জনসাধারণের ব্যবহার্য পুকুর ‘ভরাট’ করে ‘অবৈধ নির্মাণ’-এর প্রতিবাদ করায় এক যুবককে মারধরের অভিযোগ উঠল। মঙ্গলবার সকালে ঘটনাটি ঘটে মাড়গ্রাম থানার চাঁদপাড়া গ্রামে। মারধরে আহত সুশান্ত মার্জিত নামে ওই স্থানীয় যুবক রামপুরহাট মহকুমা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
হাসপাতালের শয্যায় শুয়ে সুশান্তর অভিযোগ, চাঁদপাড়া গ্রামের পশ্চিমপাড়ার ১৫৫৬ দাগের ওই পুকুরটি এলাকার বাসিন্দারা দীর্ঘদিন ধরে ব্যবহার করে আসছেন। কিন্তু ওই গ্রামের দুই বাসিন্দা এবং পাশের গ্রামের দুই ব্যক্তি মিলে সম্প্রতি পুকুরটির পাড় বাঁধানোর নাম করে পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরি করছেন। সুশান্ত বলেন, “সরকারি আইন অনুযায়ী পুকুর বুজিয়ে নির্মাণকাজ করা যায় না। এটা জানি বলেই আমি আর এলাকার কিছু বাসিন্দা প্রথমে গ্রাম পঞ্চায়েতকে সব জানাই। পরে বাড়ি তৈরি বন্ধ করতে আদালতের দ্বারস্থ হই। আদালত নির্মাণকাজের ব্যাপারে স্থগিতাদেশ দেয়। রামপুরহাট ২ ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরেও লিখিত অভিযোগ করেছি। জানিয়েছি মাড়গ্রাম থানায়।”
স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশও পুকুর বোজানোর অভিযোগ তুলেছেন। যদিও তাঁরা প্রশাসনকে লিখিত ভাবে কিছু জানাননি।
ওই যুবকের দাবি, এ বার তিনি রামপুরহাটের মহকুমাশাসক এবং মহকুমা ভূমি ও ভূমি সংস্কার দফতরে অভিযোগ জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন। পুকুর বুজিয়ে বাড়ি তৈরির ব্যাপারে উপযুক্ত প্রমাণ সংগ্রহ করতে তিনি এ দিন সকালে নির্মাণস্থলের ছবি তুলতে গেলে ওই চার ব্যক্তির দলবল তাঁকে তাড়া করে মারধর করে। সোমবার রাতেও তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয় বলেও সুশান্তর অভিযোগ। পুলিশকে তিনি মৌখিক ভাবে সমস্ত ঘটনা জানিয়েছেন। সুশান্তর দাদা সন্তোষ মার্জিত বলেন, “আমার ভাই বরাবরই প্রতিবাদী চরিত্রের। পুকুর বোজানোর বিরুদ্ধেও ও সরব হয়েছিল। আমাদের মতো পাড়ার অনেকেই এই পুকুরের উপরে নির্ভরশীল। পুকুর ভরাটের প্রতিবাদ করে ভাইকে আক্রান্ত হতে হল।”
পুলিশ এ দিন সকালেই ঘটনাস্থলে তদন্তে যায়। ব্লক ভূমি ও ভূমি সংস্কার আধিকারিক আব্দুল রাজ্জাক বলেন, “পুকুর বোজানোর অভিযোগ পেয়েছি। তদন্ত করে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।” বিডিও সোমা সাউ জানান, তিনি এখনও কোনও অভিযোগ পাননি। তবে ঠিক কী হয়েছে, তা খোঁজ নিয়ে দেখবেন।
অন্য দিকে, যে চারটি পরিবারের বিরুদ্ধে পুকুর বোজানোর লিখিত অভিযোগ হয়েছে, তাদের তরফে কাজল মার্জিত দাবি করেন, “অভিযোগ পুরোপুরি ভিত্তিহীন। ওই পুকুরের পাড়ের কিছুটা অংশ অনেক আগে পুকুরের শরিকদের একাংশ আগেই দখল করেছেন। আমরা আমাদের ভাগের পুকুর পাড়ের অংশে বাড়ি তৈরি করছি। তবে সেটা কোনও ভাবেই পুকুর বুজিয়ে করা হচ্ছে না।” কাজলবাবুর আরও দাবি, আদালতের নির্দেশ পেয়েই সোমবার রাত থেকে বাড়ি নির্মাণের কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়। এ দিন সকালে সুশান্ত ছবি তুলছিলেন। তবে ছবি তোলার প্রতিবাদে কে বা কারা ওঁকে মারধর করেছে, তা তাঁর জানা নেই। |