এক শিবকেই পুজো দুই ভিন্ন সম্প্রদায়ের
ক মন্দির, এক দেবতা। দুই সম্প্রদায়ের মানুষ পুজো করেন দুই তিথিতে।
কাছাড় জেলার সোনাইবাজার থেকে আড়াই কিলোমিটার দূরে চন্দ্রগিরির শিবটিলার শিবমন্দিরে রবিবার ছিল মণিপুরিদের পুজো। শুক্রবার পুজো করেছেন ডিমাসারা। বাঙালি-সহ অন্যান্য জনগোষ্ঠীর মানুষও ভিড় জমান দু’দিনেই। বিশেষ করে মহিলারা।এই পুজো নিয়ে দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে আদৌ কোনও রেষারেষি নেই। থাকার কথাও নয়। কারণ, রাজ আমলেই দুই জনগোষ্ঠীর মধ্যে বৈবাহিক সম্পর্ক স্থাপিত হয়। প্রায় আড়াইশো বছর আগে ডিমাসা রাজা কৃষ্ণচন্দ্র মণিপুরি রাজকন্যা ইন্দুপ্রভাকে বিয়ে করেছিলেন। শিবটিলার মন্দিরটিও কৃষ্ণচন্দ্রের আমলেই নির্মিত।
এই মন্দির ঘিরে নানা জনশ্রুতি। কেউ বলেন, রাজা কৃষ্ণচন্দ্র একবার রাজধানী খাসপুর থেকে ভুবনমন্দিরে যাওয়ার পথে শিবটিলায় রাত কাটান। সঙ্গে ছিলেন মন্ত্রী জয়সিংহ। শিব ওই রাতে জয়সিংহকে ওই জায়গাতেই মন্দির নির্মাণের স্বপ্নাদেশ দেন। সকালে জয়সিংহ রাজাকে এ কথা জানালে রাজাই তাঁকে মন্দির স্থাপনের নির্দেশ দেন। পরে কার্তিক মাসে ভ্রাতৃদ্বিতীয়া তিথিতে এখানে পূজার্চনা শুরু হয়। ওই তিথিটি এখনও ডিমাসারা ভক্তিভরে পালন করেন। নতুন মন্দিরে রানি যান পরবর্তী রবিবারে। তিনি সেখানে মণিপুরি রীতি অনুসারে শির্বাচনা করেন। সেই থেকে ডিমাসাদের উৎসবের পরবর্তী রবিবারে শিবের পুজো করে আসছেন মণিপুরিরা।
ছবি: তাহের আহমেদ মজুমদার
স্বপ্নাদেশ নিয়ে নানা জনশ্রুতি থাকেলও এই অঞ্চলের লোকগবেষক অমলেন্দু ভট্টাচার্য জানান, মন্দিরের গায়ে দু’টি শিলালিপি রয়েছে। তাতে লেখা, স্বর্ণাক্ষরপুর নগরে জয়সিংহ এই মন্দির নির্মাণ করেছেন। চৈত্র মাস, ১৭০৯ শকাব্দ। এ থেকেই স্পষ্ট যে, তখন এই অঞ্চলের নাম ছিল স্বর্ণাক্ষরপুর। ১৭০৯ শকাব্দের চৈত্র মাস, মানে হিসেব কষে দেখা যায়, ১৭৮৭ সালের মার্চে ১২ ফুট দৈর্ঘ ১০ ফুট প্রস্থ এবং ১২ ফুট উচ্চতার এই মন্দির নির্মিত হয়।
অন্য জনশ্রুতিটি এ রকম--ইন্দুপ্রভার বিয়ের পর তিনি কৃষ্ণচন্দ্রকে একটি শিবমন্দির গড়ে দিতে বলেন। মহারাজা তখনই মন্ত্রী জয়সিংহকে ওই মন্দির তৈরির নির্দেশ দেন। ডিমাসা সাহিত্যিক উত্তমচাঁদ বর্মন অবশ্য এই অভিমত মানতে নারাজ। তাঁর যুক্তি, ১৭৮৭ সালে মন্দিরের প্রতিষ্ঠা এবং কৃষ্ণচন্দ্র-ইন্দুপ্রভার বিয়ে হয় ১৮০৯ সালে। ফলে, রানির ইচ্ছেতে এ মন্দির হতে পারে না।
মণিপুরি পণ্ডিত কাছাড় কলেজের অবসরপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষ চূড়ামণি সিংহ এই বিতর্কে না-জড়িয়ে বলেন, “রানি ইন্দুপ্রভা যে এই মন্দিরে পুজো দিয়েছেন তা ইতিহাস স্বীকৃত। আমরাও পরম্পরাগত ভাবে এই পূজার্চনা করে চলেছি।”
এই মন্দিরে শুধু বরাক উপত্যকার মানুষই পুজো দেন না, দু’টি তিথিতেই বাইরে থেকে বহু লোক আসেন। দু’দিনেই মেলা বসে, হয় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও প্রদর্শনীও।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.