৭৪-এ মহিলা সদস্য এক জনই
প্রদেশে সদস্য বাছতেই
হিমসিম জেলা তৃণমূল
থা ছিল সহমতের ভিত্তিতে চূড়ান্ত হবে তালিকা। কিন্তু প্রদেশ কমিটির সদস্য বাছতে গিয়ে রীতিমতো হিমসিমই খেতে হল পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা তৃণমূল নেতৃত্বকে। দলে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব এমনই তীব্র, প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই গুচ্ছ-গুচ্ছ প্রস্তাব এসে পৌঁছয় জেলা নেতৃত্বের কাছে।
প্রাথমিক ভাবে ঠিক ছিল, সোমবার রাতেই জেলা থেকে প্রদেশের ৭৪ জন সদস্যের নাম রাজ্য নেতৃত্বকে জানিয়ে দেওয়া হবে। সেই মতো ব্লক কমিটির কাছ থেকে নামের তালিকা আগেই চাওয়া হয়েছিল। কিন্তু, নামের সেই তালিকা থেকে চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করতে গিয়ে বাধে বিপত্তি। জেলা তৃণমূল নেতৃত্ব দেখেন, প্রায় প্রতিটি ব্লক থেকেই একাধিক প্রস্তাব এসেছে। গভীর রাত পর্যন্ত চলে ঝাড়াই-বাছাইয়ের কাজ। জেলা তৃণমূলের এক নেতার বক্তব্য, “অনেক ব্লক থেকেই একাধিক প্রস্তাব এসেছিল। সেই সব প্রস্তাব খতিয়ে দেখেই প্রদেশ কমিটির জন্য চূড়ান্ত তালিকা তৈরি করা হয়েছে।”
সবে পাঁচ মাস হল রাজ্যে ক্ষমতায় এসেছে তৃণমূল। এরই মধ্যে জেলায় শাসকদলের ভাবমূর্তি নিয়ে নানা প্রশ্ন উঠেছে। জেলার বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়েই প্রকাশ্যে চলছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্ব। যার প্রভাব পড়ছে সর্বত্র। এই ক’দিন আগে পর্যন্ত যাঁরা সিপিএম-ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিতি ছিলেন, তাঁদেরই একাংশ এখন তৃণমূলে এসে মাতব্বরি করছেন বলে দলেই অভিযোগ উঠেছে। আগে থেকেই তৃণমূল করা অনেকের আচার-আচরণেও ‘বদল’ চোখ এড়াচ্ছে না। বিরোধী এবং সাধারণ মানুষের উপরে নানা ভাবে জোর-জুলুমের অভিযোগ উঠছে সেই ‘মাতব্বর’দের বিরুদ্ধে। জেলা নেতৃত্বের কাছেও এই নিয়ে নিয়মিতই অভিযোগ আসছে। যা নিয়ে এমনিতেই জেরবার জেলা নেতৃত্ব। সেই দ্বন্দ্ব-সমস্যার জের চলল প্রদেশ কমিটিতে সদস্য পাঠানো নিয়েও।
আজ, বুধবার কলকাতায় তৃণমূলের সর্বভারতীয় সভাপতি নির্বাচন। সেই নির্বাচনে গোটা রাজ্য থেকে দলীয় প্রতিনিধি থাকছেন মোট ১৯০০ জন। প্রতিটি ব্লক ও প্রতিটি পুর-এলাকা থেকে দলের দু’জন করে প্রতিনিধি বেছে নেওয়ার কথা। তাঁরাই হবেন প্রদেশ তৃণমূল কংগ্রেস কমিটিরও সদস্য। সেই মতো পশ্চিম মেদিনীপুরের ২৯টি ব্লক ও ৮টি পুর-এলাকা থেকে মোট ৭৪ জন প্রতিনিধি মনোনীত হওয়ার কথা। এই নিয়ে সোমবারই মেদিনীপুরে দলীয় সম্মেলন হয়েছে। যেখানে হাজির ছিলেন দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মুকুল রায়ও। সম্মেলনে মুকুলবাবু শৃঙ্খলা-রক্ষা এবং মজবুত সংগঠন গড়ার উপরে জোর দেন। এমনকী তুলনা হিসাবে সিপিএমের সাংগঠনিক কাঠামোয় দলীয় সংগঠন সাজানোর কথাও বলেন।
কিন্তু পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা নেতৃত্ব প্রদেশের ৭৪ জন সদস্য বাছতেই কার্যত নাস্তানাবুদ হয়েছেন। ব্লক থেকে মুখবন্ধ খামে পাঠানো হয়েছিল প্রাথমিক প্রস্তাব। সেই খামের সংখ্যাই ব্লক-পিছু ছিল একাধিক! সোমবার রাতে সে-সব খাম খুলতেই গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের চেহারাটা আরও এক বার স্পষ্ট হয়ে যায় জেলা তৃণমূল নেতৃত্বের কাছে। সহমতের ব্যাপারে ‘হুইপ’ও যে সে ভাবে কাজ করেনি, স্পষ্ট হয়ে যায়। নারায়ণগড়, পিংলা, কেশপুর, গড়বেতা, দাসপুর, চন্দ্রকোনা তো বটেই অন্য আরও বেশ কয়েকটি ব্লক থেকেই গুচ্ছ-গুচ্ছ প্রস্তাব এসেছে দেখে হিমসিম খান জেলা নেতৃত্ব। খড়্গপুরের মতো পুর-এলাকা থেকে আবার নির্দিষ্ট সময়ে প্রস্তাব পাঠানোই সম্ভব হয়নি দ্বন্দ্বের জেরে।
শেষমেশ মঙ্গলবার সকালে চূড়ান্ত হয় ৭৪ জনের নাম। তালিকায় সংখ্যালঘু নেতা, প্রবীণ নেতাদের নাম রয়েছে, ‘শহিদ’ পরিবারের সদস্যের নামও রাখা হয়েছে। যেমন, বেলপাহাড়ির নিহত তৃণমূল নেতা জলদবরণ করের স্ত্রী অনুশ্রী করের নাম রাখা হয়েছে বিনপুর-২ ব্লক থেকে। দাসপুর-২ ব্লক থেকে প্রবীণ অরুণ মুখোপাধ্যায় (জেলা পরিষদের বিরোধী দলনেতা), দাসপুর-১ ব্লক থেকে শ্যামাপদ পাত্রের নাম চূড়ান্ত হয়।
আশ্চর্যের বিষয়, জেলা থেকে প্রদেশে ৭৪ প্রতিনিধির মধ্যে অনুশ্রীদেবীই একমাত্র মহিলা! যে দলের মাথায় এক জন মহিলা, যে সময়ে সংসদে মহিলাদের জন্য ৩৩ শতাংশ আসন সংরক্ষণের দাবি জোরালো, সেখানে প্রদেশ তৃণমূল কমিটিতে পশ্চিম মেদিনীপুর থেকে কেন মাত্র এক জনই মহিলা?
দলের জেলা সভাপতি দীনেন রায়ের বক্তব্য, “দলের গাইডলাইন মেনেই যাবতীয় কাজ হয়েছে। এর পর রাজ্য নেতৃত্বই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন।” জেলা সভাপতি তাঁদের পাঠানো ৭৪ জনের নামের তালিকাকে ‘চূড়ান্ত’ না বলে ‘সম্ভাব্য’ বলতেই চাইছেন।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.