক্ষতির কতা কৃষি দফতরকেও জানানো হয়েছে।” কালনা ১ ব্লকের কৃষি আধিকারিক আশিস দত্ত বলেন, “ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ কত, তা জানতে ওই দুই এলাকায় ক্রপ কাটিং (নমুনা পরীক্ষা) করা হবে।
মহকুমা কৃষি দফতরের কৃষি বিশেষজ্ঞ নীলয় কর বলেন, “মাজরা পোকা ধান জমিতে উপযুক্ত পরিবেশ পেলেই বংশবিস্তার করে। তারা কাণ্ডের রস খেয়ে নেওয়ায় কাণ্ড দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক সময় গাছটি মরেও যায়। এছাড়া শিষের ভিতরে ধানের শস্য পাওয়া যায় না।” তাঁর দাবি, “মহকুমার অন্য জায়গায় এ বার মাজরা সংক্রমণের ঘটনা ঘটেনি। কেন ওই দুই গ্রামেই ওই সংক্রমণ হল, তা খোঁজ নিয়ে দেখা হবে।” |