জিন্দল-সহ ন’টি প্রকল্প ছাড়পত্র পেল রাজ্যের
রাজ্যের শিল্পমহলকে ইতিবাচক বার্তা দিতে আরও এক ধাপ এগোল মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার।
গত শনিবার মুখ্যমন্ত্রী মহাকরণে বলেছিলেন, “পরবর্তী এক মাস তিনি শুধু শিল্প নিয়েই ‘নাড়াচাড়া’ করবেন।” তাঁর লক্ষ্য পশ্চিমবঙ্গে শিল্প বিপ্লব। মঙ্গলবারই রাজ্য মন্ত্রিসভার শিল্প সংক্রান্ত স্থায়ী কমিটির বৈঠকে শালবনিতে জিন্দলদের ইস্পাত প্রকল্পটিকে দীর্ঘদিনের জমি-জটের রাহু থেকে মুক্তি দেওয়ার ব্যবস্থা করলেন মুখ্যমন্ত্রী। এর ফলে জিন্দলদের প্রকল্পের ক্ষেত্রে কার্যত আর কোনও বাধা রইল না। জিন্দলদের পাশাপাশি আরও কয়েকটি বেসরকারি শিল্প সংস্থা এ দিন জমি-জট থেকে মুক্তি পেয়েছে।
বাম আমলে কাজ শুরু করা জিন্দলদের কারখানা ভূমি আইনের ঊর্ধ্বসীমা (২৪ একর) থেকে ২৭০ একর বেশি জমি কিনেছিল। এ দিন সেই অতিরিক্ত জমিকে শিল্পের জন্য ব্যবহারের ‘ছাড়পত্র’ দিল নতুন সরকার। নিয়ম হল, ঊর্দ্ধসীমার বেশি জমি রাখতে গেলে জমি অধিগ্রহণ আইনের ১৪ (ওয়াই) ধারায় সরকারের অনুমতি নিতে হবে। সেই কাজটা এত দিন না হওয়ায় সমস্যা তৈরি হয়েছিল। এ দিন ঠিক হয়, অতিরিক্ত জমি ‘খাস’ করে জিন্দল গোষ্ঠীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হবে। এ জন্য জমির বাজার দরের ২% অর্থ সরকারকে দিতে হবে তাদের।
নতুন সরকারের শিল্পভাবনা নিয়ে বণিকমহলে যে সংশয় রয়েছে, সেটা বুঝেই এ দিন বৈঠক শেষে শিল্পমন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় বলেন, “রাজ্যের বণিককুলের প্রসঙ্গ তুলে একটা ভাবনা তৈরির চেষ্টা চলছে যে, রাজ্য সরকার শিল্পের ব্যাপারে ততটা আগ্রহী নয়। কিন্তু বণিকমহলকে আশ্বস্ত করার জন্য রাজ্য সরকার এ দিনের বৈঠকে মুখ্যমন্ত্রীর উদ্যোগে জমি সংক্রান্ত জটিলতাগুলির ফয়সালা করে দিল। সরকার মনে করে, জমি কোনও সমস্যাই নয়। আসল সমস্যা হল, বিদ্যুৎ, পরিকাঠামো, লালফিতের ফাঁস, প্রভৃতি। সত্যিসত্যিই শিল্প গড়তে যারা বাড়তি জমি ব্যবহার করবে, তেমন বেশ কয়েকটি সংস্থাকে ভূমি আইনের ঊর্ধ্বসীমা সংক্রান্ত বিধিনিষেধ থেকে ছাড় দিল রাজ্য সরকার।”
বাড়তি জমিতে ছাড়পত্র
• শালবনিতে জিন্দল স্টিল
• খড়্গপুরে এসিসি
• জামুরিয়ায় সুপার মেটাল স্টিল
• হাওড়ায় প্যাটন
• হাওড়ায় ফাউন্ড্রি পার্ক
ছাড়পত্র
•কল্যাণীতে ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট
অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি
পার্থবাবু জানান, এ দিন যে সব সংস্থার ঊর্ধ্বসীমার বেশি জমিকে বৈধতা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার মধ্যে রয়েছে হাওড়ায় প্যাটন সংস্থার প্রকল্প, বর্ধমানের জামুড়িয়ায় সুপার মেটাল স্টিল প্ল্যান্টের প্রকল্প, হাওড়ার ফাউন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশন প্রস্তাবিত ফাউন্ড্রি পার্কের জমি, বাঁকুড়ায় শোভা ইস্পাত ও অঙ্কিত সংস্থার