নিজস্ব সংবাদদাতা • কৃষ্ণনগর |
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি ও শ্রমিক সঙ্কটে জেরবার মৃৎশিল্পী থেকে শুরু করে মণ্ডপ শিল্পী সকলেই। ফলে কৃষ্ণনগরের জগদ্ধাত্রী পুজোয় উৎকৃষ্ট মানের নিখুঁত মণ্ডপ বা প্রতিমা উপহার দিতে গিয়ে হিমসিম খেতে হচ্ছে এই সব শিল্পীদের। অবস্থা এমনই যে, পুজোর আগে মণ্ডপ পুরো তৈরি করা যাবে কি না, তা নিয়ে সংশয়ে পড়েছেন কেউ কেউ। মণ্ডপশিল্পীদের দাবি, বেশি টাকা রোজগারের জন্য বহু শ্রমিকই এই পেশা ছেড়ে বাইরে কাজে যোগ দিয়েছেন। ফলে বেশি পারিশ্রমিক দিয়েও দক্ষ শিল্পী পাওয়া যাচ্ছে না। ফলে বাধ্য হয়েই দিনমজুর বা অন্য পেশার শ্রমিকদের বেশি মজুরি দিয়ে নিয়ে আসতে হচ্ছে। তাতে কাজ তো দ্রুত হচ্ছেই না, সঙ্গে কাজের গুণগত মান বজায় রাখতেও নাজেহাল হতে হচ্ছে।
মণ্ডপ শিল্পী শুভেন্দু বিশ্বাস বলেন, “এই মুহূর্তে মণ্ডপ তৈরির সব থেকে বড় সমস্যা শ্রমিক সঙ্কটই। কারণ সময় আর নেই। কিন্তু দ্রুত কাজ তুলব কী করে, যদি দক্ষ শ্রমিক না থাকে।” তাঁর কথায়, “বেশিরভাগ দক্ষ শ্রমিকই বেশি মাইনের জন্য বাইরে কোনও রাজ্যে কাজ করতে চলে গিয়েছেন। তারপরেও যে শ্রমিক মিলছে, তাঁরা বেশি পারিশ্রমিক দাবি করছেন। তার উপরে বেড়ে গিয়েছে কাপড়, বাঁশ, কাঠ, পেরেক সহ মণ্ডপ নির্মাণের সব উপকরণেরই দাম।” গত বার যে বাঁশের দাম ছিল ৪০ টাকা, তা এ বার ১০০ টাকা। গত বার শ্রমিকদের পারিশ্রমিক ছিল ১০০ টাকা, এ বার তা বেড়ে হয়েছে ১৫০ টাকা।
আর এক মণ্ডপ শিল্পী দীপক বিশ্বাস বলেন, “আসলে নবীন প্রজন্মের কেউই আর মণ্ডপ নির্মাণের মতো কাজে উৎসাহ দেখাচ্ছেন না। কারণ, এই কাজ তো আর বছরভর পাওয়া যায় না। ফলে শ্রমিকদের অভাব তৈরি হচ্ছে। তার উপরে জিনিসপত্রের দাম বেড়ে যাচ্ছে প্রচণ্ড।” তাঁর দাবি, “পুজো উদ্যোক্তারা তেমন বাজেট বাড়াচ্ছেন না। কিন্তু আমাদের খরচ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে লাভের কড়ি হাতে কিছুই প্রায় থাকছে না। তাতেই তৈরি হয়েছে এই সঙ্কট।”
মৃৎশিল্পীদের সমস্যাও একই। দুর্গাপুজোর সময় থেকেই তাঁদেরও দক্ষ শ্রমিকের অভাবে ভুগতে হচ্ছে। সেখানেও নতুন প্রজন্ম আর প্রতিমা নির্মাণের কাজে আসতে চাইছে না। মৃৎশিল্পী দিলীপ পাল বলেন, “ভাল শ্রমিকও সব ছেড়ে বেশি টাকা পারিশ্রমিকের জন্য অন্য রাজ্যে চলে যাচ্ছে। যারা আসছে, তারা চাইছে দ্বিগুণ পারিশ্রমিক। কিন্তু তারা দক্ষ নয়।” গৌতম পাল বলেন, “টাকা যদি দিতেও চাই তো দক্ষ শ্রমিক মিলছে না। এমনটা চলতে থাকলে ভবিষ্যতে কিন্তু চরম সঙ্কটে পড়তে হবে।” |