ভাষা আন্দোলনের কথা মনে করলে পুরুলিয়া জেলার অনেকের গায়ে কাঁটা দেয়। প্রবীণদের ঝাপসা চোখের সামনে যেন কত ছবি ছায়াছবির মতো ভেসে আসে। সেই ভাষা আন্দোলনেরই স্মৃতি সৌধ অবহেলায় পড়ে রয়েছে।
পুঞ্চা ব্লকের পাকবিড়ার মাঠে ভাষা আন্দোলনের প্রতীক স্মৃতি সৌধের এখন এমনটাই দুরাবস্থা। ২০০৬ সালে এই পাকবিড়ার মাঠে পুরুলিয়ার বঙ্গভূক্তির সূবর্ণ জয়ন্তী অনুষ্ঠানে এসেছিলেন তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। তখনই স্থির হয় ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিকে মর্যাদা দিতে এখানেই গড়ে তোলা হবে স্মৃতি সৌধ।
তারপরে স্মৃতি সৌধ তৈরি হওয়ার কাজ শুরু হয়েছিল। কিন্তু, সেই কাজ এখনও শেষ হয়নি। ইঁটের গাঁথুনি অসমাপ্ত হয়ে পড়ে রয়েছে। সেই সৌধের গায়ে ঘুঁটে দেওয়া হয়। স্মৃতি সৌধ চত্বর এখন গোচারণ ভূমি। এই অসমাপ্ত সৌধের বা চত্বরের তাৎপর্য কী তা এলাকার একাংশের কাছে অজানা। যেমন কোমরে ঝুড়ি নিয়ে মাঠ থেকে থেকে গোবর তুলছিলেন এক বৃদ্ধা। তিনি বলেন, “ওই ঘরটা কে ঘুঁটে দিয়েছিল জানি না। আমি দিইনি।” গরু-ছাগল চড়াচ্ছিলেন গুরুপদ মাহাতো। তিনি বলেন, “এখানে একটা ঘর তৈরি হচ্ছে বলে জানি। তবে কারা থাকবে, কী করবে জানি না।”
|
এই স্মৃতি সৌধ গড়ার দায়িত্বে থাকা কমিটির সহ-সভাপতি তথা সিপিএমের পুঞ্চা জোনাল কমিটির সম্পাদক বিপদতারণ শেখরবাবু বলেন, “১০ বছর ধরে ওই স্মৃতি সৌধ তৈরি করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। সাংসদ তহবিল থেকে এখনও পর্যন্ত সাত লক্ষ টাকা খরচ করে কিছুটা কাজ করা গিয়েছে। ফের সাংসদ তহবিলের টাকা পাওয়া গেলে বাকি কাজ করা হবে।” ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত থাকা লোক সেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতো জানান, তৎকালীন মানভূম জেলার বাসিন্দারা বঙ্গভাষী হওয়া সত্বেও বিহারের মধ্যে ছিল। প্রায় ন’বছর ধরে তাঁরা ভাষা আন্দোলন চালিয়ে যান। এই জেলাকে পশ্চিমবঙ্গে অর্ন্তভূক্ত করার জন্য পাকবিড়ার মাঠ থেকে এক হাজার সত্যাগ্রহী কলকাতা পর্যন্ত পদযাত্রা করেছিলেন। ১৯৫৬ সালের ১ নভেম্বর দাবি আংশিকভাবে পূরণ হয়। তাঁর আক্ষেপ, “পাকবিড়ার স্মৃতি সৌধ পাঁচ বছরেও শেষ করতে না পারা আমাদের লজ্জা।”
ফের নাম বদলের দাবি। মানভূম চেতনা মঞ্চের সুরে পুরুলিয়া জেলার নাম পরিবর্তনের দাবি তুললো লোক সেবক সঙ্ঘ। মঙ্গলবার পুরুলিয়ার জন্মদিন অথাৎ এই রাজ্যে অর্ন্তভূক্তি উপলক্ষে লোক সেবক সঙ্ঘের সচিব সুশীল মাহাতো এই দাবি করেন। তিনি বলেন, “পুরুলিয়া লাগোয়া যে এলাকার বাসিন্দাদের মাতৃভাষা বাংলা সেই এলাকা এই জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করে মানভূম নাম রাখতে হবে।” |