ইডেনের পিচ নিয়ে টানা নাটকে যবনিকা পড়ল শেষ পর্যন্ত। ইডেন কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়কে সতর্ক করে জানিয়ে দেওয়া হল, ভবিষ্যতে পিচ নিয়ে এমন বিতর্ক আর বরদাস্ত করবে না সিএবি।
প্রথমে ধোনি, তার পর একে একে বাংলার ক্রিকেটারকুল যত দিন এগিয়েছে, তত পিচ নিয়ে ধূমায়িত হয়েছে ক্ষোভ। ধোনি যদি ইডেনের উইকেটকে ‘আগ্লি’ বলে থাকেন, তা হলে বাংলার ক্রিকেটাররাও পিচকে ‘খোঁয়াড়’ বলে দিয়েছেন। এ দিনও বাংলার প্র্যাক্টিসে পিচ নিয়ে একপ্রস্ত নাটক হয়ে যায় কিউরেটর প্রবীর মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে। উইকেটে এ দিন যথেষ্ট ঘাস ছেড়ে রাখা ছিল। বাংলা অধিনায়ক মনোজ তিওয়ারি পিচ নিয়ে কিছু বলছিলেন কিউরেটরকে। কিন্তু তিনি তাতে পাত্তা দেননি। পরে কোচ ডব্লিউ ভি রামনকে এসে পরিস্থিতি সামলাতে হয়।
এখানেই শেষ নয়। পিচ নিয়ে জরুরি সভা ডেকেও বিপত্তিতে পড়তে হয় সিএবি কর্তাদের। প্রেসিডেন্ট জগমোহন ডালমিয়া বৈঠক ডাকার পর জানতে পারেন, কিউরেটর অনেক আগেই সিএবি ছেড়ে চলে গিয়েছেন। তখন ফোনে ধরা হয় প্রবীরবাবুকে। তাঁকে বলা হয়, অসুবিধা কোথায় হচ্ছে সেটা চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে খোলাখুলি জানাতে। যদি কাউকে দরকার (পড়তে হবে বিতাড়িত মহেশ মালি এবং অনাদি সাহু) বলে মনে হয়, তা হলে সে সবেরও ব্যবস্থা সিএবি করবে। কিন্তু আর কোনও রকম বিতর্ক বরদাস্ত করা হবে না।
প্রায় দেড় ঘণ্টা ধরে চলা ম্যারাথন বৈঠক শেষে ডালমিয়া বলছিলেন, “টি-টোয়েন্টিটা যদি ভারত জিতত, তা হলে এত কথাবার্তা হত না। তবে পিচ নিয়ে যখন এত বিতর্ক হচ্ছে, প্রেসিডেন্ট হিসাবে আমার একটা দায়িত্ব তো থাকে। আমি কথা বলেছি প্রবীরবাবুর সঙ্গে।” সঙ্গে সিএবি প্রেসিডেন্ট আরও যোগ করেন, “আমি ওঁকে বলেছি, কেন এ রকম হচ্ছে সেটা দেখতে। সতর্ক হতে বলেছি।”
রঞ্জি ট্রফির উইকেট নিয়েও কথা হয়েছে। কিউরেটরকে বলা হয়েছে, বাংলার ক্রিকেটাররা অভিযোগ করছেন উইকেট নিয়ে। সিএবি-র বক্তব্য, শেষ পর্যন্ত রঞ্জিতে শক্ত, জমাট উইকেটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিউরেটর। কিন্তু এমন আশ্বাসেও ক্রিকেটাররা যে খুব আশ্বস্ত হতে পারছেন তা নয়। বরং ইডেনের উইকেটের হালহকিকত দেখে এ দিন বাংলার এক সিনিয়র ক্রিকেটার বিরক্তিতে বলে ফেললেন, “উইকেটে ঘাস থাকলে কী হবে, মাটিটা তো নরম। আমি দেখেছি। টস হেরে গেলে বাংলাকেই না বিপদে পড়তে হয়।”
সিএবি-তে পিচ নিয়ে এমন চাপান-উতোরের মধ্যেই এ দিন আবার শহরে ঢুকে পড়ল পার্থিব পটেলের গুজরাত। এবং গুজরাত অধিনায়ক পার্থিবও একটা সতর্কতা জারি করে রাখলেন। বলে রাখলেন, তাঁরা ‘আন্ডারডগ’ ঠিকই, কিন্তু বাংলা হালকা ভাবে নিলে ভুলই করবে।
বৃহস্পতিবার ম্যাচ। তার আগে হোটেলের রুমে বসে পার্থিব বলছিলেন, “টিমের ক্যাপ্টেন হিসাবে বলছি, আমাদের হালকা ভাবে নিলে কিন্তু বাংলাকে ভুগতে হবে। যতই আমরা আন্ডারডগ হই না কেন।” তবে বাংলাকে হুঁশিয়ারি দিলেও এক সময়ের অধিনায়ক সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়কে নিয়ে তাঁর শ্রদ্ধা এখনও অটুট। এই প্রথম রঞ্জি ট্রফির কোনও ম্যাচে সৌরভের বিরুদ্ধে নামবেন পার্থিব। বলছিলেন, “দাদি আমার প্রথম টেস্ট ক্যাপ্টেন। কেরিয়ারের শুরুতেই ওকে পেয়েছি। কিন্তু মাঠে খেলাটা তো গুজরাত ভার্সাস বেঙ্গল।” ইডেনের উইকেট স্লো থাকবে তিনি জানেন। কিন্তু যে ভাবেই হোক ম্যাচ থেকে এক পয়েন্ট চাইছেন পার্থিব। বলছেন, “আমাদের লক্ষ্য হবে শূন্য হাতে না ফেরা।” আর বাংলা? পার্থিব বা অন্য কাউকে নিয়ে আলাদা করে ভাবাভাবির ব্যাপার নেই। উল্টে বাংলা কোচ রামন এ দিন শুনিয়ে রাখলেন, “ওদের কাউকে নিয়ে আলাদা করে ভাবছি না। শুধু বলব, গুজরাতের চেয়ে অনেক ভাল খেলবে বাংলা। আমার যা টিম, তাতে ক্ষমতা অনুযায়ী খেললে যে কোনও টিমকে হারানো সম্ভব।” |