আবার শহরের অন্যত্র সরছে বিষ্ণুপুর মেলা। এ বার তুর্কির মাঠ থেকে মেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও পলিটেকনিক কলেজের মাঠে। তখন বড়দিনের জন্য দুই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছুটি থাকায় সমস্যা হবে না বলে জানিয়েছে মেলা কমিটি। জাতীয় মেলার স্বীকৃতি পাওয়া ২৪ বছরের বিষ্ণুপুর মেলা এ বার চতুর্থবারের জন্য ঠিকানা বদলাতে চলেছে।
মঙ্গলবার দুপুরে বিষ্ণুপুরে যদুভট্ট মঞ্চে সাংবাদিক বৈঠকে এ কথা জানান বিষ্ণুপুরের পুরপ্রধান তথা রাজ্যের আবাসন মন্ত্রী শ্যাম মুখোপাধ্যায়। তিনি বলেন, “তুর্কির মাঠের ওই জায়গাটি প্রাণী সম্পদ দফতরের। সেখানে নতুন একটি প্রকল্প তৈরির প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে এ বার বিষ্ণুপুর হাইস্কুল ও পলিটেকনিক কলেজের মাঠে বিষ্ণুপুর মেলা সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।” তিনি জানান, ২৩-২৭ ডিসেম্বর বিষ্ণুপুর মেলা হবে। তখন স্কুল ও কলেজে ছুটি থাকবে। ক্লাস না হওয়ায় প্রতিষ্ঠানগুলিতে শিক্ষার ক্ষতি হবে না।
বিষ্ণুপুর মেলা হত জোড়বাংলা ও লালজিউ মন্দির চত্বরে। ভারতীয় পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ (আকিজ্ঞওলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া) মন্দিরগুলি রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বে রয়েছে। মেলার জন্য মন্দিরগুলির ক্ষতি হচ্ছে বলে অভিযোগ তুলে মেলা অন্যত্র সরানোর দাবি তোলে পুরাতত্ত্ব সর্বেক্ষণ। ২০০৬ সালে মেলা সরিয়ে আনা হয় বিষ্ণুপুর বাইপাসের ধারে অব্যবহৃত বাস টার্মিনাসে। সেখানে প্রয়োজনের তুলনায় জায়গা কম। তার উপর পথ দুর্ঘটনার সম্ভাবনাও মেলা কমিটিকে উদ্বেগে রাখে। খোঁজা হতে থাকে মেলার জন্য অন্য জায়গা। তিন বছর পরে সাত একর জায়গা পাওয়া যায় তুর্কির মাঠে। গত দু’বছর সেখানেই জাঁকিয়ে বসেছিল মেলা। এ বার সেখানেও ‘ঠাঁই নাই, ঠাঁই নাই’ অবস্থা।
|
মেলা কমিটি জানিয়েছে, এ বার বিষ্ণুপুর মেলায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চের সংখ্যা তিন থেকে বাড়িয়ে চার করা হচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের সার্ধশত বর্ষ স্মরণে নতুন মঞ্চের নামকরণ করা হচ্ছে ‘গীতাঞ্জলি’। সাংবাদিক বৈঠকের আগে মেলা কমিটির বৈঠকে এ বার মেলার উদ্বোধক হিসেবে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম উঠে আসে। শ্যামবাবু বলেন, “মেলা কমিটির এই সিদ্ধান্তের কথা আমি মুখ্যমন্ত্রীকে জানাব। তিনি সময় দিতে পারলে আমরা খুশি হব।” তিনি জানান, এ বার মেলার বাজেট ধরা হয়েছে প্রায় ৪৭ লক্ষ টাকা।
মেলা কমিটির সম্পাদক তথা বিষ্ণুপুরের মহকুমাশাসক সুশান্ত চক্রবর্তী জানান, রাজ্য সরকারের পর্যটন, তথ্য ও সংস্কৃতি, অনগ্রসর শ্রেণি কল্যাণ দফতর, পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন, স্বনির্ভর গোষ্ঠী-স্বনিযুক্তি দফতর, ক্ষুদ্র-ছোট উদ্যোগ, বস্ত্র বিভাগ এবং বাঁকুড়া জেলা পরিষদের পৃষ্ঠপোশকতায় ও কেন্দ্র সরকারের পর্যটন-সংস্কৃতি মন্ত্রকের বিশেষ সহায়তায় ও বাঁকুড়া জেলা প্রশাসনের ব্যবস্থাপনায় এই মেলার আয়োজন করা হয়। তিনি বলেন, “এই মেলার উদ্দেশ্য হল বাঁকুড়া জেলার ঐতিহ্যবাহী শিল্প-সংস্কৃতিকে তুলে ধরা ও পর্যটনের প্রসার সাধন।” সঙ্গীত শিল্পী যদুভট্ট, গোপেশ্বর বন্দ্যোপাধ্যায় ও সাংবাদিক রামানন্দ বন্দ্যোপাধ্যায়ের নামাঙ্কিত মঞ্চে জেলা ও বাইরে শিল্পীরা অনুষ্ঠান পরিবেশন করবেন। গীতাঞ্জলী মঞ্চে রবীন্দ্র ভাবনার প্রকাশ ঘটবে। দর্শণার্থীদের সুবিধার জন্য মেলার দিনগুলিতে বিশেষ বাস ও ট্রেন চালানোর জন্য সংশ্লিষ্ট মন্ত্রক ও দফতরগুলিতে প্রস্তাব পাঠাচ্ছে প্রশাসন। |