চিত্তরঞ্জন শিশুসদন হাসপাতাল
বিতর্কিত সেই কোয়ার্টারে হচ্ছে নতুন ৩টি ইউনিট
ক্ষমতায় আসার পরে মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে চিত্তরঞ্জন শিশুসদন হাসপাতালের তিন তলার বিতর্কিত কোয়ার্টার ছাড়তে হয়েছিল প্রাক্তন সিপিএম সাংসদ মহম্মদ সেলিমের স্ত্রী চিকিৎসক রোজিনা খাতুনকে। এ বার সেই কোয়ার্টার ভেঙে মোট ৩২ শয্যার তিনটি নতুন ইউনিট গড়ছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার। এর মধ্যে সদ্যোজাতদের চিকিৎসার জন্য ১৬ শয্যার ‘সিক নিউবর্ন কেয়ার ইউনিট’ (এসএনসিইউ) থাকবে। তৈরি হবে থ্যালাসেমিয়ায় আক্রান্ত শিশুদের জন্য ৮ শয্যার ‘ডে-কেয়ার সেন্টার’ এবং ৮ শয্যার ডায়েরিয়া ওয়ার্ড। থাকছে শিশুর আত্মীয়ের থাকার জায়গাও।
প্রশাসনিক ছাড়পত্র পাওয়ার পর দুর্গাপুজোর পর থেকে জোর কদমে কাজ শুরু হয়ে গিয়েছে। স্বাস্থ্য দফতর সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী তথা স্বাস্থ্যমন্ত্রী এই কাজ দ্রুত শেষ করতে বিশেষ আগ্রহী। তাই কাজ চলছে ঝড়ের গতিতে।
যদিও সরকারের এই উদ্যোগকে ‘রাজনৈতিক প্রতিহিংসা’ চরিতার্থ করা ছাড়া অন্য কিছু ভাবতে নারাজ মহম্মদ সেলিম। ওই হাসপাতালে স্ত্রীর কোয়ার্টারেই থাকতেন তিনি। আপাতত তাঁদের ঠিকানা একবালপুরে রোজিনাদেবীর পৈত্রিক বাড়ি। রোজিনাদেবী এখনও ওই হাসপাতালের অ্যানাসথেটিস্ট হিসেবে কাজ করছেন। সেলিমের বক্তব্য, “রাজ্যের প্রায় সব সরকারি হাসপাতালেই তো শয্যা সঙ্কট। আর কোথাও তো মুখ্যমন্ত্রীকে শয্যা বাড়াতে এত আগ্রহী হতে দেখা যাচ্ছে না। কলকাতারই বিসি রায় শিশু হাসপাতালে শয্যার অভাবে শিশুরা ভর্তি হতে না পেরে মারা যাচ্ছে। তা নিয়ে উনি একটি শব্দও উচ্চারণ করছেন না। সেখানকার কোনও কোয়ার্টারে কেন শয্যা পাতা হচ্ছে না? এর থেকেই তো ওঁর উদ্দেশ্য স্পষ্ট।”
এখানেই থাকতেন মহম্মদ সেলিমের স্ত্রী রোজিনা খাতুন। এখন গড়া হচ্ছে নয়া ইউনিট। ছবি: সুদীপ আচার্য।
যে হাসপাতালে শয্যার অভাবে ভর্তি হতে না-পেরে অসুস্থ শিশু ফিরে যাচ্ছে, সেই হাসপাতালের তিন তলায় বিশাল জায়গা দখল করে রোজিনাদেবী ও মহম্মদ সেলিম থাকছেন বলে অভিযোগ উঠেছিল মাস তিনেক আগে। মুখ্যমন্ত্রী হয়ে ওই হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে মমতা গিয়েছিলেন রোজিনাদেবীর কোয়ার্টারে। সেখানে গিয়ে তিনি দেখেন, দরজার বাইরে রোজিনাদেবী ও তাঁর স্বামী মহম্মদ সেলিমের নেমপ্লেট। সেলিম সেখানে থাকেন কি না, মুখ্যমন্ত্রী তা জানতে চান এবং তৎক্ষণাৎ নির্দেশ দেন, অবিলম্বে কোয়ার্টার তুলে দিয়ে ওই জায়গায় শিশুদের জন্য শয্যা পাততে হবে।
শনিবার এ প্রসঙ্গে সেলিম বলেন, “নতুন শয্যা পাতা তো ভাল। কিন্তু এক জন মুখ্যমন্ত্রী বা স্বাস্থ্যমন্ত্রী স্তরের মানুষ কী করে কোনও হাসপাতালে কারও কোয়ার্টারে চলে আসতে পারেন? আমরা তো ওই কোয়ার্টার বেআইনি ভাবে দখল করে ছিলাম না। কাগজপত্র আছে। উনি তো আরও অনেক হাসপাতালে গিয়েছেন। কোথাও তো আর কোনও কোয়ার্টার পরিদর্শনে যাননি। একে প্রতিহিংসা ছাড়া আর কী বলা যায়?”