প্রকল্প। এর মধ্যে ফাউন্ড্রি পার্ক ও অঙ্কিতের জমি নিয়ে আইনগত কিছু সমস্যাও রয়েছে। সরকারি সূত্রের বক্তব্য, সে সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হবে। এ দিন ছাড়পত্র পাওয়ার তালিকায় রয়েছে খড়্গপুরে এসিসি সংস্থার প্রকল্পও। শিল্পমন্ত্রী জানান, এই সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার আগে জমির প্রকৃত ব্যবহার সম্পর্কে বাড়তি কিছু তথ্য চাওয়া হয়েছে। এ দিনের বৈঠকে মোট ১৪টি সংস্থাকে ছাড়পত্র দেওয়ার প্রস্তাব ওঠে। তার মধ্যে ছাড়পত্র দেওয়া হয়েছে ৯টিকে। বাকি পাঁচটির ক্ষেত্রে আরও তথ্য চাওয়া হবে।
ছাড়পত্র দিলেও কয়েকটি ‘শর্ত’ মানতে হবে বলে এ দিন সংস্থাগুলিকে জানিয়েছে রাজ্য। যেমন, যে উদ্দেশ্যে জমি নেওয়া হয়েছে, তিন থেকে চার বছরের মধ্যে সেখানে কাজ শুরু করতে হবে। তা না হলে আসল-সহ অতিরিক্ত জমি ফেরত নিয়ে নেওয়া হবে। পার্থবাবু জানান, শিল্পের জন্য কোনও সংস্থা যে পরিমাণ জমি দাবি করবে, তার যৌক্তিকতা যাচাই করে দেখবে সরকার।
বাম আমলে ১৪ (ওয়াই)-এ ছাড়পত্র দেওয়ার জন্য প্রত্যেক সংস্থার ক্ষেত্রে একই হারে (২%) মাসুল নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল। নতুন সরকার ঠিক করেছে, এ দিনের বৈঠকে ছাড়পত্র পাওয়া সংস্থাগুলির থেকে মাসুল নেওয়ার বিষয়টি ‘কেস টু কেস’ বিবেচনা করা হবে। বৈঠকে শিল্পমন্ত্রী ছাড়াও অর্থমন্ত্রী অমিত মিত্র, বিদ্যুৎমন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, শ্রমমন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু এবং পূর্তমন্ত্রী সুব্রত বক্সী ছিলেন।
পার্থবাবুর মতে, জিন্দলরা জঙ্গলমহলের শালবনির মতো অনুন্নত জায়গায় শিল্প গড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সেটা খেয়াল রেখেই মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ক্ষেত্রে ১৪ (ওয়াই) ধারার বিধিনিষেধ শিথিল করার সিদ্ধান্ত নিলেন। হাওড়ায় ফাউন্ড্রি অ্যাসোসিয়েশনের ৬০ জন সদস্য ফাউন্ড্রি পার্কে শিল্প করতে আগ্রহী। সেখানে তাঁরা গবেষণা কেন্দ্রও তৈরি করতে চান। মুখ্যমন্ত্রীকে তাঁরা সেই কেন্দ্রের শিলান্যাস করার অনুরোধ জানিয়েছেন। রাজ্যে টিভিএস মোটরস-এর লগ্নি সম্পর্কে এ দিন শিল্পমন্ত্রী বলেন, “হাওড়ার উলুবেড়িয়ায় আসছে টিভিএস মোটরস। এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করে সেখানে বাইক তৈরির কারখানা হবে। এ জন্য চুক্তি করতে টিভিএস মোটরস-এর যুগ্ম-অধিকর্তা আগামী শনিবার কলকাতায় আসছেন।”
আইআইআইটিকে জমি এ দিন মন্ত্রিসভার বৈঠকে কেন্দ্রীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইআইটি) তৈরির জন্য কল্যাণীতে ৫০ একর জমি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গে এই ধরনের আরও একটি ইনস্টিটিউট করার জন্য কেন্দ্রের কাছে আর্জি জানাবে রাজ্য।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.