সকালে মিনিট পঁয়তাল্লিশের অনুশীলন। বিকেলে ঘণ্টাখানেকের জন্য ফুটবলার এবং কোচ প্রশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়ে ঘুরে আসা মারগাও থেকে আট কিলোমিটার দূরের কোলভা সৈকতে। র্যান্টি মার্টিন্সের ডেম্পোর বিরুদ্ধে নামার আগের দিন মোহনবাগান টিডি সুব্রত ভট্টাচার্যর রুটিন ছিল এ রকম। ফুটবলাররাও সৈকতে কিছু সময় কাটিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে বাসে এসে বসে গেলেন। টিডি এবং কোচেরও আগে।
কঠিন ম্যাচের আগে ফুটবলারদের ফুরফুরে রাখার এর চেয়ে ভাল আর কী উপায় থাকতে পারে? যে ম্যাচে ব্যারেটো নেই! ওডাফাকেও পাওয়া যাবে না! সুব্রতর আক্ষেপ, “ব্যারেটো, ওডাফা, সুরকুমার, প্রদীপ, স্নেহাশিসপাঁচ-ছ’জন ফুটবলারই তো মাঠের বাইরে। সবাই না ফিরলে টিমটা আসল খেলাটা খেলবে কী করে?” তা হলে কি র্যান্টি, ক্লিফোর্ড মিরান্ডা, ক্লাইম্যাক্স লরেন্সদের অভিজ্ঞ টিমের সামনে গুটিয়ে থাকবেন সুনীল ছেত্রী-অসীম বিশ্বাসরা? সতর্ক সুব্রতর গলায় এ চেনা প্রতিবাদ, “ধুর! একেবারেই রক্ষণাত্মক খেলব না। প্রতিআক্রমণের কথা ভেবেই তৈরি হচ্ছি।” |
ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগে বহু ম্যাচ অ্যালেক্স ফার্গুসনকে খেলতে হয়েছে রুনি-বার্বেতোভকে ছাড়াই। আর অনেক কঠিন ম্যাচও ম্যাঞ্চেস্টার ইউনাইটেডকে জিতিয়েছেন চিচারিতো-ওয়েলবেকদের মতো তরুণ ফুটবলারের উপর ভর করে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কোলভা থেকে হোটেলে ফেরার পরে আই লিগের অন্যান্য ম্যাচের ফল নিয়ে আলোচনা করছিলেন সুব্রত। হঠাৎই বলে ফেললেন, “যারা দৌড়তে পারবে তাদেরকেই খেলাব।” হঠাৎ দৌড়ে এত জোর কেন? সুব্রতর কথায়, “অভিজ্ঞ ফুটবলার বেশির ভাগই মাঠের বাইরে। কালকের ম্যাচের জন্য আমার হাতে তরুণ ফুটবলার অনেক। তাই দৌড়নোর ব্যাপারটা মাথায় রাখছি।”
কে বলতে পারে, এই দৌড়ের স্ট্র্যাটেজিতেই হয়তো মারগাও থেকে পুণের বিমানে উঠবেন তিন পয়েন্ট পকেটে নিয়ে? আসলে ব্যারেটো-ওডাফার না থাকা ম্যাচের চরিত্র বেশ খানিকটা বদলে দিয়েছে। ডেম্পোর লড়াই এখন দাঁড়াচ্ছে সুব্রতর মগজের সঙ্গে। বলছিলেন, “পয়েন্ট তোলাটা খুব দরকার এই ম্যাচ থেকে।” সে জন্যই নিজের ঘুঁটি সাজাচ্ছেন হাতে সময় নিয়ে। ধীরে সুস্থে। নিজের মনকে শান্ত রাখার উপকরণও তিনি বয়ে এনেছেন কলকাতা থেকে। দুটি বই। একটি ভগবদ্গীতা এবং অন্যটি বিবেকানন্দের উপর লেখা।
ফরোয়ার্ডে সুনীল-অসীম জুটিকে খেলানোর ইচ্ছা থাকলেও একটু কিন্তু-কিন্তু ভাব এখনও রয়ে যাচ্ছে তাঁর মনে। অসীমের হালকা চোট ডেম্পো ম্যাচে সুনীলের সঙ্গী করে দিতে পারে জাগতার সিংহকে। রক্ষণেও রাইট ব্যাকের জায়গায় ম্যাচের আগের রাতেও কোনও নাম চূড়ান্ত করতে পারেননি মোহন টিডি। স্টপারে আনোয়ারের সঙ্গী হয়তো কিংশুকই। লেফট ব্যাকে নবি। তবে মাঝমাঠ নিয়ে প্রায় কিছুই ঠিক করেননি সুব্রত। এখানেই তরতাজা ফুটবলারের দৌড় দেখতে চাইছেন তিনি। বুধবার ডেম্পোকে রুখে দিতে তাঁর স্ট্র্যাটেজি এই দৌড়ই। মাঝামাঠে জুয়েল রাজা, লিমার থাকা প্রায় নিশ্চিত। বাকি দু’জন ঠিক নেই । সুব্রতর ‘সুবিধা’ একটাই। এই ম্যাচ হারলে গড়পরতা মোহনবাগানপ্রেমী পাড়ার আড্ডায় হয়তো বলবেন, “ব্যারেটো নেই, ওডাফা নেই। হারবে না তো কী? মারগাওতে ডেম্পোকে হারানো কী অতই সোজা!” আর জিতলে মহানায়ক হবেন সুব্রতই। সে সুনীল ছেত্রী বা অসীম যদি গোল করেনও। কারণ গত বার গোয়ায় ডেম্পোর কাছে সুভাষ ভৌমিকের মোহনবাগান ১-৪ হেরেছিল। চিডি, মুরিতালা, ব্যারেটোকে খেলিয়েও! |