আগামী শুক্রবার কলকাতায় চা বাগানের শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি নিয়ে ফয়সালা না হলে, বৈঠকের পরেই লাগাতার চা বাগান ধর্মঘটের ঘোষণা করতে পারে শ্রমিক সংগঠনগুলি। বর্তমানে একজন চা শ্রমিক দৈনিক ৬৭ টাকা ৫০ পয়সা হারে মজুরি পেয়ে থাকেন। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে চা বাগানের শ্রমিকদের নুন্যতম ২০০ টাকা মজুরি বা সরকারি হারে মজুরি দেওয়ার দাবি জানিয়েছে। গত ৩১ মার্চ থেকে দফায় দফায় চা শ্রমিকদের নতুন মজুরি হার স্থির করতে রাজ্য সরকার, মালিকপক্ষ এবং শ্রমিক পক্ষের ত্রিপাক্ষিক বৈঠক হলেও কোনও বৈঠকেই কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এপ্রিল মাস থেকে নয়া হারে মজুরি কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও কোনও বৈঠকেরই নিষ্পত্তি হয়নি। পুরানো চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়ার পরে সাত মাস কেটে গেলেও নতুন মজুরি চুক্তি করা সম্পাদন করা হয়নি। সে কারণেই চা শ্রমিক সংগঠনগুলি নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কলকাতায় আগামী বৈঠকে সমাধানসুত্র বের না-হলে চা বাগানে লাগাতার ধর্মঘট-সহ উত্তরবঙ্গ জুড়ে বিক্ষোভ, অবরোধ আন্দোলনের পথে যাওয়া হবে। চা শ্রমিক সংগঠনগুলির দুটি বৃহৎ মঞ্চ কো অর্ডিনেশন কমিটি এবং ডিফেন্স কমিটির নেতৃত্ব নিজেদের মধ্যে বৈঠক করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্তও নিয়েছে। স্থির হয়েছে, আগামী বৈঠকেও ফল না মিললে রাজ্য সরকার ও মালিকপক্ষ উভয়কেই চাপে রাখতে বৈঠকের শেষেই সাংবাদিক বৈঠক করে লাগাতার ধর্মঘট সহ অনান্য আন্দোলনের কথা ঘোষণা করা হবে। পাশাপাশি আগামী ত্রিপাক্ষিক বৈঠক নিয়ে দুটি নির্দিষ্ট দাবিও পেশ করেছে চা শ্রমিক সংগঠনগুলি। প্রথমত একদিনে বৈঠকে ফয়সলা নাও হতে পারে এমন সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখে শুধু ৪ নভেম্বর নয়, পরের দিন ৫ নভেম্বর শনিবারও বৈঠকের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবেয় প্রতি সংগঠন থেকে দু’জন করে প্রতিনিধিকে বৈঠকে যোগ দিতে হবে। শ্রমিক সংগঠনগুলি জানিয়েছে, রাজ্য সরকারের শ্রম দফতর থেকে দুটি দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। চা শ্রমিক সংগঠনগুলির কো অর্ডিনেশন কমিটির আহ্বায়ক চিত্ত দে বলেন, “কত দিন আর অপেক্ষা করে থাকব? এবারের বৈঠকে কোনও সিদ্ধান্ত না-হলে কলকাতা থেকেই আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা হতে পারে। এ বিষয়ে ডিফেন্স কমিটির সঙ্গেও আমাদের আলোচনা হয়েছে।” ডিফেন্স কমিটি অব প্ল্যান্টেশন ওয়ার্কাসের আহ্বায়ক সমীর রায় বলেন, “একজন চা শ্রমিক বা চা বাগানের স্টাফেরা যা মজুরি পান তা অত্যন্ত কম। সরকারি দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীও তার থেকে অনেক বেশি মাইনে পান। আমরা সরকারকে প্রস্তাব দিয়েছি, হয় সরকারি হারে মজুরি দেওয়া হোক, না হলে নিদেন পক্ষে একশো দিনের কাজের হারে মজুরি প্রদানের ব্যবস্থা হোক। তবে আলোচনার মধ্যে দিয়েই তো আট মাস চলে গেল। আশা করি সরকারের শুভবুদ্ধির উদয় হবে এবং আগামী বৈঠকে সর্বজনগ্রাহ্য সমাধান সূত্র বের হবে। না-হলে আন্দোলনের পথে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।” চলতি বছরের মার্চ মাসে চা শ্রমিকদের মজুরি চুক্তি শেষ হয়ে গিয়েছে। কো অর্ডিনেশন কমিটির তরফে শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি দৈনিক ১৬৫ টাকা এবং অতিরিক্ত মহার্ঘ্য ভাতা দেওয়ার দাবি করা হয়। কো অর্ডিনেশন কমিটির দাবি, ১৯৪৯ সালকে ভিত্তি বছর ধরলে মূল্য সূচক বর্তমানে ৫০ গুণ বেড়েছে। সেই জন্যই চা শ্রমিকদের ন্যূনতম ২০০ টাকা মজুরি দাবি করা হয়েছে।
|