নিজস্ব সংবাদদাতা • চন্দননগর |
দিন গেলে ভিড় বাড়বে। তাই ঝুঁকি না নিয়ে অনেকে ভেবেছিলেন ফাঁকায় ফাঁকায় ঠাকুর দেখার পর্ব সেরে নেবেন ষষ্ঠীতেই। কিন্তু তাঁদের অঙ্ক ভুল প্রমাণ করে মঙ্গলবার, ষষ্ঠীর সকাল থেকেই চন্দননগরের পথঘাটে উপচে পড়ল উৎসবপ্রিয় মানুষের ঢল। সূর্য ডুবতে না ডুবতেই সেই ভিড় কার্যত জনস্রোতের আকার নিতে শুরু করে। ষষ্ঠীর দিন যে ভিড় দেখল চন্দননগর, পুজোর বাকি দিনগুলিতে তা কোথায় গিয়ে ঠেকবে তা ভেবে প্রশাসনের কর্তাদের ঘুম ওড়ার জোগাড়। এ দিন ভিড় যে জনস্রোতের আকার নেবে, উদ্যোক্তাদেরও অনেকে তা ভাবেননি। ভিড় শুধু চন্দননগরে নয়, একই ভাবে আছড়ে পড়েছে মানকুন্ডু, ভদ্রেশ্বরেও।
এ দিন অনেক দর্শনার্থী চন্দননগর স্টেশনে ট্রেন থেকে নেমে ঠাকুর দেখা শুরু করেন। আলোর উৎস ধরে অগণিত মানুষ হাঁটতে থাকেন স্টেশন রোড দিয়ে শহরের দিকে। স্টেশন থেকে নেমেই চোখ আটকেছে আলোর রোশনাইতে। সেই আলোই পথ দেখিয়ে নিয়ে যাবে খলিসানি সর্বজনীনের পুজোয়। এ বারে এখানকার পুজোর থিম ‘সপ্তগুণে মহাবিদ্যা’। গাঁজার কলকে এবং ডুগডুগি দিয়ে তৈরি মণ্ডপ। |
মঙ্গলবার চন্দননগরে তাপস ঘোষের তোলা ছবি। |
মণ্ডপের চারদিকে রয়েছে শিবলিঙ্গ এবং দেবী দুর্গার বিভিন্ন রূপ। এখান থেকে বেরিয়ে পায়ে পায়ে ফটকগোড়া সর্বজনীনের পুজোয় গেলে চোখে পড়বে নজরকাড়া মণ্ডপসজ্জা। পুজোর বিষয় ভাবনা ‘সিঁদুর খেলা’। লক্ষ্মীর হাতের সিদুঁরের গাছকৌটোর আদলে মণ্ডপ তৈরি করা হয়েছে পাটের আঁশ দিয়ে। উদ্যোক্তারা জানিয়েছেন, হারিয়ে যেতে থাকা পাটশিল্পকে তুলে ধরতেই তাঁরা মণ্ডপে পাটের আঁশ ব্যবহার করেছেন। এখানকার প্রতিমার উচ্চতা ৩২ ফুট। একটু এগোলেই চোখে পড়বে আলো দিয়ে তৈরি আইফেল টাওয়ার। সেই গেট দিয়ে বেরিয়ে কিছুটা গেলে মধ্যাঞ্চল সর্বজনীন। রাস্তার উপর আলো দিয়ে তৈরি কুতুব মিনার। চন্দননগরের বিখ্যাত আলোর বন্যায় ভাসছে গোটা এলাকা। মহকুমা হাসপাতালের পাশ দিয়ে এগোলে দেখা যাবে কলুপুকুর সর্বজনীনের পুজো। এখানে পুকুরের মধ্যে আলোর যাদু ফুটে উঠেছে।
জিটি রোড ধরে এগোতে থাকলে মনে হবে যেন আলোর মেলা বসে গিয়েছে। আলোকশিল্পীদের হাতের কারিকুরি চেটেপুটে উপভোগ করেছেন মানুষ। রাস্তার দু’ধারে সার দিয়ে খাবারের দোকান। ঝালমুড়ি থেকে ফুচকা, এগরোল, মোগলাই কিংবা চাউমিন, বিরিয়ানি কি নেই সেই পসরায়! রাস্তার ধারে বসে থাকা দোকানির কাছ থেকে সোৎসাহে মেহেন্দি পরছেন মহিলারা।
জিটি রোড ধরে চুঁচুড়ার স্টেশনের দিকে এগোতে থাকে ভিড়। চুঁচুড়া স্টেশন জগদ্ধাত্রী কমিটির পুজোটিও যথেষ্ট নজর কেড়েছে। সুউচ্চ মণ্ডপে সন্ধ্যা থেকেই তিল ধারণের জায়গা ছিল না। চন্দননগরের ঠাকুর দেখে যাঁরা চুঁচুড়া স্টেশন থেকে ট্রেন ধরে বাড়িতে ফিরেছেন, তাঁদের প্রায় সকলেরই শেষ গন্তব্য ছিল স্টেশন-লাগোয়া এই পুজোটি।
পুলিশকর্মীরা অবশ্য ষষ্ঠীর সন্ধ্যা থেকেই যথেষ্ট হিমশিম খেয়েছেন ভিড় সামাল দিতে। আগামী তিন দিনে কাতারে কাতারে মানুষের স্রোত সামাল দিতে তাঁদের যে একই অবস্থা হবে, তা বলাই বাহুল্য। কেন না, ষষ্ঠীর রাত যতই বেড়েছে, ততই যেন জগদ্ধাত্রীর শহরের অলিগলির দখল নিয়েছে কালো মাথার সারি। |