নৈহাটির গয়না, পোশাকেই জমকালো সাজ জগদ্ধাত্রীর
সাড়ে সাত ফুটের মুকুটটাতে গোল করে অসংখ্য প্রবাল আর হীরে বসানো। মুকুটের ঠিক মাঝখানে একটা বড়সড় পান্না। চারপাশ জুড়ে চুনি। চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়া মুকুটটায় আলো যেন ঠিকরে পড়ছে।
তবে হীরে-জহরত যা আছে সবই অবশ্য ঝুটো। প্লাস্টিকের তৈরি চুনিগুলো দেখিয়ে শিল্পী ভোলানাথ রায় বললেন, ‘‘ওগুলোই আছে প্রায় দেড় কেজি ওজনের। বাকি পাথরের ওজনও কম হবে না। চন্দননগরের প্রতিমার মাথায় বসবে এই মুকুট।’’ গঙ্গার এক পারে শারদোৎসবের শেষ লগ্নে শুরু হয়েছে জগদ্ধাত্রী পুজো। আর অন্য পারে চলছে দেবীর সাজ-সজ্জার তোড়জোড়। জগদ্ধাত্রী পুজোয় চন্দননগর বিখ্যাত তার ঐতিহ্যের জন্য। বিশালাকায় প্রতিমা, রাজকীয় বেশ, আলোর ছটায় মৃণ্ময়ী দেবী যেন চিন্ময়ী হয়ে ওঠেন। বিশাল বিশাল প্রতিমার সাজ-পোশাক, অলঙ্কার তৈরি হয় ছ’মাসেরও বেশি সময় ধরে। আর দেবীর এই যাবতীয় সজ্জা তৈরি হয় গঙ্গার অন্য পারে নৈহাটির শিল্পীদের ঘরে।
ভোলানাথ রায়ের বংশানুক্রমিক পেশা প্রতিমার সাজ-সজ্জা তৈরি। নৈহাটির বিজয়নগরের ঘিঞ্জি গলিতে ছোট্ট ছোট্ট কয়েকটি ঘরে স্টুডিও। পাশেই ভোলানাথবাবুর দাদা নারায়ণচন্দ্র রায়ের স্টুডিও। নামেই দু’জনের স্টুডিও।
ষষ্ঠীতে বোধনের আগে দেবীর সাজ পাঠানোর তোড়জোড়। -নিজস্ব চিত্র।
পাড়ায় ঢুকলে মনে হবে যেন মহা কর্মযজ্ঞ চলছে। রাস্তার উপরেই প্রতিমার অঙ্গবস্ত্র, চালচিত্র বিছিয়ে তাতে মণি-মাণিক্য বসিয়ে চলেছেন শিল্পীরা। শিল্পীর সংখ্যা একশ’র বেশি। কেউ শোলা কাটেন, কেউ রং করেন, জরি বসান, কেউ আবার পোশাকের টুকরোগুলি এক এক করে জোড়েন। পোশাকের সঙ্গে মিলিয়ে তৈরি করা হয় মুকুট, চালচিত্র। কাগজের উপর আঁকা ওই নকশাও ব্যবহার হয় একবারের জন্যই। প্রতি বছর নকশা বদলায়।
প্রতিমার পোশাকেও পরিবর্তন এসেছে এখন। আগে চন্দননগরের প্রতিমা মানেই তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকত ডাকের সাজ। আর ডাকের সাজ মানেই শোলার কাজ। কিন্তু শোলা দিয়ে আর কাজ করতে চাইছেন না এখনকার শিল্পীরা। একদিকে শোলার জোগান কম তার উপর ঊর্দ্ধমুখী দাম। শোলার বিকল্প হিসাবে থার্মোকল ব্যবহার করা হলেও জগদ্ধাত্রীর পোশাক তৈরিতে থার্মোকলের চেয়েও কাগজ বেশি সুবিধাজনক বলে মনে করেন শিল্পীরা।
ভোলানাথবাবু বলেন, ‘‘শোলার দিন শেষ। এখন আর ভালো শোলা পাওয়া যায় না। জগদ্ধাত্রীর সাজ শোলা না হলে কি মানায়। কিন্তু এখন তো সবেতেই আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে। ঐতিহ্যবাহী পুজোতে জাঁক-জমক, আলোর রোশনাই বাড়াতে সাজ-সজ্জাকে আধুনিক করা হয়েছে। প্রতিমার পোশাকে রঙের বৈচিত্র্য এনে নজরকাড়া করছি। উদ্যোক্তারাও এ সব চাইছেন।’’
চন্দননগরের দশটি বড় প্রতিমার সাজ-সজ্জা তৈরি করেছেন ভোলানাথবাবু ও তাঁর অধীনস্থ কারিগরেরা। ব্যারাকপুর শিল্পাঞ্চল ছাড়াও কলকাতার বেশ কয়েকটি বড় প্রতিমার সজ্জাও তৈরি করেছেন। মঙ্গলবার, ষষ্ঠীর দুপুরে চন্দননগরের একটি প্রতিমার মুকুট তৈরি করে নিয়ে যাওয়ার তোড়জোড় করছিলেন।
শিল্পী বললেন, ‘‘বারো মাসে তেরো পার্বন। সারা বছর ধরেই প্রতিমার সাজ তৈরি করি। জগদ্ধাত্রী পুজোর আগে হাতে সময় কম থাকে। কিন্তু বিশাল এই সাজ তৈরি করতে গিয়ে নিজের মধ্যেও কেমন যেন একটা ভক্তি ভাব আসে। আগে শুধু আমাদের স্টুডিওতেই এই কাজ হতো। এখন আমার ও দাদার ছাত্ররা কেউ কেউ আলাদা স্টুডিও করেছে। কাজও করছে ভালই। আমরা চাই এই শিল্পের প্রসার হোক। লোকে জানুক আমাদের ভাবনা আর পরিশ্রমের পরিচয়।’’



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.