|
|
|
|
অষ্টম পর্যন্ত ফেল রদে নারাজ শিক্ষক সংগঠন |
নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
শিক্ষার অধিকার আইন অনুযায়ী অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত কোনও পড়ুয়াকে ফেল করানো যাবে না। কিন্তু এ রাজ্যের বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠনই অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল প্রথা উঠিয়ে দেওয়ার বিরোধী। শিক্ষক সংগঠনের নেতারা মনে করছেন, দুর্বল পড়ুয়াদেরও পরের ক্লাসে উঠিয়ে দিলে আখেরে তাদের ক্ষতি তো হবেই। সেই সঙ্গে ক্ষতি হবে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থারই।
শিক্ষার অধিকার আইন ২০০৯ সালে সংসদে পাশ হলেও এ রাজ্যে এখনও তা কার্যকর হয়নি। তবে শীঘ্রই সেই আইন এখানেও বলবৎ হবে বলে জানিয়েছেন শিক্ষামন্ত্রী ব্রাত্য বসু। ওই আইনে বলা হয়েছে, অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল ব্যবস্থা রাখার কোনও প্রয়োজন নেই। ছাত্রছাত্রীদের উপর থেকে চাপ কমানোর জন্য এককালীন পরীক্ষা না-নিয়ে ধারাবাহিক এবং নিরবচ্ছিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে মূল্যায়নের কথাও বলা হয়েছে কেন্দ্রীয় আইনে।
স্কুলশিক্ষা দফতরের দায়িত্ব নেওয়ার পরে ব্রাত্যবাবু বলেছিলেন, ছাত্রছাত্রীদের চাপ কমানোর জন্য পরীক্ষা ও পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার ব্যাপারে তাঁরা ভাবনাচিন্তা করছেন। তখনও মন্ত্রীর এই বক্তব্যের বিরোধিতা করেছিলেন বহু শিক্ষক। এ রাজ্যে প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল ব্যবস্থা রদ করা হয়েছিল বামফ্রন্টের আমলেই। সেই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধেও বিভিন্ন সময়ে প্রতিবাদ হয়েছে। গত মাসে দিল্লিতে একটি বৈঠকে যোগ দিতে গিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে
কথা বলার সময় ব্রাত্যবাবু অবশ্য জানিয়েছিলেন, বর্তমান রাজ্য সরকার অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার পক্ষপাতী নয়। তবে এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি।
রাজ্যের স্কুলশিক্ষা দফতরের গড়া ‘পাঠ্যক্রম কমিটি’ মঙ্গলবার একটি আলোচনাসভার আয়োজন করেছিল। অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ব্যাপারে বিভিন্ন শিক্ষক সংগঠনের মতামত জানতে চাওয়া হয় সেখানে। নিখিলবঙ্গ শিক্ষক সমিতি (এবিটিএ), মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি, বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষক সমিতি, প্রধান শিক্ষক সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ স্কুলশিক্ষক সমিতি, পশ্চিমবঙ্গ শিক্ষক সমিতি-সহ রাজ্যের বেশির ভাগ শিক্ষক সংগঠনই যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি না-করে পাশ-ফেল প্রথা তুলে দেওয়ার বিরোধিতা করেছে সেই সভায়।
অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার নির্দেশ ‘যান্ত্রিক ভাবে’ রূপায়ণ করলে তা ‘বাস্তবসম্মত’ ও ‘সমাজগ্রাহ্য’ হবে না বলে মন্তব্য করেন এবিটিএ-র সাধারণ সম্পাদক উৎপল রায়। এর জন্য এককালীন পরীক্ষার বদলে নিরবচ্ছিন্ন মূল্যায়নের উপরে জোর দেন তিনি। সরকারি স্কুলশিক্ষক সমিতির মতে, প্রাথমিক স্তরে পাশ-ফেল না-থাকলেও পঞ্চম থেকে অষ্টম শ্রেণিতে তা রাখা দরকার।
সরকারের গড়া পাঠ্যক্রম কমিটির চেয়ারম্যান সুনন্দ সান্যাল পরে জানান, শিক্ষক সংগঠনগুলির মতামত তাঁরা পর্যালোচনা করবেন। কমিটি সরকারকে যে-রিপোর্ট দেবে, তাতে এই আলোচনার প্রতিফলন থাকবে বলে জানান তিনি। এ মাসের মাঝামাঝি পাঠ্যক্রম কমিটির রিপোর্ট জমা দেওয়ার কথা।
শিক্ষামন্ত্রী অবশ্য পাশ-ফেল তুলে দেওয়ার ব্যাপারে এ দিন কোনও মন্তব্য করেননি। তিনি বলেন, “কোন রাজনৈতিক দল কী করেনি, কোন দল কী করেছে সে-সব না-ভেবে, রাজনীতির ঊর্ধ্বে উঠে ভাবতে হবে, কীসে রাজ্যের মঙ্গল হয়। সেই ভাবেই সিদ্ধান্ত নিতে হবে।” তিনি জানান, মন্ত্রিসভার পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে। চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে সেখানেই। |
|
|
|
|
|