নিজস্ব সংবাদদাতা • কলকাতা |
রাজ্য সরকার বা টাটা মোটরস সিঙ্গুর-মামলা নিয়ে কোনও পক্ষই যে এক ইঞ্চি জমিও ছাড়তে নারাজ, মঙ্গলবার তা বোঝা গেল।
কোন বেঞ্চে মামলার শুনানি হবে, তা নিয়ে আইনি টানাপোড়েনে এ দিন টাটা মোটরসের দায়ের করা আপিল-মামলার শুনানি শুরুই করা গেল না! বল ঠেলে দেওয়া হল প্রধান বিচারপতির কোর্টে। প্রধান বিচারপতি জয়নারায়ণ পটেলের নির্দেশে আজ, বুধবার মামলাটির শুনানি শুরু বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষ ও বিচারপতি মৃণালকান্তি চৌধুরীর ডিভিশন বেঞ্চে।
হাইকোর্টের বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায়ের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে সোমবার টাটা মোটরস-কর্তৃপক্ষ বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চে তাঁদের আবেদন নথিভুক্ত করেছিলেন। সেই মতো এ দিন মামলাটি সেখানে উঠেছিল শুনানির জন্য। কিন্তু সিঙ্গুর-মামলা শোনার কোনও এক্তিয়ার ওই ডিভিশন বেঞ্চের নেই বলে আপত্তি তোলেন রাজ্য সরকারের আইনজীবীরা। সরকারপক্ষের আইনজীবী কল্যাণ বন্দ্যোপাধ্যায় বেঞ্চকে বলেন, হাইকোর্টে বিভিন্ন বিচারপতির বিচার্য বিষয়ের যে এক্তিয়ার স্থির করে দেওয়া রয়েছে, তা অনুযায়ী সিঙ্গুর-মামলার শুনানি এখানে হতে পারে না। তা হতে পারে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে।
কল্যাণবাবু কীসের ভিত্তিতে এ কথা বললেন? তাঁর যুক্তি: রাজ্যের তৈরি ‘সিঙ্গুর-আইন’কে অসাংবিধানিক ও অবৈধ হিসেবে দাবি করে টাটা মোটরস হাইকোর্টে মামলা করেছে। এবং কোনও বিষয় সাংবিধানিক ভাবে বৈধ না অবৈধ, তা বিচারের এক্তিয়ার বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চের উপরেই ন্যস্ত। অপর সরকারি কৌঁসুলি অশোক বন্দ্যোপাধ্যায় ও রাজ্য সরকারের আইনজীবী শক্তিনাথ মুখোপাধ্যায়ও একই মত প্রকাশ করেন।
অন্য দিকে রাজ্যের দাবির বিরোধিতা করেন টাটা মোটরসের আইনজীবী সমরাদিত্য পাল। তাঁর বক্তব্য ছিল: বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চকে এই বিচারের এক্তিয়ার দেওয়া রয়েছে ঠিকই, তবে একই ভাবে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্তের ডিভিশন বেঞ্চেও যে কোনও আপিল-মামলা করা যায়। অতএব শুনানি চলতেই পারে বলে দাবি করেন তিনি।
এই সওয়াল-জবাবের মধ্যে বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত রাজ্যের অ্যাডভোকেট জেনারেল অনিন্দ্য মিত্রের মতামত জানতে চান। অনিন্দ্যবাবু বলেন, এ বিষয়ে আপিল-মামলার বিচারের দায়িত্ব বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চের উপরে নির্দিষ্ট করা রয়েছে। তাই সেখানেই শুনানি হওয়া উচিত। এবং এর পরেই বিচারপতি কল্যাণজ্যোতি সেনগুপ্ত ও বিচারপতি জয়মাল্য বাগচীর ডিভিশন বেঞ্চ মামলাটি পাঠিয়ে দেয় প্রধান বিচারপতির কাছে। তাঁদের তরফে প্রধান বিচারপতিকে জানানো হয়, সিঙ্গুরের ওই আপিল-মামলার শুনানি কোন ডিভিশন বেঞ্চে হবে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। দ্বিমত দেখা দিয়েছে এক্তিয়ারের প্রসঙ্গে। অতএব, প্রধান বিচারপতির ব্যাখ্যা ও চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের প্রয়োজন। সন্ধ্যায় প্রধান বিচারপতি জানিয়ে দেন, সিঙ্গুর-মামলার শুনানি হবে বিচারপতি পিনাকীচন্দ্র ঘোষের ডিভিশন বেঞ্চে।
গত ২৮ সেপ্টেম্বর রাজ্যের সিঙ্গুর-আইনকে বৈধ ও সাংবিধানিক বলে রায় দিয়েছিল কলকাতা হাইকোর্ট। সংশ্লিষ্ট বিচারপতি ইন্দ্রপ্রসন্ন মুখোপাধ্যায় জানিয়েছিলেন, ২ নভেম্বরের মধ্যে রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা যাবে। যার সময়সীমা শেষ হচ্ছে আজ, বুধবার। |