উৎসবের মুখে নিজেকে নতুন ভাবে সাজিয়ে তুলছে শহর। এক দিকে যেমন আলোর সাজে সেজে উঠছে মহারাজাদের প্রতিষ্ঠিত এই জনপদ, তেমনই নিকাশি থেকে রাস্তা সংস্কারের মাধ্যমে উৎসব প্রাঙ্গণকে সাজিয়ে তোলার কাজও শুরু হয়েছে। জগদ্ধাত্রী পুজোর দিনে শহরের গলিগুলোও আলোয় ঝলমল করতে থাকে। রাস্তার ধারে যাতে নোংরা জমতে না পারে, তার জন্য প্রস্তুত সাফাইকর্মীরা। কৃষ্ণনগরের বেশিরভাগ রাস্তা তাই ঝকঝক করছে এখন। কৃষ্ণনগরের পুরপ্রধান অসীম সাহা বলেন, “এই দিনটির জন্য শহরের মানুষ সারা বছর অপেক্ষা করে থাকেন। বাইরে থেকেও আসেন অনেকে। তাই সকলকে পরিষেবা দিতে আমাদেরও বেশি সক্রিয় থাকতে হয়। শহরের মানুষের আবেগের কথা মাথায় রেখে, শহর সুন্দরভাবে সাজানোর চেষ্টা করি।”
|
প্রথমেই নজর দেওয়া হয়, শহরের সব রাস্তায় সমান ভাবে আলোর ব্যবস্থা করার। গুরুত্বপূর্ণ মোড়গুলো আলোয় মুড়ে দেওয়া হয়। পাশাপাশি শহরের গুরুত্বপূর্ণ পুজোগুলির মণ্ডপে প্রবেশের পথ সংস্কার করা হয়। রাস্তা সংস্কারের এই কাজটিই সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন কৃষ্ণনাগরিকেরাও। সারা শহর এই উৎসবের সময় আবর্জনা মুক্ত হওয়াতেও তাঁদের সন্তুষ্টি বাড়ে। সেই সঙ্গে পুরসভাকে মনে রাখতে হয়, এই সময়ে শহরের বাসিন্দাদের বাড়িতে বেড়াতে আসেন বহু আত্মীয় পরিজন। তাই শহরে এই সময়ে লোক সংখ্যা বেড়ে যায়। সে কারণে জলও বাড়াতে হচ্ছে। আবর্জনা সাফ করার জন্য বাড়তি সতর্কতাও নিতে হচ্ছে।
গত বছর শহরে ১২৫টি পুজো হয়েছিল অনুমতি নিয়ে। এ বার সেই সংখ্যাটা ছাড়িয়ে যাবে বলেই মনে করছে প্রশাসন। আর এই বিশাল সংখ্যার পুজোর ফলে শহরের বিভিন্ন প্রান্তে, পাড়ায় সব পরিষেবাই বেশি লাগবে। প্রশাসনকে প্রস্তুত থাকতে হচ্ছে সে কারণেও। পুরপ্রধান অসীমবাবু বলেন, “আমরা সব রকম ভাবেই তৈরি। আমরা চাই পুজো এ বারও সুন্দর হয়ে উঠুক।”
|
পুজো উদ্যোক্তারাও কিন্তু উৎসব প্রাঙ্গণ পরিষ্কার রাখতে উদ্যোগী। এমনিতেই আলো দিয়ে সাজানোর ফলে এলাকা দেখতে ভাল লাগে। তার উপরে একটা ছুটির পরিবেশ তো থাকেই। অনেকে ভাল জামাকাপড় পরেন, তাই সব মিলিয়ে দৃশ্যত শহরটা সুন্দর হয়ে ওঠে। বুড়ি মা পুজো কমিটির গৌতম ঘোষ বলেন, “প্রচুর মানুষ আসেন এই উৎসবে। তাই একা পুরসভা নয়, তার সঙ্গে হাত মেলাই আমরাও। আমরা চেষ্টা করি, এই ক’টা দিন এলাকা যেন পরিচ্ছন্ন থাকে।” হাতারপাড়া বারোয়ারির দিলীপ বিশ্বাসের কথায়, “পুরসভা পরিষেবা দেওয়ার কোনও কার্পণ্য করে না। তার উপরে আমরাও চেষ্টা করি।” তাঁর বক্তব্য, “এ বার ৭৫ হাজার টাকার আলোর বন্দোবস্ত করেছি আমরা। সেই আলো যখন সন্ধ্যায় জ্বলবে, তখন রাস্তায় সামান্য নোংরা থাকলেও তা বীভৎস দৃষ্টিকটূ লাগবে। তাই আমাদের ছেলেরাই কেবল নয়, এলাকার বাসিন্দারাও সব পরিষ্কার রাখতে চান।” |
ঘূর্ণি স্মৃতি সংঘের গৌতম বিশ্বাস বলেন, “পাড়ার ছেলেরা নিজেরাই উদ্যোগী হয়ে রাস্তা সাফ রাখে। কারণ ওই রাস্তা দিয়েই তো আসবেন দর্শকেরা। আমরা চাই, মণ্ডপে প্রবেশের অনেক আগে থেকেই আমাদের পাড়ার প্রতি তাঁদের ভালবাসা তৈরি হয়ে উঠুক।”
|
দিন-রাত এক করে কাজ চলছে মণ্ডপ ও প্রতিমা নির্মাণের।
কৃষ্ণনগরে ছবিগুলি তুলেছেন সুদীপ ভট্টাচার্য। |