গত বাম পরিচালিত বোর্ড বিভিন্ন প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে খরচ করায় বর্তমান শিলিগুড়ি পুরসভা আর্থিক সঙ্কটে ভুগছে বলে জানিয়ে দিলেন রাজ্যের উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী গৌতম দেব। আর এই কথা মেয়র গঙ্গোত্রী দত্ত কেন বলেননি তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন মন্ত্রী গৌতমবাবু। গত সোমবার বাজেট বৈঠকে দীর্ঘদিন ধরে হোল্ডিং ট্যাক্স বকেয়া পড়ে থাকা, ভূমিকম্পের পর ক্ষতিপূরণ বাবদ কোনও টাকা না পাওয়া-সহ আর্থিক সঙ্কটের কথা জানান মেয়র। মঙ্গলবার সকালে উত্তরবঙ্গ উন্নয়ন মন্ত্রী বলেন, “দীর্ঘদিন ধরে বকেয়া কর আদায়ের কথা আমি বলছি। হোল্ডিং ট্যাক্স আদায়ের জন্য দ্রুত অন্তর্বর্তী সমীক্ষা করতে হবে। বাম আমলে এক প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করায় এই আর্থিক সঙ্কট হচ্ছে। মেয়র বিষয়টি কেন বলছেন না বুঝতে পারছি না। আর ভূমিকম্পের ক্ষতিগ্রস্ত বস্তি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, হাসপাতালের মেরামতির বিষয়টি শুধু সরকার দেখবে। বাকি পুরসভাকেই দেখতে হবে।” তিনি জানান, ইতিমধ্যে পুরসভার ‘ফিক্সড গ্রান্ট’ অনেকগুণ বাড়ানো হয়েছে। এখন তা ৫৭.৮০ লক্ষে দাঁড়িয়েছে। বেতন বাবদ বকেয়া ৪ কোটি টাকা পুরসভা পেয়েছে। আরও ৩০ লক্ষ টাকা পুরসভা পাবে। তারও দ্রুত ব্যবস্থা করা হচ্ছে। এ ছাড়া কেন্দ্রীয় প্রকল্পের টাকা তো আছেই। পুরসভা সূত্রের খবর, হোল্ডিং ট্যাক্স বাবদ পুরসভা প্রায় ১৫ কোটি টাকা বকেয়া হয়েছে। এ ছাড়া ১ লক্ষ বাড়ি, ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান শহরে নতুন করে তৈরি হয়েছে। সেগুলি থেকে কর আদায় করা গেলে ওই পরিমাণ আরও বাড়তে পারে। প্রকল্পের টাকা অন্য খাতে গেলে নির্দিষ্ট প্রকল্পের ‘ইউটিলাইজেশন সার্টিফিকেট’ না পেলে নতুন করে টাকা আসায় সমস্যা বাড়ে। মন্ত্রী অভিযোগ করেন, “তৃণমূল বোর্ডে যোগ দেওয়ার আগে এবং বাম আমলে বহু ভবনের অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। সেগুলি ঠিকঠাক নিয়ম মেনে হয়নি। ওই সব ভবনই ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আমার দফতর থেকে বস্তি, একটি ভবনের কাজ করা হচ্ছে। কয়েকটি বহুতলের ক্ষেত্রে ‘প্রোমোটারদে’র সঙ্গে কথা বলে মেরামতির ব্যবস্থা করা হয়েছে। সব কিছু তো রাজ্য সরকার করে দিতে পারবে না।” প্রশাসনিরক সূত্রের খবর, গত ১৮ সেপ্টেম্বর ভূমিকম্পের পর পুরসভার প্রথমে ক্ষতির হিসাব করে ২৪৭ কোটি টাকা। পরে বিস্তারিত সমীক্ষার পর তা দাঁড়ায় ৩০ কোটিতে। পাহাড় মিলিয়ে বাকি জেলার ক্ষেত্রে তা দাঁড়িয়েছে ৪৫০ কোটি টাকার মত। জলপাইগুড়ির ক্ষতির অঙ্কটি ১৫ কোটি। রাজ্য সরকারের তরফে তা কেন্দ্রীয় সরকারকে জানানো হয়েছে। জাতীয় দুর্যোগ মোকাবিলা দলের প্রতিনিধিরা শিলিগুড়ি-সহ জেলার অবস্থা দেখে গিয়েছেন। মন্ত্রী বলেন, “কেন্দ্রীয় সরকার ১২০ কোটি টাকা দিয়েছে বিভিন্ন মাধ্যম থেকে বলা হচ্ছে। আদতে তা জেলার আগের আয়লার ক্ষতিপূরণের টাকার একটি অংশ। কেন্দ্র যাতে টাকা দেয় তার জন্য মেয়রকেও দরবার করতে হবে।” বাম আমলের এক খাতের টাকা অন্য খাতে ব্যবহার করায় সমস্যা যে বেড়েছে তা স্বীকার করে নিয়েছেন মেয়র গঙ্গোত্রীদেবী। তিনি শুধু বলেন, “আগে বহুবার আমরা এই কথা বলেছি। মন্ত্রী হয়ত বিষয়টি খেয়াল করতে পারেননি। আর আগামী ৪ নভেম্বর আমি দিল্লি যাচ্ছি। সেখানে বিভিন্ন প্রকল্পের জন্য টাকা বরাদ্দের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করব। বাকি বিষয়গুলিও আমরা দেখছি।” পুরসভা সূত্রের খবর, প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের সিকিম সফরের সময় মেয়র-সহ কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধি দল শহরের ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতির বিষয়টি প্রধানমন্ত্রীকে জানিয়ে আর্থিক অনুদানের দাবি জানিয়েছেন। এক খাতের টাকা অন্য খাতে খরচের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের নুরুল ইসলাম। তিনি বলেন, “আমাদের তৎকালীন বোর্ড ওই কাজ করেনি। মূল্যবৃদ্ধির জন্য কিছু কিছু ক্ষেত্রে অতিরিক্ত বরাদ্দ করতে হয়েছিল মাত্র। আর নতুন বোর্ড অনেক প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। এখন টাকা জোগাড়ের দায়িত্ব ওঁদের।” |