এ বার পদ্মার ভাঙনের কবলে মিঠিপুর
ভাঙনের দুর্ভোগ লালগোলার ময়াগ্রামে কিছুটা কম হলেও, পদ্মা পাড়ে ভাঙন শুরু হল জঙ্গিপুরের মিঠিপুরে। গত সাত দিনে প্রায় দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে প্রায় ৯০ ফুট পাড় ধসে গিয়েছে পদ্মাগর্ভে। ভাঙনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে সেখানে। এলাকার মানুষের দাবি, শীতের মুখে জল কমতে থাকার সময়ে এই ভাঙন শুরু হয়েছে। মিঠিপুর গ্রাম পঞ্চায়েতের প্রধান কংগ্রেসের সমিরুদ্দিন শেখ বলেন, “প্রায় ২০ বছর এই এলাকা শান্ত ছিল। গত সাত দিন থেকে এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। মিঠিপুর থেকে বোলতলা পর্যন্ত দেড় কিলোমিটার এলাকা জুড়ে এই ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন মিঠিপুরের ষষ্ঠীতলা এলাকার কয়েকশো পরিবার।”
নদীর পাশেই শিশু শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা চায়না সিংহরায় বলেন, “এ ভাবে ভাঙন চললে আমাদেরও পরিণতি হবে ময়া গ্রামের মতোই। ফলে আমরা আতঙ্কিত। প্রশাসনের সব স্তরে গণ দরখাস্ত দেওয়া হয়েছে।”
জঙ্গিপুরের মিঠিপুরে পদ্মার গ্রাস।
দোরগোড়ায় ভাঙন দেখে ওই এলাকাতে চার ছেলে নিয়ে সংসার বাঁচানোর চিন্তায় পড়েছেন স্বামীহারা বিমলাদেবী। তাঁর কথায়, “প্রায় ৩০ বছর আগে বালুচরী গ্রাম বন্যায় ভেসে যাওয়ার পরে মিঠিপুরের ষষ্ঠীতলায় এসে নতুন করে ঘর তৈরি করি। আবার সেই ভাঙনের মুখেই পড়েছি। এখন কিছু হলে ছেলেমেয়েদের নিয়ে কোথায় দাঁড়াব জানি না।”
জেলা পরিষদের কর্মাধ্যক্ষ ও স্থানীয় এলাকার জেলা পরিষদ সদস্য সোমনাথ সিংহ রায় বলেন, “ভাঙন নিয়ে রীতিমতো উদ্বেগে রয়েছেন সবাই। কিন্তু জেলা পরিষদের সামর্থ্য নেই, সেই ভাঙন রোধ করার কাজের। আমরা সেটা জেলাশাসক থেকে শুরু করে সেচমন্ত্রী, কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী সবাইকেই জানিয়েছি।” তাঁর অভিযোগ, “কেন এই ভাঙন, তা বলবেন নদী বিশেষজ্ঞেরা। কিন্তু গ্রীষ্মের সময় যথেচ্ছ ভাবে নদী থেকে সাদা বালি কেটে নেওয়ার ফলে নদীর ভাঙনের তীব্রতা বাড়ছে।” তিনি বলেন, “আমাদের দফতরের অফিসারেরা সেখানে ঘুরে এসেছেন। তাঁরা যে রিপোর্ট দিয়েছেন, তা রাজ্য সেচ দফতরে পাঠানো হয়েছে।”
রাজ্যের সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া বলেন, “ফরাক্কা বাঁধ থেকে নীচের দিকে ৮০ কিলোমিটার পর্যন্ত ভাঙন রোধের দায়িত্ব ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষেরই। সেক্ষেত্রে মিঠিপুরেও ভাঙন রোধের ব্যবস্থা নিতে হবে তাঁদেরই। আমি কেন্দ্রীয় জল সম্পদ মন্ত্রী পবন বনশলের সঙ্গে কথা বলেছি মিঠিপুর ও ময়া নিয়ে। তিনি ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাসও দিয়েছেন। বিষয়টি জানানো হয়েছে এলাকার সাংসদ প্রণব মুখোপাধ্যায়কেও।”
লালগোলার ময়ায় অস্থায়ী আস্তানায় রান্নাবান্না।
ফরাক্কা বাঁধ কর্তৃপক্ষের সুপারিন্টেন্ডিং ইঞ্জিনিয়ার আর ডি দেশপাণ্ডে বলেন, “জেনারেল ম্যানেজার এখন ছুটিতে রয়েছেন। ২১ নভেম্বর ফরাক্কায় টেকনিক্যাল অ্যাডভাইসারি কমিটির মিটিং রয়েছে। সেখানে বাঁধ কর্তৃপক্ষের পদস্থ কর্তারা থাকবেন। তখনই ভাঙন রোধের ব্যাপারে যা সিদ্ধান্ত নেওয়ার তা নেওয়া হবে।”
এ দিকে, ময়ায় আর নতুন করে কোনও এলাকায় ভাঙন হয়নি। ব্লক অফিস সূত্রে বলা হয়েছে, ভাঙনে ৭৭টি ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারকে এ পর্যন্ত নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাঁদের ত্রিপল, ১২ কেজি করে চাল ও কম্বল দেওয়া হয়েছে মঙ্গলবার দুপুরে।
কিন্তু ভাঙন প্রতিরোধের কাজ শুরু হয়নি এই দিন দুপুরেও। আতঙ্কিত পরিবারগুলি নিজেদের উদ্যোগেই ঘর বাড়ি ভেঙে অন্যত্র চলে যেতে শুরু করেছেন। এই দিন ভাঙন দেখতে লালগোলা কলেজের ছেলেমেয়েরা দলে দলে ভিড় করেছেন লালগোলার ময়ায়। দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্রী বিউটি খাতুন বলেন, “ভাঙন সম্পর্কে আমাদের কোনও ধারণাই ছিল না। তাই ময়ায় স্বচক্ষে ভাঙনের রূপ দেখতে এসেছি।”

ছবি: অর্কপ্রভ চট্টোপাধ্যায়।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.