সেলিমের অভিযোগ শোনার পর স্বাস্থ্যকর্তারাও স্বীকার করেছেন, ১৯৮৯ সালে ওই কোয়ার্টারে থাকার জন্য স্বাস্থ্য দফতর অনুমতি দেয় রোজিনাদেবীকে। তাই হাসপাতালে জায়গার অভাব সত্ত্বেও রোজিনাদেবীকে চলে যেতে বলা হয়নি। যদিও মমতার সরকারের মূল অভিযোগ ছিল, যতটা জায়গা রোজিনাদেবীকে থাকার জন্য দেওয়া হয়েছিল তার থেকে বেশি জায়গা দখল করে থাকতেন তিনি। রোজিনাদেবীকে অবশ্য এ বারেও সরকারি ভাবে কোয়ার্টার ছাড়ার কথা বলেনি স্বাস্থ্য দফতর। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রীর ওই নির্দেশের পর আর কোয়ার্টার আগলে থাকতে চাননি সেলিম দম্পতি।
গত ১৩ জুন টাউন হলে চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্তাদের সঙ্গে মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠকে এই শিশু হাসপাতালের অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্য জায়গার অভাবের কথা তোলেন। তখনই মহম্মদ সেলিমের স্ত্রীর প্রতি ইঙ্গিত করে মমতা বলেছিলেন, “সেই চিকিৎসক যত বড় রাজনৈতিক দলেরই হোন না কেন, শিশুদের জায়গা দখল করে থাকার জন্য মানুষ তাঁকে ক্ষমা করবে না।”
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং স্বাস্থ্য দফতর অবশ্য এখন আর এ নিয়ে কোনও বিতর্ক চাইছেন না। সুপার আশিস মুখোপাধ্যায় যেমন বলেন, “রোজিনাদেবী ও সেলিম কোয়ার্টারের একাংশে থেকেই যেতে পারতেন। কিন্তু ওঁরা সেটা করেননি। এতে শয্যা বাড়াতে আমাদের সুবিধাই হয়েছে। এর জন্য ওঁদের ধন্যবাদ প্রাপ্য।” অধ্যক্ষা মালা ভট্টাচার্যও জানান, হাসপাতালে মাত্র ৬০টি শয্যা। প্রচুর সদ্যোজাত শিশু চিকিৎসার জন্য আসে। সে দিক থেকে এসএনসিইউ ইউনিট দরকার ছিল। পাশাপাশি, থ্যালাসেমিয়ার ডে কেয়ার হলে রক্ত দেওয়া পর শিশুদের পর্যবেক্ষণে রাখা যাবে। এখন ডায়েরিয়া আক্রান্ত শিশুদের বারান্দায় রাখা হয়। ডায়েরিয়া ওয়ার্ড হলে তাদের থাকার জায়গা হবে।
শনিবার শিশুসদনের তিন তলায় রোজিনাদেবীর পুরনো কোয়ার্টারে গিয়ে দেখা গেল, মিস্ত্রিরা জোর কদমে কাজ করছেন। দরজার বাইরে সেলিম ও রোজিনাদেবীর নেমপ্লেট খোলা। তাঁদের সাধের বাগানের সব গাছই শুকিয়ে গিয়েছে। স্মৃতি হিসেবে প্রায় কিছুরই অস্তিত্ব নেই।



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.