শিশুমৃত্যুর ধাক্কায় ভোলবদল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজে
২টি শিশুর প্রাণের বিনিময়ে আপাতত ‘শৃঙ্খলা’ ফিরল বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগে।
শুক্রবার সন্ধ্যায় স্বাস্থ্যকর্তারা কলকাতায় ফিরে যাওয়ার পরেও যেখানে চিকিৎসকদের দেখা মেলেনি, ‘বডি ওয়ার্মার’ যন্ত্রের পাশে খুঁজে পাওয়া যায়নি নার্সদের, শনিবার দুপুরে সেই ওয়ার্ডেই দেখা মিলল তিন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ও চার নার্সের। বিভাগীয় প্রধান বাদলচন্দ্র মণ্ডল বারবার ‘রাউন্ডে’ আসছেন। রোগীর আত্মীয়দের ডেকে জিজ্ঞাসা করছেন, কোনও সমস্যা আছে কি না। আগের রাতে মেঝেয় শুইয়ে রাখা ৫০টি শিশুর অনেকেরই বিছানা জুটেছে।
বুধবার, কালীপুজোর রাত থেকে পরের রাত পর্যন্ত মোটে ২৪ ঘণ্টায় এই ওয়ার্ডেই ১২টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে। শুরু হয়েছে তদন্ত। যদিও মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে কলকাতা থেকে ছুটে গিয়েও দুই স্বাস্থ্যকর্তা কোনও ‘অস্বাভাবিকত্ব’ খুঁজে পাননি। শিশুদের পরিজনেরা সকলেই প্রায় এক বাক্যে অনুযোগ করেছেন, বুধবার থেকেই ওই বিভাগে কোনও বড় চিকিৎসকের দেখা মেলেনি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তা মানতে চাননি। আবার চিকিৎসক ও কর্মীদের হাজিরা খাতা দেখাতেও রাজি হননি।
বর্ধমান মেডিক্যালের সুপার গদাধর মিত্রের দাবি, “পুজো বা কালীপুজোর সময়ে ডাক্তার বা নার্সের যাতে অভাব না থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমি নিজে নির্দেশ দিয়েছিলাম। বিভাগীয় প্রধান আজ রিপোর্ট দিয়েছেন, পুজোর চার দিনে এবং কালীপুজোতেও চার জন করে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ছিলেন। চিকিৎসকদের গাফিলতি নেই। দায়ী পরিকাঠামোর সমস্যা।” আগের দিনই কিন্তু স্বাস্থ্যকর্তাদের সামনে চিকিৎসক ও নার্সদের গরহাজিরা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন বর্ধমানের জেলাশাসক ওঙ্কার সিংহ মিনা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, চিকিৎসক ও নার্সেরা হাজির থাকলেও কালীপুজোর রাতে অন্তত ৩০ জন চতুর্থ শ্রেণির কর্মী অনুপস্থিত ছিলেন। তখনই বিস্মিত জেলাশাসক সুপারকে জিজ্ঞাসা করেন, “কী করে এত জন অনুপস্থিত থাকে? আপনারা এ ব্যাপারে কড়া হচ্ছেন না কেন?”
এ দিন নিজের ঘরে অধ্যক্ষ ও ডেপুটি সুপারের সঙ্গে বৈঠকের ঠিক আগেই সুপারকে চড়া গলায় বলতে শোনা যায়, “সব কিছু ঠিক মতো চালানোর জন্য আমরা প্রাণপাত করছি। আর, এক শ্রেণির লোকের গাফিলতিতে সব নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।” প্রতিবেদককে ঘরে ঢুকতে দেখেই তিনি চুপ করে যান। ওই ঘরেই এক জায়গায় বড় করে লেখা, ‘এম ও’স অ্যাটেন্ড্যান্স রেজিস্টার’ অর্থাৎ সেটি চিকিৎসকদের হাজিরা খাতা রাখার জায়গা। কিন্তু খাতাপত্রের বদলে সেখানে রয়েছে একটি বিকল কম্পিউটার। সুপারের বক্তব্য, প্রতি দিনই সকালে খাতাগুলি সংশ্লিষ্ট ওয়ার্ডে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। সই হওয়ার পরে সেগুলি আবার তাঁর কাছে ফিরে আসে। সে ক্ষেত্রে, এ দিন কেন সময় মতো খাতা ফেরেনি, তার সদুত্তর অবশ্য তিনি দিতে পারেননি।
তবে রাতারাতি পরিস্থিতি যে পাল্টেছে, তা জানান শিশুদের পরিজনেরাই। বর্ধমানের খালের পুলের বাসিন্দা হাফিজা খাতুনের কথায়, “এক বছরের বিকলাঙ্গ মেয়েকে নিয়ে দিন সাতেক হল শিশু ওয়ার্ডে আছি। আজই প্রথম ডাক্তারবাবুরা খোঁজ নিলেন।” দু’দিন পড়ে থাকার পরে দুর্গাপুর থেকে আসা চার বছরের সাথী প্রামাণিকের চিকিৎসা শুরু হয় শুক্রবার রাতে। পেটে যন্ত্রণা নিয়ে ভর্তি মাধবডিহির বুলচন্দ্রপুরের দু’বছরের আকাশ। তার বাবা সমীর রায়ও জানান, ক’দিন টানা অবহেলার পরে এ দিনই ঠিকঠাক চিকিৎসা শুরু হয়েছে।
শিশুমৃত্যুর সংখ্যাও রাতারাতি ঝপ করে নেমে গিয়েছে। মেডিক্যাল কলেজের অধ্যক্ষ সরিৎকুমার চৌধুরী বলেন, “বৃহস্পতিবার রাত ১২টা থেকে শুক্রবার রাত ১২টা পর্যন্ত মাত্র ১টি শিশুর মৃত্যু হয়েছে।” যে কারণে ওয়ার্ডে পা রাখা মাত্র বিভাগীয় প্রধান হাসতে হাসতে বলেন, “আজ সমস্ত ঠিক আছে। নতুন কোনও বিপর্যয়ের খবর নেই।”
উন্নতি তো বটেই। কিন্তু ক’দিনের? সন্দেহ যাচ্ছে না ভুক্তভোগীদের।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.